সংসদ নয়, আরএসএস-এর সভায় শিক্ষানীতির আলোচনা
২২ অক্টোবর ২০২১নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার দেশের শিক্ষানীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব। বর্তমান শিক্ষানীতির বদল ঘটিয়ে নতুন শিক্ষানীতি প্রণোয়নের কথা তারা বহুদিন ধরেই বলছেন। একটি খসড়াও তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা অনুমোদিতও হয়েছে। কিন্তু এখনো সংসদে তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। তার আগেই আরএসএস-এর অধিবেশনে জাতীয় শিক্ষানীতি পেশ করলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। তা নিয়ে আলোচনাও হলো। যা দেখে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। সংসদে আলোচনার আগে শিক্ষানীতির খসড়া আরএসএস-এর সভায় কীভাবে পৌঁছে গেল? এই প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে।
মঙ্গল এবং বুধবার আরএসএস-এর সম্মেলনে জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে মাতৃভাষায় শিক্ষার উপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে ইতিহাস বিষয়ে। আরএসএস-এর বরাবর অভিযোগ, দেশের ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে বিদেশি শক্তিদের অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ যারা ওই শক্তির প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিল, তাদের তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। পাঠ্যক্রম থেকে মুঘল ইতিহাস, সুলতানি ইতিহাস কমিয়ে সেখানে মারাঠা, রাজপুত ইতিহাসকে গৌরবান্বিত করার কথা বলা হয়েছে। আরএসএস-এর এই বক্তব্য নিয়ে দেশের ঐতিহাসিক মহলে বহু বিতর্ক হয়েছে। এখনো হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে আরএসএস-এর বহু বক্তব্যই গ্রহণ করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এবং সে কারণেই শিক্ষামন্ত্রী সংসদে তা তোলার আগে আরএসএস-এর সভায় নিয়ে গেছেন বলে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য।
সাধারণত, এই ধরনের বিষয় সংসদে আলোচনার পরেই সকলের সামনে আসে। সংসদের বিতর্কসভায় আলোচনার পর অনেক সময় এই ধরনের বিলের পরিমার্জন বা পরিবর্ধন হয়। সংসদের দুইকক্ষ মত দিলে তবেই নীতি প্রণয়ন হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রী দেখিয়ে দিলেন, সংসদ নয়, আরএসএস-ই তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সিপিএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ''এবার দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেল যে, বিজেপি কার অঙ্গুলিহেলনে চলে।'' কংগ্রেসও এই ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করেছে।
২০২৫ সালে আরএসএস-এর ১০০ বছর পূর্তি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, তার আগে আরএসএস-এর একাধিক কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করতে চায় বিজেপির সরকার। জাতীয় শিক্ষানীতিও তারই একটি অংশ। এবং সে কারণেই শিক্ষামন্ত্রী সংসদে ওঠার আগে বিষয়টি আরএসএস-এর কাছ থেকে পাশ করিয়ে নিয়েছেন।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই, আনন্দবাজার)