শপথ নিলেন দ্রৌপদী মুর্মু
২৫ জুলাই ২০২২ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকলো ভারত। স্বাধীনতার ৭৫তম বছরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন একজন আদিবাসী নারী। ভারতের সর্বোচ্চ পদে দ্রৌপদী মুর্মুদ্বিতীয নারী হিসেবে শপথ গ্রহণ করলেন।
বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের শুরুতে সাঁওতালি ভাষায় সকলকে সম্ভাষণ জানান দ্রৌপদী। 'জহর, নমস্কার' বলে সংসদভবনের সেন্ট্রাল হলে বক্তৃতা শুরু করেন দ্রৌপদী। দেশের অগণিত মানুষকে ভাই-বোন সম্বোধন করে তিনি বলেন, দেশ প্রমাণ করল, স্বপ্ন দেখলে হতদরিদ্র মানুষও ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছাতে পারে। কোনো বাধাই তার সামনে বাধা নয়। তার রাষ্ট্রপতি হওয়া বহু মানুষকে সল্বপ্ন দেখাবে বলে তিনি মনে করেন। শুধু দরিদ্র নয়, তার উত্তরণ দেশের আপামর নারীকে স্বপ্ন দেখাবে বলেও তিনি মনে করেন। মেয়েদের উন্নযনের জন্য তিনি কাজ করবেন বলে এদিন জানিয়েছেন নতুন রাষ্ট্রপতি।
ওড়িশার এক প্রত্যন্ত প্রান্ত থেকে উঠে এসেছেন দ্রৌপদী। ওড়িশার মযূরভঞ্জ জেলায় তার জন্ম। হতদরিদ্র সাঁওতাল পরিবারের এই নারী দাঁতে দাঁত চেপে পড়াশোনা করেছেন। তার স্বামী এবং দুই সন্তান প্রয়াত। কিন্তু হাল ছাড়েননি দ্রৌপদী। রাজনীতিতে নেমেছেন। কাউন্সিলর হয়েছেন। ওড়িশা সরকারে মন্ত্রীর দাযিত্ব সামলেছেন। শুধু তা-ই নয়, ঝাড়খন্ডের রাজ্যপালের দাযিত্ব সামলেছেন।
রাজনৈতিকভাবে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। বিজেপির প্রার্থী হিসেবেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মনোনীত হন তিনি। তার বিপক্ষে ছিলেন দুঁদে রাজনীতিক যশবন্ত সিনহা। একসময় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী ছিলেন তিনি। বিরোধীপ্রার্থী যশবন্তকে বিপুল ভোটে হারিয়ে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন দ্রৌপদী। বিরোধীদের একাংশের ভোটও পেয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, দ্রৌপদীর এই জয় পিছিয়ে পড়া সাঁওতাল জনগোষ্ঠীকে উত্তরণে সাহায্য করবে। বিজেপিও বিভিন্ন জায়গা একথা প্রচার করছে। কিন্তু বিশ্লেষকদের অন্যপক্ষের মতে, বাস্তবে এমন হয় না। একজন প্রতিনিধিকে সামনে রেখে গোটা জনজাতির উন্নয়ন হয় না। তার জন্য নিরলসভাবে কাজ করতে হয়। ৭৫ বছরে সে কাজ খুবই কম হয়েছে। বর্তমান সরকারও জনজাতিদের নিয়ে উদাসীন।
ইতিহাসবিদ সাযন্তন দাস ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''বিজেপির আমলে আবদুল কালাম রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। কিন্তু তাতে সংখ্যালঘুদের প্রতি গেরুয়া শিবিরের নীতির বদল হয়নি। এক্ষেত্রেও সেই একই কথা প্রযোজ্য। এগুলো এক ধরনের গিমিক।'' তবে একই সঙ্গে সায়ন্তন জানিয়েছেন, তিনি খুশি, একজন আদিবাসী নারী ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। এর ফলে ভারতের ইতিহাসের ধারা রাতারাতি বদলে যাবে না ঠিকই, কিন্তু পদক্ষেপটি জরুরি এবং আনন্দের।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই, এএনআই)