শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করা: বিশিষ্টজন ও সংগঠনের প্রতিক্রিয়া
সম্প্রতি কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ করানোর ঘটনা ঘটেছে৷ এই সময় অনেককে শারীরিকভাবেও হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে৷ এসব ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্টজনেরা৷
‘ফল ভালো হবে না’
শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ করানোর ঘটনা ভালো কোনো বিষয় নয় বলে মন্তব্য করেছেন এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী৷ ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, ‘‘এটা অবশ্যই কোনো ভালো বিষয় না৷ শিক্ষকদের জায়গা তো মর্যাদার- সেটাই যদি না থাকে, তাহলে শিক্ষা কীভাবে এগুবে? আগে তো এমন পরিস্থিতি দেখিনি৷ এবারই দেখছি৷ এর ফল কোনোভাবেই ভালো হবে না৷’’
‘দ্রুত বন্ধ হওয়া উচিত’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক মনে করেন, যেটা হচ্ছে, ভালো হচ্ছে না৷ ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, ‘‘আসলে গত ১৫ বছরে সবকিছুতেই অবক্ষয় হয়েছে৷ শিক্ষকরা তো সমাজের বাইরের কেউ নন৷ তাদের উপরও দলীয় রাজনীতির প্রভাব পড়েছে৷ ফলে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে৷ শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ করানোর ঘটনা দ্রুত বন্ধ হওয়া উচিত৷’’
‘এভাবে পদত্যাগ সমর্থন করি না’
ইউনিভাসির্টি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি ওবায়দুল ইসলাম ডিডাব্লিউকে জানান, ‘‘শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনায় আমরা একটা বিবৃতি দিয়েছি, সেখানে এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে কথা বলেছি৷ আমরা এভাবে পদত্যাগকে সমর্থন করি না৷ কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটার বিচার হতে পারে৷’’
‘ক্ষোভ থেকে করলে ঠেকাবেন কীভাবে?’
বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য জোটের সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘আমরা এইসব ঘটনার প্রতিবাদ করেছি৷ তবে এ কথাও মনে রাখতে হবে, ১৫ বছর যেভাবে অত্যাচার, নির্যাতন হয়েছে তার রেশ কিছু পড়বেই৷ এখনো স্কুল-কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য যারা আছেন, তারা আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়োগ করা৷ যা হচ্ছে, সেটা তারাই করছেন৷ আর শিক্ষার্থীরা যদি ক্ষোভ থেকে কিছু করে, সেটা আপনি ঠেকাবেন কীভাবে?’’
জড়িতদের শাস্তির দাবি জন্মাষ্টমী পরিষদের
২৪ আগস্ট চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার সেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানকে অসম্মান ও জোর করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যেটি জাতির বিবেককে নাড়া দিচ্ছে৷ পরিষদ এসব অপরাধের তীব্র নিন্দা এবং জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছে বলেও জানান তিনি৷
‘শিক্ষার্থী ও প্রভাবশালীরা পদত্যাগ করাচ্ছেন’
জাতীয় ছাত্র পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক এলাহান কবীর এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও প্রভাবশালীরা জোরপূর্বক শিক্ষকদের পদত্যাগ করাচ্ছেন৷ বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক৷ আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি৷ দেশে আইন-আদালত আছে৷ যদি কেউ অন্যায় করে থাকেন, তাহলে আইন অনুযায়ী বিচার হবে৷ কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে বেআইনিভাবে কাউকে পদত্যাগ করানো কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়৷’’
শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বলপ্রয়োগ না করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ৷ ২৫ আগস্ট তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের কারো বিরুদ্ধে ন্যায়সংগত অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করে অস্থিরতা সৃষ্টি করলে প্রশাসন ভেঙে পড়তে পারে৷ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পেতে অসুবিধা হবে৷
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি
২৭ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, কিছু বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও বিদ্যালয়ে যে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা মোটেও কাম্য নয়৷ বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সার্বিক পরিবেশ বজায় রাখার বিষয়টি তদারকি ও প্রয়োজনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগকে অবহিত করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷