1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শুধু আলোবাতাস থেকেই জ্বালানি

২ নভেম্বর ২০২০

প্রচলিত প্রয়োগের বাইরেও সৌরশক্তির আরও অনেক ব্যবহার নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে৷ তবে সূর্যের রশ্মি কাজে লাগিয়ে শুধু বাতাস থেকে বিমান চালানোর জ্বালানি উৎপাদনের সাহসি প্রচেষ্টা সত্যি বিরল৷

https://p.dw.com/p/3kkf9
ছবি: Daniel Roland/AFP/Getty Images

রাইনহার্ড মাই প্রায় ২৫ বছর আগে বিমানে চড়ার রোম্যান্টিক অনুভূতি নিয়ে গান বেঁধেছিলেন৷ কিন্তু আজ পরিস্থিতি বদলে গেছে৷ এখন হয়তো তিনি জলবায়ু পরিবর্তন ও বিমানে ভ্রমণের লজ্জা নিয়ে গান লিখতেন৷ কারণ আকাশ বিমানে ভরে যাচ্ছে৷ দিনের পর দিন আমরা গোটা বিশ্বে সেকেন্ডে ১১,৫০০ লিটার এভিয়েশন ফুয়েল বা তেল পোড়াচ্ছি৷ এভাবে কোটি কোটি বছর ধরে মাটির নীচে চাপা গাছপালা থেকে খনিজ তেলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে জলবায়ু পরিবর্তন প্রক্রিয়া তরান্বিত করছে৷

কিন্তু কোনো কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন করে না, বিমানের জন্য যদি এমন জ্বালানী তৈরি করা যেত, তাহলে কেমন হতো? শুধু পানি, বাতাস ও সূর্যের আলোই যদি তার উপাদান হতো?

জুরিখ শহরের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিক সেই লক্ষ্যেই গবেষণা চলছে৷ ছাদের উপর এক বিশেষভাবে তৈরি সৌর চুল্লি বসানো হয়েছে, যা সূর্যের ঘনিভূত রশ্মির সাহায্যে চারিপাশের বাতাস থেকে জ্বালানী সৃষ্টি করে৷

সেটি আডো স্টাইনফেল্ড ও তাঁর ছাত্রছাত্রীদের সেরা সৃষ্টিকর্ম৷ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই টিম সেই যন্ত্র নিয়ে কাজ করছে৷ সূর্য, বাতাস ও পানি থেকে জ্বালানী তৈরির তত্ত্ব যে সত্যি কার্যকর হতে পারে, এই প্লান্ট তার সাক্ষাৎ প্রমাণ৷

প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বাতাস শুষে নেওয়া হয় এবং তার মধ্য থেকে পানি ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড সংগ্রহ করা হয়৷ তারপর আয়না বসানো ডিশে সূর্যের রশ্মি পুঞ্জিভূত করা হয়৷ এভাবে দুটির মধ্যে একটি রিয়্যাক্টরকে দেড় হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তপ্ত করা হয়৷ এই দুই চুল্লির মূলে রাখা এক ক্যাটালিটিক কনভার্টার রূপান্তরের প্রথম ধাপ সম্ভব করে৷

স্পঞ্জের মতো বৈশিষ্ট্যের এই কনভার্টারের উপর সেরক্সাইড নামের বিরল ধাতুর প্রলেপ থাকে৷ এর মাধ্যমে পানি ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের উপাদানগুলি বিভক্ত করে আবার নতুন করে জোড়া দেওয়া হয়৷ ফলে তথাকথিত ‘সিনগ্যাস' সৃষ্টি হয়৷

হাইড্রোজেন ও কার্বন মনোক্সাইডের এই মিশ্রণ অবশেষে এক ধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এভিয়েশন ফুয়েলের মতো জ্বালানীতে রূপান্তরিত করা যায়৷ এভাবে তৈরি করা কৃত্রিম জ্বালানী ব্যবহার করলে বায়ুমণ্ডলে যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন করা হবে, সেটি তো বাতাস থেকেই নেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার ফলে সমস্যা দূর হবে না৷ জুরিখ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ফিলিপ ফুরলার বরেন, ‘‘এই মুহূর্তে এই প্লান্টে দিনে এক ডেসিলিটারেরও কম জ্বালানী তৈরি হয়৷ অর্থাৎ উৎপাদনের ব্যয় এখনো খুব বেশি৷’’

অন্যদিকে অ্যাটলান্টিক মহাসাগর পেরোতে একটি বিমান সেকেন্ডে প্রায় এক লিটার তেল পোড়ায়৷ অর্থাৎ ঘণ্টায় ৩,০০০ লিটার৷

জুরিখের এই প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে স্পেনে আরও বড় পরীক্ষামূলক প্লান্ট চালু করেছে৷ কিন্তু সেখানেও জ্বালানী উৎপাদনের পরিমাণ অতি সামান্য৷ তবে ‘সান টু লিকুইড’ নামের কৌশল যে বড় আকারেও কার্যকর হতে পারে, এই উদ্যোগ তা প্রমাণ করতে পেরেছে৷

তাহলে এখনই কেন মরুভূমির উপর আরও বড় প্লান্ট তৈরি করা হচ্ছে না? এর ব্যয়ভার হলো মূল সমস্যা৷ পেট্রোলিয়াম থেকে যে এভিয়েশন ফুয়েল তৈরি হয়, তার দাম এখনো যথেষ্ট কম৷ বিমানের টিকিটের প্রায় এক তৃতীয়াংশই জ্বালানীর খরচ মেটাতে চলে যায়৷

ক্রিস্টিয়ান অফনব্যার্গ/এসবি

২০১৮ সালের ছবিঘরটি দেখুন...