‘সম্ভবত বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি চলছে’
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬রবিবার সকালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে সন্তগৌরীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে (৫০) গলা কেটে হত্যা করা হয়৷ গৃহত্যাগী এই ধর্মগুরুকে হিন্দু ভক্তরা মহারাজ বলে সম্বোধন করতেন৷ হত্যার পর প্রতিরোধের মুখে পড়ে দুবৃত্তরা গুলি করলে মঠের এক নারীসহ আরো দু'জন গুরুতর আহত হন৷ শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, পুলিশ এরমধ্যে তিনজনকে আটক করেছে৷ এদের মধ্যে দু'জন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-র সদস্য এবং অন্যজন ইসলামি ছাত্র শিবিরের স্থানীয় নেতা৷
জানা গেছে, হামলাকারীরা হামলার সময় ‘কতল' শব্দটি ব্যবহার করে৷ প্রতিরোধ করতে মঠের একজন এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা পিস্তুল উঁচিয়ে বলে, ‘‘তোর গুরুজিকে কতল করা হয়েছে, ঐ ঘরে যাবি তো তোকেও কতল করব৷''
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোট তিনজন হামলাকারী ছিল এবং তারা এসেছিল মোটর সাইকেলে৷ রংপুরে গত বছর জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যা, বগুড়ায় শিয়া মসজিদে হামলা এবং ঢাকার আশুলিয়ায় তল্লাশি চৌকিতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডেও তিনজন মোটর সাইকেল আরোহী অংশ নেয়৷
এ সব ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু, ভিন্ন ধর্মীয় মানুষ এবং স্থাপনায় হামলা ও হত্যার ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটছে৷ দু'জন বিদেশি নাগরিককে হত্যা ছাড়াও ২৩ অক্টোবর পুরনো ঢাকার হোসেনি দালানে শিয়াদের তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলায় দু'জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হন৷ ১৮ নভম্বের র্দুবৃত্তরা দিনাজপুরে খ্রিষ্টান ধর্মযাজক ডা. পিয়ারো পারোলারি সামিওকে হত্যার চেষ্টা করে৷ ২৬ নভেম্বর বগুড়ার শিবগঞ্জে শিয়া মুসলমানদের একটি মসজিদে ঢুকে নামাজরতদের উপর গুলি চালানো হলে মুয়াজ্জিন নিহত এবং তিনজন আহত হন৷ ১০ ডিসেম্বর রাতে দিনাজপুরে কাহারোল উপজেলার জয়নন্দ গ্রামে ইসকন মন্দিরে ধর্মসভা চলাকালে গুলি ও বোমা বিস্ফোরণে দু'জন আহত হন৷ ২৫ ডিসেম্বর ঈদ-ই-মিলাদুন্নবীর দিন রাজশাহীর বাগমারায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় আত্মঘাতী বোমা হামলায় একজন নিহত হন৷
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিচালক এবং জঙ্গি বিষয়ক গবেষক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হত্যা এবং হামলার ধরনই বলে দেয় যে তারা দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়৷ আমার মনে হয়, এরা বড় ধরনের কোনো হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার আগে এগুলো তাদের ড্রেস রিহার্সল৷''
তিনি বলেন, ‘‘হামলাকারীরা যে জঙ্গি তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ তবে তারা যে আইএস নয়, তা প্রমাণ করা কঠিন৷ বাংলাদেশে আইএস ভাবাদর্শের জঙ্গি আছে৷ তারা ধরাও পড়েছে৷ সরকার অবশ্য রাজনৈতিক বা অন্য কোনো কারণে আইএস-এর বিষয়টি স্বীকার করতে চাইছে না৷''
নূর খানের কথায়, ‘‘কোনো কিছু গোপন করে সমাধান হয় না৷ রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা না করে প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করে সরকারকে এইসব জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে৷''