সাহারা মরুভূমির রহস্যের সন্ধানে
৩০ অক্টোবর ২০১৭সাহারা মরুভূমির মাঝে এই এলাকা আয়তন প্রায় সুইজারল্যান্ডের মতো বড়৷ বাতাসের ধাক্কায় স্যান্ডস্টোন বা বেলেপাথরে ক্ষয়ের ফলে সেখানে অপূর্ব এক নিসর্গ সৃষ্টি হয়েছে৷ সরু খাদ, ছোট নদী ও অসংখ্য জলাধারে ভরা আশ্চর্য প্রকৃতি৷
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মরুভূমির মাঝে এমন এক জায়গায় হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ ও প্রাণী আশ্রয় নিয়েছে৷ এই এলাকাকে ঘিরে ভূ-বিজ্ঞানী স্টেফান ক্র্যোপলিন-এর উৎসাহ-ঊদ্দীপনার শেষ নেই৷ ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি এই অঞ্চল ও সেখানকার জলবায়ুর ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছেন৷ কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ে বসেই এই বিজ্ঞানী অভিযানগুলির প্রস্তুতি নেন৷ অভিযানে যেসব নমুনা সংগ্রহ করেন, সেগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে বিশ্লেষণ করেন৷ আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে আদি মানুষ কীভাবে সাহারা অঞ্চল হয়ে ইউরোপে এসেছিল, তা জানার চেষ্টা করছেন তিনি৷
এ ক্ষেত্রে জলবায়ুর এক বিশেষ ভূমিকা রয়েছে৷ স্টেফান ক্র্যোপলিন গবেষণার কাজে ৬০টিরও বেশি অভিযান পরিচালনা করেছেন৷ এর মধ্যে ঔনিয়াগা এলাকার হ্রদগুলি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য৷ ৪ থেকে ১২ হাজার বছর আগে সাহারা অঞ্চল ছিল সবুজ ও উর্বর৷ সেখানে আরও বড় একটি হ্রদ ছিল৷ বর্তমানে তারই কিছু অংশ বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে রয়েছে৷
হ্রদের তলদেশে মাটির মধ্যে সেই যুগের জলবায়ুর খতিয়ান লুকিয়ে রয়েছে৷ তাই গবেষকদের দল সেখান থেকে অসংখ্য নমুনা সংগ্রহ করেছে৷ ড্রিলিং কোরের মধ্যে ধাপে ধাপে অতীত যুগের চিত্র ধরা পড়ে৷ ভূ-বিজ্ঞানী স্টেফান ক্র্যোপলিন বলেন, ‘‘এই ড্রিলিং কোর নিঃসন্দেহে গোটা সাহারা অঞ্চলের জলবায়ুর ইতিহাসের সেরা সংগ্রহ৷ আমি বলবো, গত ১১,০০০ বছরে গোটা আফ্রিকার সেরা সংগ্রহ৷ এমনকি গোটা বিশ্বে এর তুলনা মেলা ভার৷’’
অতীত যুগের জলবায়ু সম্পর্কে আরও জ্ঞান অর্জন করতে স্টেফান ক্র্যোপলিন এনেডি মালভূমিতে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর চিহ্নের খোঁজ করছেন৷ হাজার হাজার বছর আগে পাথরের উপর আঁকা ছবি এই এলাকায় মানুষের বসতির সাক্ষ্য বহন করে৷ সাহারা অঞ্চল তখন আর্দ্র, সবুজ ও জৈব বৈচিত্র্যে ভরপুর ছিল৷
সাহারাসম্পর্কে স্টেফান ক্র্যোপলিনের উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই৷ নভেম্বর মাসে তিনি আবার সেখানে যাচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আবার স্থানীয় মানুষ ও উটের দলের সঙ্গে পাড়ি দেবার কথা ভাবলে রোমাঞ্চ হয়৷ পরিমিত জীবনযাপন সত্ত্বেও সেই নিসর্গে প্রতিটি প্রান্তের কোনো নতুনত্ব থাকতে পারে৷ সেটাই আমাকে টানে৷’’
স্টেফান ক্র্যোপলিন নিজের সম্পর্কে বলেন, ‘‘কোলন আমার প্রিয় শহর, কিন্তু আফ্রিকা আমার স্বভূমি৷’’
টোমাস হিলডেব্রান্ট/এসবি