শেষ হল লাইপসিশ বইমেলা
২২ মার্চ ২০১০লাইপসিশ বইমেলার ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিতে হলে ফিরে যেতে হবে সেই সপ্তদশ শতাব্দীর দিকে৷ ১৬৩২ সালে বই'এর সংখ্যার দিক দিয়ে প্রথমবারের মত ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল লাইপসিশ বইমেলা৷ তার এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত ছিল ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত৷ এরপর ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা অধিকার করে নেয় শীর্ষস্থানটি৷ তবে সাবেক পূর্ব জার্মানিতেও দুই জার্মানির বইপ্রেমী ও পুস্তক ব্যবসায়ীদের একটা বিশেষ মিলনকেন্দ্র ছিল লাইপসিশ বইমেলা৷ জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের পর আবার উজ্জীবিত হতে শুরু করে এই বইমেলা৷ প্রায় প্রতি বছরই এই বইমেলার দর্শক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এবছরও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছিল মেলা প্রাঙ্গণ৷ লেখক ও প্রকাশনা সংস্থাগুলি এসেছিল তাদের সম্প্রতি প্রকাশিত নানা ধরণের গ্রন্থ, উপন্যাস, আত্মজীবনী বা বিষয়ভিত্তিক বই নিয়ে৷ বই মেলার পরিচালক অলিভার সিলে বলেন, ‘‘লাইপসিশ বইমেলাকে বলা যায় জার্মানি তথা দক্ষিণ পূর্ব ইউরোপের নতুন নতুন সাহিত্য আবিষ্কারের এক বইমেলা৷''
প্রথমবার এলেন যারা
বলকান দেশগুলির লেখক ও ছোট ছোট প্রকাশনা সংস্থা লাইপসিশ বইমেলায় যোগ দিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে; এই বইমেলাকে জার্মানির পুস্তক বাজারে প্রবেশের একটা সেতু হিসাবে দেখেন তাঁরা৷ অন্যদিকে মেলার পক্ষ থেকেও এই দেশগুলির দিকে বিশেষ মনোযোগ দেয়া হয়৷ যেমন ২০১১ সালে লাইপসিশ বইমেলায় সার্বিয়াকে অতিথি দেশ হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ এইবারই প্রথম বসনিয়া হ্যারৎসোগোভিনা যোগ দিল তাদের সাহিত্যের পসরা নিয়ে৷ ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ায় সহায়তা করার জন্য প্রতিবছর লাইপসিশ বইমেলার পক্ষ থেকে যে পুরস্কারটি দেয়া হয়, এ বছর তা পেলেন হাঙ্গেরির ইতিহাসবিদ ও প্রকাশক জিয়র্জ দলোশ৷
লাইপসিশ বইমেলার পরিচালক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘গত বছরগুলিতে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় যে সব দেশ মেলায় যোগ দিয়েছিল, এবারও তারা উপস্থিত হয়েছে তাদের সাহিত্য নিয়ে৷ এছাড়া নতুন নতুন কিছু দেশও যোগ দিয়েছে এবার৷ যেমন বসনিয়া হ্যারৎসোগোভিনা৷ আমি মনে করি, লাইপসিশ মেলা এমন একটি জায়গা, যেখানে সীমিত সুযোগের মধ্য দিয়ে এই সব দেশের সাহিত্যের প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করানো যায়৷''
এবছর এই মেলায় ৩৯টি দেশের দুই হাজারেরও বেশি প্রদর্শক যোগ দিয়েছিলেন তাঁদের সাহিত্য সামগ্রী নিয়ে৷ জার্মানির দুই নোবেলজয়ী লেখক হ্যার্টা ম্যুলার এবং গ্যুন্টার গ্রাস থেকে শুরু করে ১৫০০-এর মত প্রবীণ ও নবীন লেখক এসেছিলেন এই বই মেলায়৷ সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতি জগতের বহু নামিদামি ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল মেলা প্রাঙ্গণ৷
লাইপসিশ বইমেলার পরিচালক অলিভার সিলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে মন্তব্য করেন, ‘‘মেলার দর্শক সংখ্যা এখন দেড় লাখের মত৷ আমাদের দর্শকরা উচ্চ শিক্ষিত; কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করা৷ ৩০ শতাংশের বয়স ২০ বছরের কম৷ অনেক শিক্ষক ও স্কুলের ছাত্রছাত্রী আসেন মেলায়৷ আমাদের মেলাকে বলা যায় দর্শকদের মেলা, সাহিত্য ও শিক্ষার মেলা৷''
কমিক শিল্পীদের আগমন
এবারের বইমেলায় বিশেষ করে ছোট পাঠকদের দিকে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে৷ মেলার এক চতুর্থাংশ জায়গা শিশু ও কিশোরদের বই-এর জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছিল৷ এছাড়া মেলায় কমিক চিত্রের স্টলগুলি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল সবার৷ জাপান থেকে এসেছিলেন বিশ্বখ্যাত কমিক চিত্রশিল্পীরা৷ ‘মাঙ্গা' চিত্রশিল্পী নামে পরিচিত তাঁরা৷ ভক্তরা মেলাচত্বরে তাঁদের ছবি আঁকা দেখতে ভিড় করেছিলেন চারপাশে৷ কারো কারো সুযোগ হয়েছিল অঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার৷
বইমেলাকে ঘিরে সারা লাইপসিশ শহরই পরিণত হয়েছিল যেন এক সাহিত্য নগরীতে৷ শহরের ৩০০টিরও বেশি স্থানে আয়োজন করা হয়েছিল পাঠ উৎসবের৷ স্কুল, কলেজ, ক্যাফে, লাইব্রেরি, সুইমিং পুলের চত্বর – সবখানেই জমে উঠেছিল বই পাঠের আসর৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন