1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সম্প্রীতির বিজ্ঞাপন নিয়ে গেরুয়া বাহিনীর তাণ্ডব

১৪ অক্টোবর ২০২০

একটি গয়না সংস্থার সম্প্রীতির বিজ্ঞাপন নিয়ে ভারতে তাণ্ডব চালালো গেরুয়া বাহিনী। বিজ্ঞাপন তুলে নিতে বাধ্য হলো ওই সংস্থা।

https://p.dw.com/p/3juCp
ছবি: Noah Seelam/AFP/Getty Images

সামাজিক অসহিষ্ণুতার আরো এক উদাহরণ তৈরি হলো ভারতে। এ বার একটি গয়না সংস্থার বিজ্ঞাপনকে ঘিরে। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির সেই বিজ্ঞাপন ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় এতটাই কদর্য আক্রমণ চালালো গেরুয়া বাহিনী, যে শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞাপন তুলে নিতে বাধ্য হলো গয়না সংস্থাটি। গেরুয়া বাহিনীর এই আক্রমণের কড়া নিন্দাও অবশ্য শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে।

টাটা গ্রুপ ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্প সংস্থা। স্বাধীনতার আগে থেকে ভারতের শিল্পক্ষেত্রে অগ্রণী সংস্থা হলো টাটা। তাদেরই গয়না সংস্থা তানিশক। দীর্ঘ দিন ধরেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে বিজ্ঞাপন তৈরি করে তানিশক। এর আগে এলজিবিটিকিউ অধিকার, বিধবা বিবাহ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে তারা। সম্প্রতি তারা বিজ্ঞাপন তৈরি করেছিল হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি নিয়ে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, হিন্দু গর্ভবতী নারীকে নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে মুসলিম শ্বশুরবাড়ি। সম্প্রীতির এক সুন্দর বার্তা দেওয়া হয়েছে ওই বিজ্ঞাপনে।

কিন্তু কেন হিন্দু নারীকে মুসলিম বাড়িতে দেখানো হয়েছে, তা নিয়েই শুরু হয়ে যায় বিতর্ক। বিজেপি পরিবারের অন্যতম সদস্য বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। দীর্ঘ দিন ধরেই তারা ভারতে 'লাভ-জিহাদ' নামে একটি শব্দের আমদানি ঘটিয়েছে। এর অর্থ হলো, হিন্দু নারীদের বিয়ে করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করছেন মুসলিম পুরুষরা। এর আগে এই নিয়ে বহু জায়গায় ঝামেলা করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং গেরুয়া বাহিনী। তনিশকের এই বিজ্ঞাপন বাজারে আসার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় কদর্য ভাষায় তারাই আক্রমণ করতে শুরু করে বলে অভিযোগ। ফের লাভ-জিহাদের প্রসঙ্গ চলে আসে। অভিযোগ, বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আইটি সেল পরিকল্পিত ভাবে এই কাজ করেছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সর্বভারতীয় নেতা শচীন্দ্রনাথ সিংহ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''ভারতের সনাতন সংস্কৃতি হিন্দু সংস্কৃতি। অন্য ধর্মের নারী হিন্দু বাড়িতে এলে আমরা তাঁকে স্বাগত জানাই। সেটা হলো ঘরওয়াপসি। কিন্তু হিন্দু নারী অন্য ধর্মের বাড়িতে গেলে তা লাভ-জিহাদ। আমরা তা সমর্থন করি না। ওই বিজ্ঞাপনে সেটাই দেখানো হয়েছিল।'' পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষরা সম্প্রীতির কথা বলতে গেলেই অন্য ধর্মের সঙ্গে হিন্দুদের সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করেন। হিন্দু সংস্কৃতির কথা বলেন না। ওই বিজ্ঞাপনে যা দেখানো হয়েছিল, তা বহু মানুষের আবেগে আঘাত করতে পারতো। এ ধরনের বিষয় নিয়ে বিজ্ঞাপন করা কখনোই সমর্থন করি না।'' বাদ যাননি তথাকথিত সেলিব্রিটিরাও। কঙ্গনা রানাওয়াতও টুইট করে ধর্মীয় 'উসকানি' দিয়েছেন।

একাধিক বিজেপি নেতার বক্তব্য, এই বিজ্ঞাপন হিন্দু ধর্মের পক্ষে অসম্মানজনক। প্রশ্ন উঠেছে কেন মুসলিম নারীকে হিন্দু বাড়িতে দেখানো হলো না। সোশ্যাল মিডিয়ায় গেরুয়া শিবির এবং তাদের আইটি সেলের আক্রমণ এতটাই ভয়াবহ চেহারা নেয় যে তার প্রভাব গিয়ে পড়ে শেয়ার বাজারেও। টাটার স্টক দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ কমে যায়। এর পরে আর সময় নষ্ট করেনি টাটা গ্রুপ। বিবৃতি দিয়ে বিজ্ঞাপন তুলে নেওয়ার কথা জানানো হয়। জানানো হয়, কর্মীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এ কাজ করা হলো।

কংগ্রেস এ ঘটনার জন্য সরাসরি বিজেপি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে দায়ী করেছে। সাধারণ মানুষও এর প্রতিবাদ করেছেন। কংগ্রেসের শশী থারুর টুইট করে বিজেপির কড়া সমালোচনা করেছেন। অসহিষ্ণুতা নিয়ে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো কোনো ব্যক্তি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন টাটা ওই বিজ্ঞাপন তুলে নিল? তা হলে কি সব ক্ষেত্রেই অসহিষ্ণুতার সামনে মাথা নত করতে হবে?

এসজি/জিএইচ (পিটিআই)