সাত বছরেও শেষ হয়নি রামু হামলার বিচার
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এসব হামলার ঘটনা ঘটে৷ ক্ষমতাসীন দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হামলায় অংশ নেয়ার অভিযোগ ওঠে৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার মাথা গোঁজার ঠাই পেয়েছিল৷ পরবর্তীতে পুড়ে যাওয়া বৌদ্ধ বিহার এবং বসতবাড়িও নির্মাণ করে দিয়েছিল সরকার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল দ্রুত বিচারের৷
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের এক সদস্য জয় বড়ুয়া এখনও সময় পেলেই আসেন রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারে৷ বর্তমানে রামুতে সম্প্রীতি কতটুকু ফিরে এসেছে? জয় বলেন, ‘‘বর্তমানে রামুবাসীর বিশেষ করে বৌদ্ধ, মুসলিম এবং হিন্দুদের মাঝে সম্প্রীতি কিছুটা ফিরে আসলেও এখনো ক্ষতটা রয়ে গেছে৷'' কিন্তু এ হামলার দ্রুত বিচারের আশ্বাস দেয়া হলেও, সাত বছরেও ১৯টি মামলা দেখেনি আলোর মুখ৷ সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে মামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রুত বিচার শেষ করতে তিনি সরকারের কাছে আবেদন জানান৷
২০১২ সালে ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে মিছিল নিয়ে আসা হাজার হাজার মানুষকে শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন তৎকালীন ফতেঁকারকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল৷ মাইকে সকলকে শান্ত হওয়ার অনুরোধ করলেওথামাতে পারেননি হামলা৷ চোখের সামনে নিজ এলাকার হাজার বছরের স্মৃতি পুড়ে যেতে দেখেছিলেন তিনি৷
এখন সোহেল সরওয়ার কাজল রামু উপজেলা চেয়ারম্যান৷ তিনি জানান, ‘‘সেদিনের সেই ঘটনা আমাদেরকে আসলে নাড়া দিয়েছিল৷ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আমরা সেদিন লড়াই করেছিলাম, চেষ্টা করেছি সেটি নিবারণ করার জন্য৷ অনেকটা পেরেছি আবার অনেকখানি পারেনি৷ এতদিন পরে এসে এত বছর কিভাবে চলে গেছে সেটিও কল্পনা করতে পারিনা৷ তবে সেই ক্ষত এখনো আমরা ভুলতে পারি নাই৷ সেটিকে মনে রেখে আগামীতে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে সে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি৷''
হামলার রাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার৷ বিহারের সহকারি পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন৷ হামলার সাত বছর পার হলেও কাঙ্খিত বিচার না পেয়ে এক প্রকার আশা ছেড়ে দিয়েছেন বলে মন্তব্য তাঁর৷
তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার পরপরই যেসব ব্যক্তিরা স্বপ্রণোদিত হয়ে সাক্ষী দিতে চেয়েছিল, দীর্ঘ সময় পর বিভিন্ন সমীকরণ কিন্তু তাদের মনের মধ্যে কাজ করছে৷ দীর্ঘ সময় পর সাক্ষীরা এখন সাক্ষ্য দিতে চান না৷'' এমন অবস্থায় মামলার ভবিষ্যত কী, তা নিয়ে তিনি শঙ্কিত৷
হামলার পর বিভিন্ন সংস্থা এই ঘটনা তদন্ত করে৷ পুলিশ, সিআইডি, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন সবকটি মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছে৷ রামু হামলায় মামলা হয়েছিল মোট ১৯ টি৷ আপোসের ভিত্তিতে একটি প্রত্যাহার হলেও বাকি সবকটির অভিযোগপত্র এখন আদালতে৷
সরকারি কৌশলী এডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, ‘‘মামলার যারা সাক্ষী রয়েছে, তাদের অনীহার কারণেই মূলত মামলার বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে৷ রামু, উখিয়া, টেকনাফে সেদিন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে যে একটা অসুন্দরের ছাপ পড়েছিল, সুষ্ঠু বিচারের মধ্য দিয়ে আমরা সেটা দূর করার চেষ্টা করবো৷''
রামু, উখিয়া ও টেকনাফে সহিংসতার ঘটনায় এজাহারভুক্ত ৩৭৫ জনসহ ১৫ হাজার ১৮২ জনের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা দায়ের করা হলেও পরবর্তীতে ১৮টি মামলায় ৯৪৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় তদন্তকারী সংস্থা৷ এসব ঘটনায় আটক হওয়া সব আসামিই এখন জামিনে রয়েছেন৷