সিনেমায় কপিল দেব
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০বলিউডের ডিরেক্টর, মেকআপম্যান ও কাস্টিং ডিরেক্টরের কামাল৷ দীপিকা পাড়ুকোনকে দেখে চেনার উপায় নেই৷ দেখে মনে হচ্ছে, তিন দশক আগের সেই কপিল দেবের স্ত্রী রোমি দেব এসে দাড়িয়েছেন সামনে৷ রণবীর সিং-ও কম যান না৷ সেই কোঁকড়া চুল, মোটা গোঁফ, গায়ে ইন্ডিয়া টিমের ব্লেজার৷ দেখলেই স্মৃতি উসকে যায়৷ মনে পড়ে যায়, বল করার আগে কপিলের সেই লম্বা দৌড়৷ পা ভাঁজ করে ডেলিভারি। এক একটা বিষাক্ত আউট সুইং৷ বা চকিতে ভিতরে ঢুকে আসা ইন সুইং এর ছোবল৷ হরিয়ানা হ্যারিকেনের সেই সব বল সামাল দিতে হিমশিম খেতেন বিশ্বের তাবড় ব্যাটসম্যান৷
দীপিকা বলেছেন, ''আমি এই সিনেমায় একটা ছোট ভূমিকায় আছি৷ কিন্তু ক্রিকেটে ওই বিশ্বজয় ক্রীড়া ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত, যা এই সিনেমায় ধরা হচ্ছে। আর আমি এই চরিত্র সেই সব নারীকে উৎসর্গ করলাম, যাঁরা নিজের আগে স্বামীর স্বপ্নপূরণ করতে চান৷''
'৮৩-র শুটিং চলছে। পরিচালক ও প্রযোজক জানিয়েছেন, আগামী এপ্রিলে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। সেই সময়ের রথী-মহারথীরা সকলেই থাকবেন ছবিটিতে। সুনীল গাভাসকার, মহিন্দর অমরনাথ, কীর্তি আজাদ, রবি শাস্ত্রী, রজার বিনি, ফারুখ ইঞ্জিনিয়াররা৷ তবে তাঁরা কেউ নিজেরা অভিনয় করেননি৷ করা সম্ভবও নয়৷ ৩৭ বছর আগের চেহারা এবং এখনকার চেহারায় তো আকাশপাতাল ফারাক৷ বোমান ইরানি যেমন ইঞ্জিনিয়রের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন৷ তাহির রাজ ভাসিন হয়েছেন সুনীল গাভাসকার। সাকিব সালিম অভিনয় করছেন মহিন্দর অমরনাথের ভূমিকায়। নীনা গুপ্তা হয়েছেন কপিলের মা৷ জিভা অভিনয় করবেন শ্রীকান্তের৷ ছবির পরিচালক কবির খান৷
বলিউডে এখন ক্রীড়াবিদদের নিয়ে বায়োপিকের হিড়িক। শচিন তেন্ডুলকর, মিলখা সিং, মেরি কম, এমএস ধোনি, আজহারউদ্দিন থেকে শুরু করে একাধিক ক্রীড়াবিদকে নিয়ে বায়োপিকহয়েছে৷ কুস্তিগির মহাবীর ও তার দুই মেয়ে গীতা ও ববিতা ফোগতকে নিয়ে বানানো বায়োপিক দঙ্গল বিশাল হিট করেছিল৷ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়েরও বায়োপিক হওয়ার কথা৷
হঠাৎ এত বায়োপিকের হিড়িক কেন? আর বায়োপিকে অভিনয় করাটাই বা কতটা কঠিন? জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা ঋদ্ধি সেন ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''বায়োপিক মানে একটা তৈরি গল্প থাকে, তাই অনেক কম সময়ে সিনেমাটা শেষ করে ফেলা যায়৷ ভালো বায়োপিকে যাঁকে নিয়ে গল্প তৈরি হয়, তাঁর বাস্তব ঘটনা ও ফিল্মে কীভাবে তা ব্যবহার করা হবে, তার মধ্যে একটা ভারসাম্য থাকা দরকার। যাঁরা এই ভারসাম্য রাখতে পারেন, তাঁরা খুবই ভালো বায়োপিক বানাতে পারেন৷ এই কাজটা খুবই কঠিন। কারণ, বায়োপিক বাস্তবের মানুষকে নিয়ে তৈরি হয়। তাই এটা পুরো ফিকশন নয়৷ আবার ফিকশনের উত্তেজনাটাও জরুরি, যা অনেকের জীবনে কিছুটা কম থাকতে পারে।'' ঋদ্ধির মতে, বায়োপিকে অভিনয় করাটা সবচেয়ে কঠিন৷
পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় একের পর এক হিট বাংলা ছবি দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন৷ তাঁর সিনেমায় একটা জমজমাট গল্প থাকে, আবেগ থাকে, একটু আলাদা চিন্তাভাবনার প্রতিফলন থাকে৷ ডয়চে ভেলেকে শিবপ্রসাদ বলেছেন, ''একজন পরিচালক হিসাবে বলতে পারি, বায়োপিক তৈরি করাটা খুবই কঠিন কাজ৷ যাকে কেন্দ্র করে ছবি তৈরি হচ্ছে, তাঁদের জীবনের অনেক কথাই জানা। তাই যাঁরা এই বায়োপিক দেখতে আসেন, তাঁরা কোনও না কোনও খুঁত বের করেন৷ সে জন্যই পরিচালকের কাছে এটা খুব বড় চ্যালেঞ্জ৷'' তা সত্ত্বেও শিবপ্রসাদ ভবিষ্যতে বায়োপিক করতে চান৷ তাঁর কথায়, ''বায়োপিক ইতিহাসের এক টুকরো সময়কে সামনে নিয়ে আসে৷ যেমন আমি কপিল দেবের জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ১৭৫ রানের ইনিংস দেখিনি৷ এই বায়োপিকে সেই ইনিংস কীভাবে নির্মাণ করা হয়েছে সেটা দেখার জন্যই ৮৩ দেখতে যাব৷''
প্রবীণ সাংবাদিক অশোক বসুও ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''বায়োপিক করাটা কঠিন কাজ। নিখুঁত গবেষণা দরকার হয়৷ সেই সঙ্গে টানটান একটা কাহিনি খুবই কৌতূহলকর ও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে ধরতে হয়৷ এক-দুটো হিট করে যাওয়ায়, এখন বায়োপিক তৈরির হিড়িক পড়েছে৷ তাতে ভালো কিছু ছবিও সামনে আসছে৷''
এখন শুধু কপিল ও রোমির ভূমিকায় রণবীর ও দীপিকাকে কেমন লাগছে সেই ছবি সামনে এল৷ এরপর পুরো সিনেমা যখন তৈরি হয়ে সামনে আসবে, তখন বোঝা যাবে, '৮৩ প্রত্যাশাপূরণ করতে পারছে কি না৷