শিশুর অ্যালার্জি ঝুঁকি কমাতে চাই জীবাণুর সঙ্গে আলাপ
২৩ মে ২০২৩এক সদ্যোজাত শিশুর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তার বেড়ে ওঠার কাহিনি শুনতে কেমন লাগবে? সে বলছে, তোমরা আমাকে দেখো! মাত্র আট মাস বয়স হলেও চারিপাশের পরিবেশ আমার সঙ্গে কত কী না করেছে৷ অ্যালার্জির ক্ষেত্রেও কিছু কম ঘটেনি৷
এবার ঘর পরিষ্কার করতে মা আসছে৷ কিন্তু মা কি জানে, সে আসলে কী করছে? আমার ইমিউন সিস্টেমের অনেক খোরাকের প্রয়োজন৷ ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মাধ্যমে মা যেন আবার সেগুলি সরিয়ে না ফেলে৷
এখানে চারিদিকে জীবাণু – ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক৷ কিন্তু বেশিরভাগ জীবাণুই আমার কোনো ক্ষতি করে না৷ আর ধুলা তো নয়ই৷ কী সুন্দর উড়ে বেড়ায়!
ক্ষমতা থাকলে মা-কে সেটাই বলতাম৷ পরিষ্কার করার সময় বেশি বাড়াবাড়ি কোরো না! কারণ, আমার ইমিউন সিস্টেম ও আমাকে তো ভালো ও মন্দের মধ্যে ফারাক করা শিখতে হবে৷
জানি মা, তুমি আমার ভালোর জন্যই এমনটা করছো৷ কিন্তু ভবিষ্যতে নানা পদার্থে অ্যালার্জি এড়াতে এখনই আমাকে আরও বেশি করে সবকিছু পরখ করে দেখতে দাও৷
আমার বাবা-মা আসলে অনেক কিছুই একেবারে ঠিকমতো করছে৷ খাওয়ার সময় তো বটেই! অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ আমার সবচেয়ে প্রিয়৷ তবে অ্যালার্জি এড়াতে আমাকে যত আগে সম্ভব অন্যান্য খাবারও চেখে দেখতে হবে৷ কারণ অ্যালার্জি মোকাবিলার লক্ষ্যে অন্ত্রের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ চলে৷
সেখানে কোটি কোটি ব্যাকটিরিয়া বাস করে এবং তারাই ভবিষ্যতে আমার কোন অ্যালার্জি হবে, তাও কিছুটা স্থির করে৷ সেটা কীভাবে সম্ভব? আমি বুঝিয়ে বলছি৷
আলো জ্বালিয়ে আমার কোলনের আজকের অবস্থা দেখাই৷ জন্মের সময় আমার কোলন প্রায় জীবাণুমুক্ত ছিল ছিল৷ সেখানকার একেবারে প্রথম বাসিন্দারা ছিল আমার মায়ের ভ্যাজাইনাল ফ্লোরার ব্যাকটেরিয়া৷ তারা আমার ইমিউন সিস্টেমের কাছে বেশ ভালোভাবে নিজেদের পরিচয় জানিয়ে দিয়েছিল৷ মায়ের বুকের দুধের ব্যাকটিরিয়াও তাই করেছে৷
তারপর বোতল, প্লেট, মেঝে থেকে আরো বেশি জীবাণু আসতে লাগলো৷ কত রকমের, কত বৈচিত্র্যের ব্যাকটিরিয়া ও ছত্রাক৷ সেগুলি অন্ত্রের দেওয়ালে ইমিউন কোষকে বাইরের জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়, সেখানে কী করার অনুমতি আছে, তাও জানিয়ে দেয়৷
আমার মতো কয়েক হাজার সদ্যোজাত শিশুর উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, যে আমার অন্ত্রে নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটিরিয়া না থাকলে ভবিষ্যতে আমার অ্যালার্জেটিক অ্যাস্থমা হবার আশঙ্কা বেড়ে যায়৷ তবে কোন কোন ব্যাকটিরিয়া জরুরি, দুর্ভাগ্যবশত এখনো তা জানা যায় নি৷ সেগুলির সংখ্যা কিন্তু একেবারেই কম নয়৷ কিন্তু কোন কাজটা যে একেবারেই করা উচিত নয়, সেটা জানা গেছে৷
অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া ঠিক নয়৷ কারণ সেই ওষুধ শরীরে মধ্যে অনেক উপকারী জীবাণু নষ্ট করে এবং ‘গাট ফ্লোরা' তছনছ করে দেয়৷ অবশ্যই সত্যি বেশ অসুস্থ হলে আমিও অ্যান্টিবায়োটিক খেতে পছন্দ করি৷
মা ঠিকই আমার দেখাশোনা করে৷ মা কিন্তু নিজের অ্যালার্জি এড়াতে বিশেষ কিছু করতে পারে না৷ শুধু ভালো ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করিয়ে কিছুটা রদবদল করতে পারে৷ সেটা এভাবে ঘটে৷
ভালো ব্যাকটেরিয়া জটিল কার্বোহাইড্রেট থেকে বিশেষ ফ্যাটি অ্যাসিড সৃষ্টি করে, যা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে৷ এমন কার্বোহাইড্রেট সেই সব খাদ্যের মধ্যে থাকে, যেগুলি ভালো করে চিবোতে হয়৷ যেমন হোলমিল, বাঁধাকপির আচার, বাদাম ইত্যাদি৷ তখন শুধু চোয়াল নয়, অন্ত্রকেও কাজ করতে হয়৷ সেটা অন্ত্রের জন্য ভালো৷
আন্ত্রিক ব্যাকটিরিয়া ঠিক কীভাবে অ্যালার্জির উপর প্রভাব রাখে, বড়রা তা নিয়ে এখনো গবেষণা করছে৷
আংগেলা সমার/এসবি