শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট
আর মাত্র দুই দিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা৷ গত ১৭ তারিখ থেকে সরকারি বিধি অনুযায়ী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বসেছে কোরবানির পশুর হাট৷ তবে করোনার এই ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণেও হাটগুলোতে দেখা গেল না কোনো স্বাস্থ্যবিধির বালাই৷
বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে গরু
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু, ছাগল, মহিষসহ কোরবানির পশু ট্রাক, পিকআপে করে ঢাকার হাটগুলোতে আনা হচ্ছে৷ ট্রাফিক বিভাগ বলছে, এসব বাহন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে, রাজধানীতে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম৷
পরিবহণ খরচ অনেক বেশি
ঢাকার বিভিন্ন হাটের ব্যাপারিরা জানিয়েছেন, কোরবানিতে পশু পরিবহণে তাদের দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে৷ ট্রাকপ্রতি অঞ্চলভেদে খরচ ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা৷ তার উপর পশু যদি বিক্রি না হয়, তাহলে খরচ অনেক বেড়ে যাবে৷ তাই লোকসান হলেও পশু বিক্রি করে যেতে চান তারা৷
পিপিই পরে হাটে
ঢাকার গুলশানের নিকেতন এলাকা থেকে গাবতলি গরুর হাটে এসেছেন ব্যাংকার বেনজির ওয়াহিদ৷ তিনি বলেন, ‘‘একাধিক ব্যাপারির সাথে কথা বলে হতাশ হতে হলো৷ গরুর দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন তারা৷ জানি না আজকে গরু কেনা হবে কিনা৷’’
দাম নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য
এবারের কোরবানির পশুর দাম নিয়ে বিপরীত কথা বলছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা৷ খরিদ্দাররা যে দাম বলছেন, তাতে গরুর ভরণপোষণের খরচই উঠবে না৷ অপরদিকে ক্রেতারা বলছেন, বিক্রেতারা যে দাম হাঁকছেন তাতে এবার আর পছন্দসই গরু কেনা হচ্ছে না৷
মাস্ক নেই
ঢাকার একাধিক কোরবানির হাটে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে ব্যাপারিসহ পশু বিক্রির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের অধিকাংশের মুখেই মাস্ক নেই৷ মাস্ক কেন পরেননি জানতে চাইলে পাবনা থেকে ১১টি গরু নিয়ে আসা মোতাসসেম আলি বলেন, ‘‘একটু আগেই গোসল করলাম, তাই এখনো মাস্ক পরা হয় নাই৷’’
স্বাস্থ্যবিধিতে অনীহা
ঢাকার হাটগুলোতে ঘুরে স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে ঢিলেঢালা চিত্রই পাওয়া গেল৷ কর্তৃপক্ষ মাইকে বারবার স্বাস্থ্যবিধির কথা মনে করিয়ে দিলেও সেদিকে কারো খুব একটা ভ্রূক্ষেপ নেই৷ মাস্ক না পরার কারণ হিসেবে কেউ বলছেন গরমের কথা, কেউ বলছেন করোনায় ভীত না, কেউবা মুচকি হেসে চলে যাচ্ছেন৷
বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ
ঢাকার অন্যতম বৃহৎ কোরবানির পশুর হাট গাবতলিতে গিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং বেসরকারি সংস্থা শক্তি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে হাটে আসা প্রত্যকেকে মাস্কের বিষয়ে সচেত করতে ও বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করতে দেখা গেল৷ সেখানকার ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম জানান, ঢাকার নয়টি এবং চট্টগ্রামের তিনটি হাটে তারা এই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন৷
গরুর গলায় মালা
কোরবানির জন্য পশু কিনে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন এমন একজনকে মালা কিনতে দেখা গেল৷ তিনি জানালেন, ‘‘কোরবানির পশুকে মালা পরিয়ে নিয়ে যাবেন৷ এতে এক ধরনের ঈদের আমেজ কাজ করে, দেখতে ভালো দেখায়, উপরন্তু বাসার বাচ্চারাও খুশি হয়৷’’ জানালেন ১২০ টাকা দিয়ে কিনেছেন একটি মালা৷
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি
ঢাকার গাবতলি হাটকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি জায়গায় পুলিশ ও র্যাবের ওয়াচ টাওয়ার ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ দেখা গেল৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘‘হাটে যেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, সেজন্য আমরা নিয়মিত তদারকি করছি৷’’
হাটে উঠেছে উট এবং দুম্বা
গাবতলি হাটে উট ও দুম্বা দেখতে মানুষ ভিড় করছেন৷ বিক্রেতা আজাদ রহমান জানান, উটটির আনুমানিক ওজন ১৩ মন, দাম চাইছেন ২৫ লাখ৷ অন্যদিকে দুম্বাগুলোর প্রতিটির ওজন দুই মণের মতো আর দাম ৪-৫ লাখ টাকা৷
প্রথমবার হাটে
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো, নুরুজ্জামান ছোট বোন লামিয়া আকতারকে প্রথবারের মতো কোরবানির হাট দেখাতে নিয়ে এসেছেন৷ মাদ্রাসায় চতূর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া লামিয়া জানায়, সে খুব খুশি৷ এত গরু সে আগে কখনো দেখেনি৷ তবে বড় আকারের গরু দেখে ভয়ও পেয়েছে সে৷
জ্যামে অসুস্থ পশু
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোরবানির পশু আনার সময় পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্যাপারি৷ সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে জ্যামে৷ চার ঘণ্টার রাস্তা ১২-১৩ ঘন্টা লাগায় অনেক পশু অসুস্থ হয়ে পড়ছে৷
মানা হচ্ছে না নির্দেশনা
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন থেকে প্রধান সড়কের পাশে কোন ধরনের কোরবানির হাট না বসানোর নির্দেশনা থাকলেও পুরান ঢাকার ধোলাইখালে দেখা গেল সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র৷ সেখানে যানবাহন চলাচলের প্রধান রাস্তা বন্ধ করে বসানো হয়েছে পশুর হাট৷
গরু নেয়ার পালা
ঢাকার গাবতলি থেকে ঈদের তিনদিন আগে গরু কিনেছেন ব্যবসায়ী মো. আমজাদ হোসেন৷ নিয়ে যাচ্ছেন ধানমণ্ডিতে৷ জানালেন, একটু আগেভাগেই গরু কিনেছেন এবার৷ এতে শেষের দিকে দামের অতিরিক্ত কম-বেশির ঝামেলায় পড়তে হবে না৷