ল্যাটিন অ্যামেরিকার সবচেয়ে বড় বইমেলা ‘‘ফেরিয়া ডে লিব্রোস’’
৪ মে ২০১০আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনোস আইরেস এখন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে৷ একেবারে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর৷ একদিকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ল্যাটিন অ্যামেরিকার সবচেয়ে বড় বইমেলা, অন্যদিকে আর্জেন্টিনার স্বাধীনতার দ্বিশতবার্ষিকী উপলক্ষে চলছে গান, বাজনা, থিয়েটার, সাহিত্যপাঠের আসর৷ বইমেলার পরিচালক রুডল্ফো হামাভি এ প্রসঙ্গে বলেন: ‘‘আমরা প্রতিদিন একজন করে সম্মানিত অতিথিকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি৷ স্বাধীনতার ২০০ বছর পর আর্জেন্টিনার সংস্কৃতিকে বিশেষভাবে সম্মান জানানো আমাদের উচিত৷ ২০ জন আর্জেন্টেনীয় লেখককে আমরা বক্তৃতা, আলোচনা অনুষ্ঠান, সংগীত ও থিয়েটার প্রদর্শনীতে এনে আমরা সেই সম্মানই দেখাতে চাই একই সঙ্গে দর্শকদের আর্জেন্টিনার সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই৷''
দর্শকরা এজন্য কৃতজ্ঞ৷ তাদের কাছে বুয়োনোস আইরেসে অনুষ্ঠিত ৩৬তম এই বইমেলা যেন এক উৎসব৷ মেলা দেখতে আসা এক শিক্ষিকা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন: ‘‘আমি একজন শিক্ষিকা৷ মেলাটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়৷ বই পড়াকে মানুষ বেশ অবহেলা করেছে৷ এই মেলা তা কিছুটা দূর করবে, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে আমাদের কাছে নিয়ে আসবে৷' '
‘‘ফেরিয়া ডে লিব্রোস'' যেন এক বিশাল, বর্ণাঢ্য ও প্রাণবন্ত গ্রন্থাগার৷ ৪০টি দেশের ১৩০০ প্রদর্শক উপস্থিত হয়েছেন এই মেলায় তাঁদের রকমারি বই পুস্তক নিয়ে৷ নতুন প্রকাশিত বই'এর পাশাপাশি রয়েছে আগেকার ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থাবলী৷ শোভা পাচ্ছে উপন্যাস, কবিতা ও বিষয়ভিত্তিক পুস্তক৷ ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার প্রধান ইউর্গেন বোস এ প্রসঙ্গে বলেন: ‘‘এই মেলার রয়েছে সম্পূর্ণ আলাদা এক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য৷ এটি বিশেষ করে দর্শকদের মেলা, যে সংখ্যাটা ১২ লক্ষেরও বেশি৷ ফ্রাঙ্কফুর্ট বই মেলার তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বিশালত্ব এই মেলার৷ ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় ব্যবসা বাণিজ্যটাই হল মূল বিষয়৷ তার পাশাপাশি চলে সাহিত্যচর্চা৷ এখানে সম্পূর্ণ উল্টো৷ এটা মূলত বিশাল এক সাহিত্য উৎসব, বুয়েনোস আইরেস শহরের জন্য এক বিশেষ উৎসব৷ আর এই উৎসবকে ঘিরেই চলে ব্যবসা বাণিজ্যের কিছু আলাপচারিতা৷''
এই মেলার আর একটি বিশেষত্ব, এটি ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার জন্য যেন এক মহড়া৷ জার্মানিতে প্রতি বছরের মত এবছরও অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা, যেখানে অতিথি দেশ হিসাবে যোগ দিচ্ছে আর্জেন্টিনা৷ দেশটি সাহিত্যের পুরানো কিছু নিদর্শন ছাড়াও নতুন প্রকাশিত বইপুস্তক তুলে ধরতে আগ্রহী৷ তাই বইগুলি যথা সময়ে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করার জন্য বিশেষ কর্মসূচি নেয়া হয়েছে৷ বোস বলেন: ‘‘আমরা গত কিছুদিন ধরে বেশ কিছু সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি৷ এক্ষেত্রে নানারকম কর্ম তৎপরতা চলছে, যাতে আমরা খুবই সন্তুষ্ট৷ ইতোমধ্যে ২৩০টি বই বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে৷ কোনো এক অতিথি দেশের জন্য এটা একটা রেকর্ড৷''
বুয়েনোস আইরেসের বইমেলায় জার্মান স্টলটা নানারকমের রচনাবলীতে পরিপূর্ণ৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে রোম্যান্টিক ধারার সাহিত্য, বিশেষ করে জার্মান লেখক ও দার্শনিক রুয়ডিগার জাফরান্সকি'র ‘‘রোম্যান্টিক - একটি জার্মান অ্যাফেয়ার'' বইটি পাঠকদের আগ্রহ জাগিয়েছে৷ রুয়ডিগার জাফরান্সকি এ প্রসঙ্গে বলেন: ‘‘আমি লক্ষ্য করেছি, যারা আমার বই'এর ব্যাপারে আগ্রহী, তারা সাহিত্যে ইউরোপীয় ধারাটা এমনভাবে গ্রহণ করেন যে, অন্য দিকটা অবহেলিত হয়ে পড়ে৷ যেমন ল্যাটিন অ্যামেরিকার খ্যাতনামা লেখক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের লেখায় কল্পবাস্তববাদ কীভাবে ফুটে উঠেছে, তার ওপর আলোচনা করা যেতে পারে৷ কিন্তু না ইউরোপীয় দৃষ্টিভঙ্গির ভেতর মানুষ এমন ভাবে নিমজ্জিত হয়, যেখানে অন্য কিছুর স্থান থাকেনা৷''
প্রতিবেদক : রায়হানা বেগম
সম্পাদক : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক