সমাবেশ গোলাপবাগে, ফখরুল-আব্বাস কারাগারে
৯ ডিসেম্বর ২০২২ওই দুই নেতাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷
শুক্রবার বিকেলেগোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের সিদ্ধান্ত জানার পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা গোলাপবাগ মাঠে সমবেত হতে শুরু করেছেন৷ শুরু হয়েছে মঞ্চ তৈরির কাজ৷
বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি জানিয়েছে, শনিবার সকাল ১১ টা থেকে সমাবেশের কাজ শুরু হবে৷
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে নয়াপল্টনের সংঘর্ষের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷ আদালত তাদের জামিন দেননি৷
দলের মহাসচিব কারাগারে থাকায় কে সমাবেশে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তার সিদ্ধান্ত হয়নি৷ তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশররফ হোসেন সমাবেশের প্রধান অতিথি ও কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন৷
যেভাবে গোলাপবাগ
নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ব্যপারে বিএনপি অনড় থাকলেও বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের দাবি ত্যাগ করে কমলাপুর স্টেডিয়ামে সমাবেশ করতে চায়৷ কিন্তু পুলিশ মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ মাঠের কথা বলে৷ পুলিশ তখন জানায়, কমলাপুর স্টেডিয়ামে ক্রিকেট খেলা চলছে৷ বাঙলা কলেজ মাঠে তারা সমাবেশ করলে পুলিশ অনুমতি দেবে৷ কিন্তু শুক্রবার ভোর রাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে আটক করে গোয়েন্দা বিভাগের পুলিশ৷ এরপর সকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠক করেন৷ ওই বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যোগ দেন৷ দুপুরে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল৷ বৈঠক শেষে বিকাল তিনটার কিছু আগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, পুলিশ তাদের গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি দিয়ছে৷ সেখানই তারা সমাবেশ করবেন৷
বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, ‘‘শনিবার সকাল ১১টা থেকে সমাবেশ শুরু হবে৷’’
এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক গোলাপবাগ মাঠ পরিদর্শন করেন৷ তিনি তখন বলেন, ‘‘বিএনপি এই মাঠটি তাদের সমাবেশের জন্য চেয়েছে৷ আমরাও সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছি৷’’
পরিস্থিতি পালটে যায় যেভাবে
বিএনপি বররবরই নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় ছিল৷ আর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল নয়াপল্টনে নয়, সমাবেশ করতে হবে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান বা কোনো খোলা মাঠে৷ ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার পর পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে অফিস তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়৷ শীর্ষ পর্যায়ের ১০ জনসহ তিন শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ পুলিশ দাবি করেছে, বিএনপির অফিস থেকে ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে৷ বিএনপি অফিস এবং সামনের সড়ককে ‘ক্রাইম সিন’ ঘোষণা করে পুলিশ৷ ফলে এখনো ওই এলাকায় যান ও মানুষ চলাচল বন্ধ আছে৷
এরপর আলোচনায় আসে কলমাপুর স্টেডিয়াম ও মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠ৷ কিন্তু শুক্রবার ভোররাতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তারের পর গোলাপবাগ মাঠের বিষয়টি আসে এবং তা চূড়ান্ত হয়৷
তবে পুলিশের ব্যাপক অভিযান, গ্রেপ্তার ও তল্লাশির মুখে আগেই চাপে পড়ে বিএনপি৷ এরসঙ্গে মাঠে নামে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা৷ শুক্রবার বিকেলেও ঢাকায় সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ৷ সেখানেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘১০ তারিখে খেলা হবে৷’’ ঢাকা এখন পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে৷ এমনকি পরিস্থিতি অনুকূলে রাখতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বড় পর্দায় বিশ্বকাপ খেলা দেখানো শুক্রবার রাতের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷
পুলিশের সহায়তা চেয়েছে বিএনপি
বিকালে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশররফ হোসেন বলেন, ‘‘বিএনপির সমাবেশকে পন্ড করার জন্য, ব্যাহত করার জন্য নানা তৎপরতা চালানো হয়েছে৷ আমাদের অফিসে অভিযান চালিয়ে পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে৷'' তিনি অবিলম্বে দলের মহাসচিবসহ সবাইকে মুক্তি দেয়ার দাবি করেন৷
তিনি বলেন, ‘‘কাল (শনিবার) বেলা ১১টায় সমাবেশ শুরু হবে৷ গোলাপবাগে মঞ্চ তৈরি, মাইক লাগানো এবং নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সহযোগিতা চাই আমরা৷’’
সমাবেশে উপস্থিত থেকে ‘সরকারের জুলুম, অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার' আহবান জানান ড. খন্দকার মোশররফ হোসেন৷ বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে যারা শরিক আছে তাদেরও যার যার অবস্থানে থেকে ভূমিকা পালনের আহবান জানান তিনি৷
ড. খন্দকার মোশররফ হোসেন বলেন, ‘‘এই সমাবেশ থেকে সরকারকে বিদায় করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে৷’’
বিএনপি গোলাপবাগে সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়ে পিছু হটলো কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সরকার চেয়েছিল আমাদের সমাবেশকে ভন্ডুল করতে৷ তা তারা পারেনি৷ গোলাপবাগ মাঠ আমরাই পছন্দ করেছি৷ পুলিশ অনুমতি দিয়েছে৷’’
‘পুলিশি রাষ্ট্রে সমাবেশ করাই বড় কথা’
পুলিশের সঙ্গে সমাবেশ নিয়ে সর্বশেষ আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালও ছিলেন৷ তিনি নয়াপল্টনে সমাবশ করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা এখন বলি এটা একটা পুলিশি রাষ্ট্র৷ পুলিশ বিএনপি অফিস আশপাশের এলাকাকে ‘ক্রাইম সিন’ হিসবে ঘোষণা করেছে৷ আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল৷ আমরা আমাদের সভা সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করতে চাই৷ ফলে পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা গোলপবাগ মাঠে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷’’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘নেতা-কর্মীদের মুক্তির ব্যাপারে একটি অগণতান্ত্রিক সরকারের কাছে আমরা কী আশা করতে পারি৷ তারা তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এটা করে৷ আমাদের মহাসচিবসহ দুই সিনিয়র নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিনা ওয়ারেন্টে৷ আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই৷’’
‘বিএনপি তার পরিণতি ভোগ করছে’
এদিকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘‘বিএনপি তার কৃতকর্মের পরিণতি ভোগ করছে৷ তারা নয়াপল্টনে পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ করতে চেয়ে সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করছিলো৷ তারা পার্টি অফিসে বিস্ফোরক রেখে, পুলিশের ওপর হামলা করে এক এগারোর মতো একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চেয়েছিল৷ অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিল৷ তাদের সঙ্গে নেপথ্যে আছে এক এগারোর কুশীলব ও কিছু সংবাদমাধ্যম৷ কিন্তু তাদের নীল নকশা প্রকাশ হয়ে গেছে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘তারপরও বিএনপিকে তো সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে৷ বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে যে আচরণ করেছেন তার তুলনায় তাদের সঙ্গে কিছুই করা হচ্ছে না৷’’
তার কথা, ‘‘বিএনপি বলেছিল আমরা পালিয়ে যাবো৷ মাঠে থাকব না৷ এখন কী হলো? এই স্বাধীনতার মাসে আমরাই মাঠে আছি, মাঠে থাকব৷ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না৷ তারা মাঠে থাকবে না৷ পালিয়ে যাবে৷ আমরাই মাঠে থাকব৷’’