শুধু আইন করে কি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পাওয়া যাবে?
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১নির্বাচন কমিশন আইনের দাবিতে যারা বিবৃতি দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য আইনজীবী আমীর উল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, আকবর আলি খান, রাশেদা কে চৌধূরী, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি আব্দুল মতিন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খানসহ বিভিন্ন পেশার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি।
বিবৃতি দাতাদের একজন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন," সংবিধানে নির্বাচন কমিশন আইনের কথা বলা আছে। কিন্তু গত ৫০ বছরেও সেই আইন হয়নি। আইন হলে সেখানে কারা নির্বাচন কমিশনের সদস্য হতে পারবেন, কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবেন তাদের যোগ্যত, সততা, গ্রহণযোগ্যতা এসব বিষয়ে স্পষ্ট আইন থাকবে। তাদের ব্যাপারে প্রকাশ্যে নাগরিকদের জানানো হবে। সে ব্যাপারে নাগরিকেরা কথা বলতে পারবেন। আবার তাদের ক্ষমতা এবং এখতিয়ার নিয়ে আইনে স্পষ্ট উল্লেখ থাকবে। সেরকম আইন হলে স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পাওয়া সহজ হবে। আইন না থাকায় যা হচ্ছে তা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। যাকে খুশি তাকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন হয়। ভোট ছাড়া নির্বাচিত হয়।”
তিনি আরো বলেন,"গত দুই সার্চ কমিটি কোনো আইনের বিষয় নয়। এটা করে ইচ্ছে মত পছন্দের লোককে কমিশনে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।”
তাহলে আইনের ব্যাপারে কারা উদ্যোগ নেবে? সরকার না সুশীল সমাজ কোনো কাঠামো প্রস্তাব করবে? এর জবাবে তিনি বলেন,"সংবিধানে স্পষ্ট করে আইনের ব্যাপারে বলা আছে। সেভাবেই করতে হবে সবার মতামত নিয়ে।”
সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদে এই আইনের কথা বলা হয়েছে,"একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে। উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন।” কিন্তু রাষ্ট্রপতির এই এখতিয়ার সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষ। এখানে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নেবেন। বিবৃতি দাতারা এই শর্তেরও অবসান চান। অন্যদিকে সরকার পক্ষ বলছে সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতি সংবিধান মেনেই করছেন। তাদের কথা সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘বিজ্ঞপ্তি' আইন। রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠন করেন।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন,"সংবিধানে যে নির্বাচন কমিশন আইনের কথা বলা হয়েছে তা করা সময় সাপেক্ষ। ফেব্রুয়ারি মাসেই নতুন কমিশন গঠন করা হবে। এত অল্প সময়ে আইন করে সেই আইনে কমিশন গঠন সম্ভব নয়। নির্বাচনী আইন, আইনের সংস্কার এগুলো হতেই পারে। সংস্কার তো সময়ের দাবি। কিন্তু যারা ৭২-এর সংবিধানের আলোকে নির্বাাচনী আইনের কথা বলছেন তাদের কাছে প্রশ্ন ৭৫-এর ১৫ আগেস্টের পর সবার মধ্যে সেই চেতনা আছে কী না। সবাই সেই আইনের সুবিধা পেতে পারে কী না। এই ধরনের ভোটার, অংশীজন রেখে আইন করে কী হবে!”
তিনি বলেন," এখন যে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হচ্ছে সেটা সাংবিধানিক। কারণ নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। এটা রাষ্ট্রপতি করছেন।”
তিনি মনে করেন," নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নির্ভর করে তাদের সততা ও দক্ষতার ওপর। এখন যারা অপরাধী তারা যদি তাদের পক্ষের কমিশন চায় তাহলে তো হবে না। তারাই এখন সমালোচনা করছেন।”
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু মনে করেন," আইন এখানে মূখ্য বিষয় নয়। যদি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না হয় তাহলে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। এর আগে দুইবার সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলেও তা তাদের পছন্দেই হয়েছে। আর প্রশাসন , পুলিশ তাদের অধীনেই কাজ করেছে। তাহলে নির্বাচন কমিশন আর কী করবে। তাই প্রয়োজন নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন।”
তার মতে,"যদি নির্বাচন কমিশন আইন করাও হয় তাহলে সেটা তো এই সরকার করবে। এই সরকার তো বৈধ নয়। প্রধানমন্ত্রী যেরকম চাইবেন আইন সেরকম হবে। তাহলে সেই আইন দিয়ে কী হবে। আইন সংশোধন করে কোনো লাভ নাই।”
আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে পাঁচ সদসের নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। ২০১৭ সালে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এই কমিশন গঠন করা হয়েছিল। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি আগেই নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নাম চূড়ান্ত করতে হবে। ডিসেম্বরের দিকে সার্চ কমিটি গঠনের কথা শোনা যাচ্ছে। আর নতুন এই নির্বাচন কমিশনই ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করবে।