সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায়
২০ এপ্রিল ২০১৭সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের বিষয়টি দিন দিন বাংলাদেশে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে৷ বিশেষ করে পরিবহণ খাত এবং চিকিৎসা খাতে এ ধরনের অবরোধ ও ধর্মঘটের কারণে সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত৷ সম্প্রতি সিটিং সার্ভিস ও লোকাল বাস নিয়ে কর্তৃপক্ষের অভিযানের পর বাস মালিকদের অঘোষিত ধর্মঘটে বিপাকে পড়েছিলেন সাধারণ মানুষ৷ অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে হঠাৎ করেই যেন উধাও হয়ে গিয়েছিল রাজধানীর সব বাসগুলো৷ ফলে অনেককেই ফিরতে হবে বিকল্প পরিবহণ বা পায়ে হেঁটে৷ এই যাত্রীদের মধ্যে যাঁরা অসুস্থ ও বৃদ্ধ ছিলেন, তাঁদের কতটা কষ্ট হয়েছে ভাবা যায়! আর পরিবহণ মালিকদের এই দৌরাত্ম্যের কারণে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয় ইউটার্ন নিতে৷ ফলে ঘোষণা দিল সিটিং সার্ভিস বহাল থাকবে এবং আগামী ১৫ দিন বাসগুলো ঠিকমত ভাড়া নিচ্ছে কিনা সেজন্য যে অভিযান চলছিল, তা স্থগিত থাকবে৷
অপরাধ নিজেদের কিন্তু শাস্তি দিলেও তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার আর একটা দৃষ্টান্ত মার্চে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের ধর্মঘট৷ একজন বাসচালককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সড়ক দুর্ঘটনা মামলায় অপর এক ট্রাকচালকের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের প্রতিবাদে হঠাৎ করে দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল না করায় সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল রাজধানী ঢাকা৷ দুর্ভোগে পড়েছিলেন হাজারো মানুষ৷ তখন চলছিলএসএসসি পরীক্ষা৷ কিন্তু ধর্মঘট যারা ডেকেছে তাদের কি কখনো এ সব চিন্তা করতে আছে? কার কতটা দুর্ভোগ সেটা বিবেচনার বিষয় নয়, মূল বিষয় দাবি আদায়, তা সে যেভাবেই হোক৷ এতে সাধারণ মানুষের মৃত্যু হলেও তাদের কিছু যায় আসে না৷
আর হাসপাতালগুলোয় ইন্টার্ন ডাক্তারদের ধর্মঘটের কারণে প্রায়ই দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ৷ কখনো কর্মচারীদের ধর্মঘট তো কখনো নার্সদের ধর্মঘট৷ চিকিৎসাকে বলা হয় সেবা দেয়া, অর্থাৎ চিকিৎসা সেবা৷ কিন্তু বেতন-ভাতা বাড়ানো, বোনাস আদায়ের নামে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করাটা কোন সেবার মধ্যে পড়ে বলতে পারেন? বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা আবারও সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বকে প্রমাণ করে, যেখানে চিকিৎসকদেরও হাত-পা বাঁধা৷
বুধবার অতি প্রয়োজনীয় স্টেন্ট-এর পরিবেশকদের অঘোষিত ধর্মঘটের ফলে ঝুঁকিতে পড়েছেন হার্টের রোগীরা৷ রোগীদের এমনভাবে জিম্মি করায় রোগী ও তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে ক্ষুব্ধ হয়েছেন চিকিৎসকরাও৷
স্টেন্ট হলো হার্টের ব্লক সরাতে একটি মেটাল ডিভাইস৷ উচ্চমূল্য এবং তা সংরক্ষণে অপারগতার কারণে হাসপাতালগুলো, বিশেষ করে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্টেন্ট রাখা হয় না৷ রোগীর চাহিদা অনুযায়ী এগুলো যোগান দেওয়া হয়৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারদিন থেকে ভর্তি রয়েছেন মাগুরা থেকে আসা ৬৫ বছরের ফারুকুল ইসলাম৷ গতকাল তাঁর হার্টে স্টেন্ট দেওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি৷
গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক এএসএম মুস্তাফা জামানের ১০ জন রোগীর হার্টে স্টেন্ট বসানোর কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি এই ধর্মঘটের কারণে৷ একই অবস্থা দেখা যায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটেও৷ হৃদরোগের চিকিৎসকদের মতে, প্রতিদিন ১০০ জন রোগীর স্টেন্টের প্রয়োজন হয়৷
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান গত ১৮ এপ্রিল সাংবাদিকদের বলেছেন, চারটি স্টেন্ট পরিবেশক কোম্পানি বলেছে তারা এক ধরনের স্টেন্ট ২৫ হাজার টাকা এবং অন্য ধরনের স্টেন্ট ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করবে৷ চিকিৎসকরা জানান, বর্তমানে, সরকারি হাসপাতালে একটি স্টেন্টের দাম পড়ে ৮০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত৷ বেসরকারি হাসপাতালে এই খরচ পড়ে দ্বিগুণের মতো৷ স্টেন্টের দাম নির্ধারণের জন্যে সরকার সম্প্রতি একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে৷
গত ফেব্রুয়ারিতে ভারত সরকার স্টেন্টের দাম সর্বোচ্চ ৩০ হাজার রুপি নির্ধারণ করে দিয়েছে৷ ফলে রোগীরা হৃদরোগের চিকিৎসার জন্যে ভারতমুখী হয়ে যাবেন বলে চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন৷ তবে এভাবে সাধারণ রোগীদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের জন্য ধর্মঘটকারীদের বিরুদ্ধে কখনোই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন৷ আর এ কারণেই হয়ত দিন দিন এ ধরনের প্রবণতা আরও বাড়ছে৷
এপিবি/ডিজি
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷