শিল্পক্ষেত্রে পানি পরিশোধনের অভিনব উদ্যোগ
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯প্লাস্টিক উৎপাদনের সময় শীতল করার প্রক্রিয়ায় অনেক পানির প্রয়োজন হয়৷ নেদারল্যান্ডসের একটি কারখানা পাম্পের মাধ্যমে মাটির নীচ থেকে পানি উত্তোলন করে না, বরং বাইরে থেকে পানি কিনে এক বার ব্যবহার করে সমুদ্রে ফেলে দেয়৷ পানি বিশেষজ্ঞ নিল্স খ্রোট বলেন, ‘‘বছরে আমাদের প্রায় ২ কোটি কিউব মিঠা পানির প্রয়োজন হয়৷ সেটা এখানে কিছুটা সমস্যা বটে, কারণ গোটা এলাকা আসলে সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত৷ ফলে ভূগর্ভস্থ পানি বেশ লবণাক্ত৷''
লবণাক্ত পানি যন্ত্রপাতি নষ্টকরতে পারে৷ তাই কোম্পানিগুলির পক্ষে পানি পরিশোধন করার তুলনায় মিঠা পানি কেনা অনেক সস্তা৷ এক ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পের আওতায় সেই পরিস্থিতি বদলানোর চেষ্টা চলছে৷ একটি পরীক্ষামূলক প্লান্টের মধ্যে একাধিক প্রক্রিয়ায় পানি থেকে লবণসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থ দূর করার হচ্ছে৷ পানি পরিশোধনবিশেষজ্ঞ ভিলবার্ট ফান ডেন ব্রুক বলেন, ‘‘প্রথমে আমরা লামেলা সেপারেটরের মাধ্যমে পানির মধ্য থেকে কঠিন বস্তু দূর করার চেষ্টা করি৷ তারপর দু'টি ভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে পানি থেকে লবণ দূর করা হয়৷''
গবেষকরা উন্নত ন্যানো ফিল্টার ও আধুনিক মেমব্রেন প্রযুক্তি পরীক্ষা করছেন৷ শিল্পক্ষেত্রে পানির পুনর্বব্যহার প্রক্রিয়া আরও দক্ষ ও সস্তা করে তোলাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ পানি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ পেটার কাউভেনবার্গ বলেন, ‘‘প্রচলিত মেমব্রেন ফিলট্রেশন ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে বড়জোর ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পানি পুনর্বব্যহারের যোগ্য করে তোলা যায়৷ এই প্রযুক্তির সাহায্যে তা বাড়িয়ে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশে আনা সম্ভব৷''
এই মেমব্রেন প্রণালী জলীয় বাষ্প প্রবেশ করতে দেয় এবং লবণ ধরে রাখে৷ কিন্তু সেগুলির আয়ু বড় কম৷ তাই সেগুলি আরও কার্যকর করে তোলার উদ্যোগকে চূড়ান্ত অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে৷ টেকনিকাল মাইক্রোবায়োলজিস্ট ক্রিস্টিনা ইয়ুংফার বলেন, ‘‘শিল্পক্ষেত্রের একাধিক সুবিধা রয়েছে৷ প্রথমত, এটি আরও পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়া৷ কারণ এর মাধ্যমে পানি সাশ্রয় সম্ভব হয়৷ তাছাড়া মিঠা পানির উৎসের উপর নির্ভর করতে হয় না৷ নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে জ্বালানি সাশ্রয়ও সম্ভব হয়৷ ফলে এমন পরিস্থিতি একইসঙ্গে শিল্পক্ষেত্র ও প্রকৃতির জন্য ইতিবাচক৷''
বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্ক বন্দরে প্লান্টগুলিতে তাদের নিজস্ব উৎপাদন প্রক্রিয়ার জন্য উপযুক্ত করে পরিশোধনের সরঞ্জাম ও পদ্ধতি পরস্পরের মধ্যে সমন্বয় করা হচ্ছে৷ কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কার্লস নেগ্রো মনে করেন, ‘‘গোটা প্রক্রিয়ার একেবারে শেষে পানি পরিশোধন না করে রিসাইক্লিং-কে তার অংশ করে তোলাই হলো উদ্দেশ্য৷ তাই কারখানা অনুযায়ী পানি পরিশোধনের প্রণালী স্থির করা হয়৷
একটি ক্লোরিন কারখানা কাছের রাসায়নিক কোম্পানিগুলি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে৷ তারপর বেশ কয়েকটি আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে তা থেকে শুদ্ধ পানি ও ব্যবহারযোগ্য উপাদান সৃষ্টি করা হয়৷ কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ার সাবিনে টাবের্ট বলেন, ‘‘আমরা বলি, এটা মোটেই জঞ্জাল নয়৷ অবশ্যই তা পুনর্ব্যবহার করতে হবে, কারণ সেটি অন্যদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী৷ অদূর ভবিষ্যতে পানির মূল্য অনেক বেড়ে যাবে৷ তাই আগামীকালের সমস্যা আমাদের আজই সমাধানের চেষ্টা করতে হবে৷''