শেষ হলো ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা
২০ অক্টোবর ২০০৯ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার রয়েছে ৫০০ বছরের এক ইতিহাস৷ আজকের রূপে এই মেলার যাত্রা শুরু ১৯৪৯ সাল থেকে৷ তারপর থেকে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই মেলা৷ এবছর মেলা জুড়ে ই-বুক-এর প্রাচুর্য লক্ষ করা গেছে৷ তবে মুদ্রিত বই তার গুরুত্ব হারায়নি এখনও৷ ৩ লক্ষ দর্শকের মধ্যে ছিলেন দেশ বিদেশের ১০ হাজার সাংবাদিক, এক হাজারের মত লেখক ও বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি৷
মেলার উদ্বোধন করলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও চীনের উপরাষ্ট্রপতি শি জিনপিং৷ প্রতি বছর সম্মানিত অতিথি হিসাবে একটি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয় ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায়৷ এবারের অতিথি দেশ ছিল চীন৷
চ্যান্সেলর ম্যার্কেল উদ্বোধনী ভাষণে অতিথি দেশকে কিছুটা কৌতূহল নিয়ে দেখার কথা বলেন৷ তাঁর মতে, ‘‘চীন সচেতনভাবেই ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় যোগ দিয়েছে৷ এখানে যে প্রশংসার সাথে সাথে সমালোচনার ধ্বনিও শোনা যাবে, তা জানে দেশটি৷ আমি নিশ্চিত যে আলোচনায় নিষিদ্ধ বা ট্যাবু বলে কিছু থাকবেনা৷ এটাই হল মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র৷ সাহিত্যের মত সংস্কৃতির আর কোনো শাখা নেই, যাতে মত প্রকাশের বিষয়টি এত গুরুত্ব পায়৷''
চীনকে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে মেলা শুরু হওয়ার আগে থেকেই চলছিল নানা জল্পনা কল্পনা, সমালোচনা, বাকবিতন্ডা এমনকি বিক্ষোভও৷ প্রশ্ন উঠেছে, যে দেশটিতে মানুষের কোন বাক স্বাধীনতা নেই, গণমাধ্যমগুলি সরকারনিয়ন্ত্রিত, বিরোধীকন্ঠ পদদলিত৷ সেরকম একটি দেশ থেকে মানুষ কী ধরণের সাহিত্য আশা করতে পারে? যারা এখানে প্রতিনিধি হয়ে আসবেন তারা কী স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারবেন?
মেলার বাইরে চীনের কারারুদ্ধ বুদ্ধিজীবীদের মুক্তির দাবিতে এক মিছিলও হয়ে যায়৷ মেলার উদ্যোক্তারা অবশ্য কিছুটা টানাপোড়েনে থাকলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেননি৷ বরং চেষ্টা করেছেন একটা সমঝোতায় আসার৷
চীনের উপরাষ্ট্রপতি শি জিনপিং মনে করেন, এই বইমেলা তাঁর দেশ ও অন্যান্য দেশের জন্য এক সুযোগ বয়ে আনবে৷ ৩০ বছর ধরে সংস্কার প্রক্রিয়া চলার পর বিশ্বের কাছে নিজেকে আরো উন্মুক্ত করতে চায় চীন৷ তবে সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের ক্ষেত্রে তাঁর দেশ সহমর্মিতা ও সম্মান আশা করে৷
অন্যদিকে সরকার নিয়ন্ত্রিত আয়োজককমিটির উদ্দেশে সমালোচনার সুর শোনা যায় লন্ডন প্রবাসী চীনা লেখক ইয়ান লিয়ান-এর কন্ঠে৷ চীনের বেসরকারি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মেলায় যোগ দিয়েছেন তিনি৷ তাঁর মতে, সরকারি আয়োজকরা শুধু রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়েই ব্যস্ত৷ বলা যায় সরকারের এক প্রচারযন্ত্র তারা৷ সেন্সর করাই যেন তাদের কাজ৷ তবে ইয়াং লিয়ান এক্ষেত্রে কিছুটা আশাবাদ ব্যক্ত করে জানান, দেশটি ক্রমাগত বদলাচ্ছে৷ লিয়ান বলেন, ‘‘সরকার এই পরিবর্তন মেনে নিক বা না নিক৷ তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না৷''
এত বাক বিতন্ডা সত্ত্বেও দর্শকদের আকৃষ্ট করেছে চীনা স্টলটি৷ বিশাল হলটিকে চীনা লিপি ও শিল্পকলা দিয়ে সাজানো হয়েছিল৷ মটো ছিলঃ ঐতিহ্য ও আধুনিকতা৷ চীনের পুরানো দর্শন, হস্তশিল্পের সঙ্গে ছিল আধুনিক ডিজাইনের অপূর্ব সমন্বয়৷
সরকারি ও বিরোধী শিবির মিলিয়ে এক হাজার লেখক অংশ নিয়েছিলেন মেলায়৷ পরিবেশিত হয়েছে চারশর বেশি বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ও আলোচনা অনুষ্ঠান৷
এবারের ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় এক ভিন্নমাত্রা এনে দিয়েছে সদ্য নোবেলজয়ী লেখিকা হেয়ার্টা ম্যুলার-এর উপস্থিতি৷ তাঁর সম্প্রতি প্রকাশিত বই ‘আতেমশাউকেল' বা ‘নিশ্বাসের দোলনা' থেকে পাঠ করেছেন তিনি৷
প্রতিবেদক: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক