শিশুরাই ধর্ষণের শিকার
৩ আগস্ট ২০১৫১৬ বছর আগের কথা৷ বাংলাদেশের মানিকগঞ্জে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে নিম্ন
আদালত আসামি শুক্কুরের মৃত্যুদণ্ড দিলেও, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তার রিভিউ রায়ে সাজা কমিয়েছে৷ ধর্ষণের সময় আসামি শুক্কুরের বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর৷ তাই সোমবার তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১২ই জুলাই মানিকগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল শুক্কুরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল৷
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই মামলাটিই প্রমাণ করে যে একটি ধর্ষণের মামলার চূড়ান্ত রায় পেতে ১৮ থেকে ২০ বছর লেগে যায়৷ আর এই দীর্ঘসূত্রিতা ধর্ষণের মামলায় বাদিকে হতাশ করে দেয়৷ অনেকেই মাঝপথে মামলা পরিচালনা থেকে সরে দাঁড়ান৷''
মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর হিউম্যান রাইটস মনিটরিং রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৮ সালে ৪৫৪ জন ধর্ষণের শিকার হয় বাংলাদেশে৷ এদের মধ্যে ২৫২ জন শিশু৷ ২০০৯ সালে ধর্ষণের শিকার ৪৫৬ জনের মধ্যে ছিল ২৪৩ জন শিশু৷ এরপর ২০১২ সালে ধর্ষণের শিকার নারীর সংখ্যা ছিল ২৯৯ জন ও শিশু ৪৭৩ জন৷ ২০১৩ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৭৩ জন, যার মধ্যে ছিল ৩৮৫ জন শিশু৷ আর ২০১৪ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে মোট ৫৫৬ জন৷ এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৩০৮৷
এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এলিনা খান বলেন, ‘‘শিশু ধর্ষণ এবং শিশুর প্রতি যৌন সহিংসতা ক্রমেই বাড়ছে৷ দেশে আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই৷ শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অনেক সময় তো থানায় অভিযোগই করা হয় না৷''
ধর্ষণের ঘটনায় ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার' থেকে যেসব মামলায় সহযোগিতা করা হয়েছে, সেই সব মামলার হিসাব থেকে জানা যায়, ‘‘গত ১০ বছরে ঢাকায় ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৩,৯৮০টি৷ মামলা হয়েছে ১,৫৫৬টি, অথচ শাস্তি হয়েছে মাত্র ৪০টি ঘটনায়৷''
বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণের মামলায় ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বছরের পর বছর মামলা ঝুলতে থাকে৷ মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মামলা ঝুলে থাকার কারণেই অভিযোগ প্রমাণ করাও কঠিন হয়ে পড়ে৷ আলামত নষ্ট হয়ে যায়৷ এছাড়া দীর্ঘদিন মামলা চালিয়ে নেয়ার আর্থিক সক্ষমতা থাকে না অনেক পরিবারের৷''
গত শনিবার ঢাকার মিরপুর এবং রায়েরবাগে একই দিনে দু'টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়৷ চলতি বছরে এ পর্যন্ত শুধু ঢাকায় অন্তত ৩০টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে পুলিশের সূত্র জানিয়েছে৷ তবে নূর খান বলেন, ‘‘শিশুর প্রতি যৌন সহিংসতার প্রকৃত ঘটনা আরো বেশি৷ কারণ অনেক ঘটনাই স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হয়৷ আবার কেউ কেউ শিশুর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে থানায় অভিযোগ করেন না৷''
ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের আইনজীবী ফাহমিদা খাতুন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘দেখা গেছে, সাধারণভাবে ১০ বছরের নীচে শিশুরা ধর্ষণের শিকার হলে বাবা-মা টাকার বিনিময়ে মীমাংসা করে ফেলেন৷ এখানেই শেষ নয়, ১০ বছরের ওপরে মেয়েদের সঙ্গে ধর্ষকের বিয়ের ঘটনাও ঘটে অহরহ৷''
‘‘শিশুরা সবচেয়ে দুর্বল আর তারা প্রধানত তাদের পরিচিত আত্মীয়স্বজনের হাতেই যৌন সহিংসতার শিকার হয়'', জানান অ্যাডভোকেট এলিনা খান৷ তিনি বলেন, ‘‘আইনের সঠিক প্রয়োগের পাশাপাশি শিশু ধর্ষণ প্রতিরোধে দরকার ব্যাপক সচেতনতা৷''