সিগমার গাব্রিয়েলের রাজনৈতিক জীবন
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের নতুন জোট সরকারে নেই সিগমার গাব্রিয়েল৷ সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডি-র এই রাজনীতিবিদের প্রায় ২০ বছরের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে ছবিঘর৷
১৯৯০-২০০৩: লোয়ার সাক্সেনির রাজ্য সংসদে ১৩ বছর
জার্মানির সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডিতে ১৯৭৭ সালে যোগ দেয়ার এক দশক পরেই ভোটে জিতে নিজের রাজ্য লোয়ার সাক্সেনির সংসদে জায়গা করে নেন সিগমার গাব্রিয়েল৷ ১৯৯৯ সালে রাজ্য প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি এবং ২০০৩ সাল অবধি সেই পদে অসীন ছিলেন৷ গার্বিয়েলের এই সাফল্য এসপিডি-র শীর্ষস্থানীয় নেতারা আমলে নিয়েছিলেন৷ সেবছরই দলের ‘পপ কালচার অ্যান্ড পপ ডিসকোর্স’-এর প্রতিনিধি নির্বাচিত হন তিনি৷
২০০০-এর শুরু: চ্যান্সেলর শ্র্যোডারের ছত্রছায়ায় গাব্রিয়েল
গাব্রিয়েলের মতো জার্মানির তৎকালীন চ্যান্সেলর গেয়ারহার্ড শ্র্যোডারের রাজনৈতিক জীবনও শুরু হয়েছিল রাজ্য সংসদ থেকে৷ রাজনীতিতে দু’জনের অভিজ্ঞতাও একইরকম৷ সবমিলিয়ে দু’জনের মধ্যে সখ্যতা তৈরি হয় এবং এক পর্যায়ে শ্র্যোডারের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে গাব্রিয়েলের নাম নানা মহল থেকে উচ্চারিত হতে থাকে৷
২০০৫: ম্যার্কেলের প্রথম মন্ত্রিসভা
২০০৫ সালে গঠিত জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের প্রথম মন্ত্রিসভায় জায়গা পান গাব্রিয়েল৷ সিডিইউ-র জুনিয়র পার্টনার এসপিডি-র সদস্য হিসেবে পরিবেশমন্ত্রীর পদ পান তিনি৷ এই পদে গিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন তিনি এবং ১৯৯০ সালের তুলনায় গ্রিনহাউস নির্গমনের মাত্রা বিশ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আলোচনায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন৷
২০০৯: এসপিডি-র চেয়ারম্যান
সেবছর নির্বাচনে এসপিডি-র পরাজয়ের পর দলটির তখনকার প্রধান ফ্রান্স ম্যুনটেফেরিং পদত্যাগ করলে গার্বিয়েলের কপাল খুলে যায়৷ তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচিত হন তিনি৷ দলের দায়িত্ব নেয়ার পর ‘সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল’ থেকে এসপিডি-কে সরিয়ে আনেন তিনি এবং ‘প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স’ তৈরি করেন, যার সদস্যদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এবং ইউকে-র লেবার পার্টির অনেক প্রতিনিধি রয়েছেন৷
২০১৩: সরকারে ফিরলেন তিনি, ভাইস চ্যান্সেলর হয়ে
২০১৩ সালে জাতীয় নির্বাচনের পর গাব্রিয়েলের নেতৃত্বে আবারো সিডিইউ-র সঙ্গে জোট সরকারে ফেরেন ম্যার্কেল৷ দলের প্রধান হওয়ায় তখন ভাইস চ্যান্সেলর পদটি পান তিনি, সঙ্গে নেন অর্থনীতি মন্ত্রীর দায়িত্ব৷
২০১৭: জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গতবছরের জানুয়ারিতে প্রসিডেন্ট পদে ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার অসীন হওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান গাব্রিয়েল৷ তিনি দ্রুতই সেই পদে নিজেকে গুছিয়ে নেন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের একজন প্রকাশ্য সমালোচক হিসেবে পরিচিতি পান৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি কর্মসূচিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলা রাশিয়ার উপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপানো নিষেধাজ্ঞারও সমালোচনা করেন তিনি৷
২০১৭: মার্টিন শুলৎসের কাছে দায়িত্ব অর্পন
২০১৫ সালে মাত্র ৭৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আবারো দলীয় প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে গাব্রিয়েলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে৷ এর আগের ২০ বছরে এসপিডি-র কোনো নেতা এত কম ভোট পেয়ে শীর্ষ পদে যাননি৷ আর তখন ম্যার্কেলকে টপকে চ্যান্সেলর পদ নেয়া ভবিষ্যতে সম্ভব, এমন আশাও তেমন একটা করেননি গাব্রিয়েল৷ ফলে পদ ছেড়ে দেন তিনি৷ সেখানে আসেন ইইউ পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করা এসপিডি নেতা মার্টিন শুলৎস৷
২০১৮: নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ
২০১৭ সালের নির্বাচনে ঐতিহাসিক পরাজয়ের পর শুরুতে না করে দিলেও শেষমেষ সিডিইউ-র সঙ্গে আবার জোট গড়েছে এসপিডি৷ তবে দু’দলের মধ্যকার সমঝোতার সময়েই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পাবেন না গাব্রিয়েল৷ তবে নিজের নির্বাচনি এলাকা সালৎসগিটার-ভোল্ফেনব্যুটেলের জনপ্রতিনিধি হিসেবে জার্মান সংসদে জায়গা থাকবে তাঁর৷ সেই ২০০৫ সাল থেকেই এই পদটি ধরে রেখেছেন গাব্রিয়েল৷