সপ্তমবার, তবু সপ্তম স্বর্গে নন!
৬ ডিসেম্বর ২০১২মঙ্গলবার আবার জার্মানির খ্রিষ্টীয় গণতান্ত্রিক দল সিডিইউ'র চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ এটা অপ্রত্যাশিত কিছু নয়৷ তবু সপ্তমবার বলে কথা! জার্মানিতে তো কেউ চাইলেই দলের শীর্ষ পদ ধরে রাখতে পারেন না৷ দায়িত্বে থাকতে কী কী করেছেন – তা খুব ভালো করে খতিয়ে দেখে তবেই ভোট দেন দলীয় সদস্যরা৷ অবাক করা ব্যাপার হলো, সেখানে ম্যার্কেল পেয়েছেন ৯৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট!
হ্যানোফার শহরে মঙ্গলবার ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর উপস্থিত দলীয় নেতারা হাত তালি দিয়ে অভিনন্দন জানান ম্যার্কেলকে৷ টানা আট মিনিট ধরে চলে হাততালি৷ ম্যার্কেলের মুখে তখন খুশির হাসি৷ হাত নেড়ে নেড়ে আট মিনিট ধরেই অভিনন্দনের জবাব দিয়েছেন তিনি৷ তারপর বক্তৃতা৷ এক ঘণ্টার বক্তৃতায় দল এবং জোটের সাফল্যের কথা এসেছে৷ বিশ্বমন্দার সময়ে তাঁর নেতৃত্বে জার্মানি যেভাবে উন্নতির ধারা বজায় রেখেছে, বেকারত্বের হার কমিয়ে এনেছে তাতে জার্মান চ্যান্সেলরের গর্বিত হওয়াই স্বাভাবিক৷ এমন অর্জনকে ৫৮ বছর বয়সি নেতা কিন্তু শুধু নিজের বা নিজের দলের বলে দাবি করেন নি৷
২০০৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হবার পর নিজ দলের সঙ্গে এফডিপি'র মতো ছোট দলকে নিয়ে সরকার পরিচালনা করে আসছেন ম্যার্কেল৷ সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা গেছে যে, এফডিপি'র জনপ্রিয়তা পড়তির দিকে৷ জরিপে মাত্র ৪ শতাংশ জনগণের সমর্থন পেয়েছে তারা৷ অথচ ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান দল সিডিইউ'র অবস্থা খুবই ভালো, ম্যার্কেলের নেতৃত্বের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে ৪০ শতাংশ মানুষ সমর্থন জানিয়েছে তাদের৷
কোথায় ৪ আর কোথায় ৪০৷ এত বড় ব্যাবধানের পরও এক ঘণ্টার ভাষণে জোটের শরিক ছোট দলটিকে কটাক্ষ করে একটা কথাও বলেন নি ম্যার্কেল৷ শুধু বলেছেন, ‘‘ আমরা যাতে লক্ষ্য অর্জন করতে পারি সে জন্য আমাদের জোটের শরিকদের আরেকটু ভালো খেলতে হবে৷'' লক্ষ্য বলতে আগামী বছরের নির্বাচন৷ জার্মানির চ্যান্সেলরের কথায় সেটাকে খেলার মতো হালকা মনে হলেও নির্বাচনটা কিন্তু এত সহজ হবে না৷ জার্মানির সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে এ মুহূর্তে সিডিইউ সবচেয়ে ভালো অবস্থায় থাকলেও জোট হিসেবে অবস্থা মোটেই ভালো বলা যাবে না৷ জরিপে প্রতিপক্ষ দুই দল সামাজিক গণতন্ত্রী এবং সবুজ দল সম্মিলিতভাবে ক্ষমতাসীন জোটের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে৷
তারপরও যে শরিক দলগুলোর প্রতি কোনো রকমের অসন্তোষ প্রকাশ করেন নি সে কারণে জার্মানির অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই ম্যার্কেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ৷ বার্লিনের সাংসদ স্টেফানি ফোগেলজাং ধরেই নিয়েছিলেন নির্বাচনকে সামনে রেখে ম্যার্কেল প্রতিপক্ষের তীব্র সমালোচনা তো করবেনই, সঙ্গে শরিক দলগুলোকে সতর্ক করে দেবেন কড়া ভাষায়, অথচ এক ঘণ্টার বক্তব্যে তেমন কিছুই নেই! এমন ইতিবাচক মনোভাব দেখে ম্যার্কেলকে নেতা হিসেবে মূল্যায়ণ করেছেন একটি শব্দে – অসাধারণ৷
তেমন না হলে সিডিইউ নিশ্চয়ই নতুন নেতৃত্ব খোঁজায় অস্থির হতো৷ বিকল্প নেতৃত্ব যে তৈরি হচ্ছে না তা নয়, তবে ২০০০ সাল থেকে যিনি দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন সেই ম্যার্কেলের প্রতি আস্থা একটুও কমেনি৷ দলের প্রায় সবার অটুট আস্থারই প্রমান ১০০০ প্রতিনিধির মধ্যে ৯৮ ভাগের ভোট পেয়ে আবার দলের নেতা নির্বাচিত হওয়া৷ এক বার দু'বার নয়, এই নিয়ে সাতবার সিডিইউ'র চেয়ারম্যান হলেন তিনি৷ তারপরও বিন্দুমাত্র অহঙ্কার নেই৷ ২০১৪-র নির্বাচনের কথা মনে করে বলেছেন, ‘‘আমাদের অবিরাম কাজ করে যেতে হবে৷ এখনো যে অনেক কিছু করার বাকি৷''