পরোক্ষ সমালোচনায় ম্যার্কেল
৮ এপ্রিল ২০১৩পুটিন জার্মানিতে এসেছেন হ্যানোভার মেলা উদ্বোধন উপলক্ষ্যে৷ অর্থাৎ বাণিজ্যই তাঁর এই সফরের মূল উপাদ্য৷ এর পরে তিনি নেদারল্যান্ডস যাবেন একই উদ্দেশ্যে৷ এই দু'টি দেশ আবার ইউরোপে রাশিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্যিক সহযোগী৷ কিন্তু পুটিন যখন ইউরোপে এসেছেন, তখন তাঁকে রাশিয়ায় মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হবে বৈকি৷
সোচ্চার প্রতিবাদ
পুটিন এবং ম্যার্কেল যখন হ্যানোভার শিল্পমেলার উদ্বোধন করছেন, তখন বাইরে কয়েকশো মানুষ প্রতিবাদ প্রদর্শন করছিলেন৷ অনেকেরই হাতে ছিল সিরিয়ায় পতাকা৷ কয়েকজন পুটিনের মুখোশের সামনে শয়তানের মুখোশ পরে ছিলেন৷ পুটিনকে জেলবন্দির বেশেও দেখানো হয়েছে কয়েকটি প্ল্যাকার্ডে৷ ‘‘রাজনৈতিক সন্ত্রাস বন্ধ করো,'' লেখা ছিল একটি শালুতে৷
জার্মানি আসার আগেই ক্রেমলিনে বসে পুটিন জার্মান টেলিভিশন সংস্থা এআরডিকে যে সাক্ষাৎকার দেন, তা'তে তিনি এনজিও'দের বিরুদ্ধে সর্বশেষ পদক্ষেপের সপক্ষে মতপ্রকাশ করেন এবং বলেন, এমনকি কয়েকটি জার্মান নিধির মস্কো কার্যালয়ে খানাতল্লাসি ও কম্পিউটার আটকের ফলে তাঁর জার্মানি সফরের উপর কোনো প্রভাব পড়বে না৷
উচ্চ প্রত্যাশা
কিন্তু কনরাড আডেনাউয়ার ফাউন্ডেশন ম্যার্কেলের নিজের দল সিডিইউ'এর ঘনিষ্ঠ৷ এছাড়া সাধারণভাবে রাশিয়া কিংবা চীনের সঙ্গে জার্মানির যেরকম একদিকে ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, অন্যদিকে ম্যার্কেলের কাছ থেকে জার্মান জনমানসে এই প্রত্যাশাও রয়েছে যে, তিনি রুশ কিংবা চীনা নেতৃবর্গের সঙ্গে সাক্ষাতে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের মতো বুনিয়াদি মূল্যবোধের প্রশ্নগুলি এড়িয়ে যাবেন না৷
তাই ম্যার্কেল রবিবার হ্যানোভারে তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে পুটিনকে বলেন, রাশিয়ার ব্যাপক প্রাকৃতিক সম্পদ আছে এবং অবকাঠামোয় বিপুল বিনিয়োগ করা হয়েছে, কিন্তু জার্মানি রাশিয়াকে তার পণ্য ও পরিষেবার পসরা বাড়াতে এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে সাহায্য করতে পারে৷
‘‘একটি সক্রিয় সুশীল সমাজ থাকলে এটা সবচেয়ে সফলভাবে করা সম্ভব বলে আমাদের ধারণা,'' বলেছেন ম্যার্কেল৷ ‘‘আমাদের এই আলোচনা আরো জোরদার করতে হবে, ধ্যানধারণার বিকাশ ঘটাতে হবে এবং এনজিও'গুলিকে রাশিয়ায় একটা ভালো সুযোগ দিতে হবে, কেননা আমরা জানি যে, তারা উদ্ভাবনী শক্তির মোটর হিসেবে কাজ করে৷''
বিতর্কিত প্রসঙ্গ
জার্মানির কাছে রাশিয়া শুধু জ্বালানির উৎসই নয়, রপ্তানির বাজারও বটে৷ অপরদিকে সিরিয়া নিয়ে উভয় পক্ষের মতপার্থক্য সুবিদিত৷ রাশিয়া সাইপ্রাসের আর্থিক ত্রাণের শর্তাবলীর প্রকাশ্য সমালোচনা করেছে, যে শর্তাবলীর পিছনে জার্মানির ভূমিকা এবং সমর্থন, দুই'ই আছে৷ কিন্তু শিল্পমেলার অবকাশে ম্যার্কেল তো সাংবাদিকদের আগেই বলেছিলেন যে, পুটিনের সঙ্গে তাঁর আলাপ-আলোচনায় কিছু ‘‘বিতর্কিত প্রসঙ্গও'' থাকবে৷
গতবছর প্রণীত একটি আইন অনুযায়ী রাশিয়ায় যে সব এনজিও বৈদেশিক সাহায্য পায়, তাদের ‘ফরেন এজেন্ট' হিসেবে রেজিস্টার করতে হবে৷ নয়তো অর্থদণ্ড, এমনকি কারাদণ্ড হওয়া সম্ভব৷ পুটিন শিল্পমেলায় তাঁর ভাষণে রাশিয়ার অর্থনৈতিক শক্তির কথাই বলেছেন, এনজিও সংক্রান্ত ‘‘বিতর্কিত প্রসঙ্গ''-টির উল্লেখ পর্যন্ত করেননি৷
এসি / এসবি (ডিপিএ, এপি, রয়টার্স, এএফপি)