‘‘সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই!’’
৯ নভেম্বর ২০২০পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের উদ্দেশ্যে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সর্বশেষ হুঁশিয়ারি, ‘‘মেরে হাত–পা ভেঙে দেব৷ দিদির ভাইয়েরা বেশি বাড়াবাড়ি করলে সোজা শ্মশানে পাঠিয়ে দেব৷’’এবং এমন গুন্ডামার্কা হুমকি দিলীপ ঘোষের মুখে এই প্রথম নয়৷ এর আগেও একাধিকবার তিনি এমন সুরে কথা বলেছেন, যা প্ররোচনার নামান্তর৷ অথচ এই রাজ্যেই একসময় রাজনৈতিক নেতা–নেত্রীরা তাঁদের বাগ্মিতার জন্য সুখ্যাত ছিলেন৷ জাতীয় সংসদেও বহু বাঙালি সদস্যের বুদ্ধিদীপ্ত ভাষণ এখনও ইতিহাস হয়ে আছে৷ সেখানে রাজনীতিকদের এই ভাষা কতটা মান বাড়াচ্ছে বাঙালিদের?
তুখোড় বক্তা হিসেবে খ্যাত বিজেপিরই প্রাক্তন সাংসদ, ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় টিভি বিতর্ক এবং রাজনৈতিক প্রচারসভায় তীক্ষ্ণ কটাক্ষ, টিকা–টিপ্পনি করার কারণে সুবিদিত৷ তাঁর কীরকম লাগে, যখন তাঁরই দলের একজন নেতা এই ভাষায় কথা বলেন? তথাগত রায় সরাসরি বললেন, ‘‘আমার ভাল লাগে না৷ এর বেশি কিছু এই মুহূর্তে বলতে আমি রাজি নই৷’’ কিন্তু প্রশ্নটা যেখানে সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক অবনমনের?তথাগত রায়ের বক্তব্য, ‘‘এটা আমার আদৌ মনঃপূত নয়৷ গণতন্ত্রের যে মূল চিন্তাভাবনা, এটা তার পরিপন্থী৷ কিন্তু বিভিন্ন সময়ে, কালের নিয়মে কিছু নেতা জন্মান, যাঁরা এই ধরণের ব্যাপারে আশ্রয় নেন৷ তার ফলে এটা প্রশ্রয় পায়৷ তারই ফলে আজকে এটার উদ্ভব হয়েছে৷ ব্যাপারটা চলছে৷ আমরা আশা করি কালের নিয়মে এই ব্যাপারটা আবার মিলিয়ে যাবে৷ চিরকাল থাকবে না৷ কিন্তু ততদিন আমাদের সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই৷’’
অর্থাৎ চলতি সময়ের ওপরেই দোষ দিচ্ছেন বর্ষীয়ান নেতা৷ যে সময়, যে সমাজ, তার শিক্ষাদীক্ষা, রুচিবোধ দিলীপ ঘোষের মতো নেতাদের তৈরি করছে৷ এবং সত্যি কথা বলতে, একা দিলীপ ঘোষ নন, অন্য দলেরও এমন কিছু নেতা–নেত্রী আছেন, যাঁদের ভাষণের ভাষা শুনলে কানে আঙুল দিতে হয়৷ এবং তথাগতবাবুর কথার প্রতিধ্বনি করেই বলতে হয়, সময় যতক্ষণ না বদলাচ্ছে, এই আকথা–কুকথার রাজনীতি সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই৷ এটাই চলছে, চলবেও৷
২০১৮ সালের ছবিঘরটি দেখুন...