1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত মহুয়া মৈত্র

৮ ডিসেম্বর ২০২৩

তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হলো৷ লোকসভায় ধ্বনিভোটে বহিস্কারের প্রস্তাব গৃহীত হয়৷

https://p.dw.com/p/4ZvJt
তৃণমূল নেত্রী মহুয়া মৈত্র।
লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। ছবি: Prabhakar Mani Tewari/DW

এই প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটির সময় অধিকাংশ বিরোধী দল লোকসভায় ছিল না৷ তারা ওয়াকআউট করে চলে যায়৷ তবে সব বিরোধী দল একসঙ্গে ভোট দিলেও মহুয়াকে নিয়ে সিদ্ধান্ত বদল হত না৷ কারণ, লোকসভায় বিজেপি ও তার শরিকদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে৷

মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি লোকসভা সাংসদ হিসাবে পাওয়া আইডি ও পাসওয়ার্ড দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানি-সহ অন্যদের দিয়েছেন৷ তারা মহুয়ার নামে প্রশ্ন জমা দিয়েছেন৷ যেটা নিয়মানুযায়ী তারা করতে পারেন না৷ তাছাড়া দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে তিনি অর্থ-সহ নানা সুযোগসুবিধা নিয়েছেন৷ অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছেন মহুয়া৷ এথিক্স কমিটির রিপোর্টে তাই মহুয়াকে বহিষ্কার করার কথা বলা হয়েছে৷

এথিক্স কমিটির রিপোর্ট শুক্রবার লোকসভায় পেশ করা হয়৷ তারপর এই রিপোর্ট নিয়ে আধঘণ্টা আলোচনার পর মহুয়াকে বহিষ্কারের প্রস্তাব পাস হয়৷

লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর মহুয়া বলেছেন, ‘‘কোনো অর্থের লেনদেন হয়েছে, তার কোনো প্রমাণ নেই৷ আমি লোকসভার নিয়মাবলী ভালো করে পড়েছি৷ সেখানে আইডি, পাসওয়ার্ড শেয়ার করা যাবে না, এমন কোনো কথা বলা হয়নি৷ মোদী সরকার যদি মনে করে, এভাবে মুখ বন্ধ করতে পারলে তারা আদানির বিষয়টি থেকে বাঁচবে, তাহলে তারা ভুল করছে৷''

মহুয়া যখন সাংবাদিকদের এই কথা বলছেন, তখন তার পিছনেই দাঁড়িয়ে সোনিয়া গান্ধী-সহ কংগ্রেস ও বিরোধী নেতানেত্রীরা৷ তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘ইন্ডিয়া জোটের যত রাজনৈতিক দল ছিল, সকলেই একজোট হয়ে মহুয়াকে সমর্থন করেছে এবং গান্ধীমূর্তির সামনে এসে বিক্ষোভ দেখিয়েছে৷''

এবাবেই মহুয়াকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করার বিষয়টি বিজেপি বনাম বিরোধী লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে এবং রাজনৈতিক চরিত্র পেয়ে গেছে৷

মহুয়াকে বলতে দেয়া হয়নি

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘‘তৃণমূলের পক্ষ থেকে মহুয়া লোকসভায় বলবেন৷ যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাকে বলতে দেয়া উচিত৷'' তখন স্পিকার ওম বিড়লা বলেন, ‘‘২০০৫ সালে ১০ জন সাংসদের বিরুদ্ধে ক্যাশ ফর কোয়ারির অভিযোগ ওঠে৷ এথিক্স কমিটি রিপোর্ট দেয়৷ তখন লোকসভায় ওই সাংসদদের বলতে দেয়ার দাবি উঠেছিল৷ কিন্তু তৎকালীন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, সাংসদরা কমিটির কাছে তাদের কথা বলেছেন৷ লোকসভায় আর তারা বলতে পারবেন না৷''

ওম বিড়লা জানান, তিনি সাবেক স্পিকারের রুলিং অনুসরণ করছেন৷ এটাই সংসদের রীতি৷

তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘‘মহুয়ার জবাব দেয়ার সাংবিধানিক অধিকার আছে৷ বলা হয়েছে, টাকার লেনদেন হয়েছে৷ প্রমাণ কোথায়? কত টাকার লেনদেন হয়েছে?''

রিপোর্টে যা বলা হয়েছে

এথিক্স কমিটির রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে, মহুয়া গুরুতর অপরাধ করেছেন, তাকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা উচিত৷ তার বিরুদ্ধে আইনি তদন্ত করা উচিত৷ আর যে টাকার লেনদেন হয়েছে, তা খুঁজে বের করা উচিত৷

অভিযোগ কী?

বলা হয়েছে, মহুয়া তার সাংসদ হিসাবে লোকসভায় লগ ইন করার ক্রেডেন্সিয়াল দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানিকে দিয়ে দিয়েছিলেন৷ দুবাই থেকে বহুবার লগ ইন করা হয়েছে৷ সরকারের বিরুদ্ধে মহুয়ার নামে প্রশ্ন জমা পড়েছে৷ অভিযোগ, মহুয়া প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার জন্য দুই কোটি টাকা পেয়েছেন৷ এই অভিযোগ মহুয়া বারবার অস্বীকার করেছেন৷

অভিযোগ, মহুয়ার ১৪টি বিদেশ সফরের কোনো হিসাব নেই৷

বিজেপি সাংসদ হীনা গাভিত লোকসভায় বলেছেন, ‘‘এপর্যন্ত ১৩জন সাংসদকে দুর্নীতির জন্য লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে৷ হীরানন্দানির পাঁচটি ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক স্বার্থ হয়েছে৷ মহুয়া লোকসভায় ৬১ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছেন৷ ৫০টি প্রশ্ন এই পাঁচ সেক্টর নিয়েই৷ ৪৭ বার দুবাই থেকে অ্যাকাউন্ট লগ ইন করা হয়েছে৷ ছয়বার যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, নেপাল থেকে লগ ইন করে প্রশ্ন দেয়া হয়েছে৷''

তিনি জানিয়েছেন, ‘‘মহুয়া নিজেই বলেছেন, তিনি এই লগ ইন পাসওয়ার্ড হীরানন্দানিকে দিয়েছেন৷ হীরানন্দানির হলফনামা এথিক্স কমিটির কাছে আছে৷ দিল্লি, দুবাই, বেঙ্গালুরু ও অ্যামেরিকা থেকে একইদিনে অ্যাকাউন্ট লগ ইন করা হয়েছে৷ যা গোপন রাখার কথা, তা  মহুয়া চারজনকে শেয়ার করছেন৷ মহুয়ার জন্য সব সংসদের ভাবমূর্তি খারাপ হয়েছে৷''

মহুয়ার মুখে নজরুল

শুক্রবার সংসদ ভবনে ঢোকার মুখে মহুয়া কাজী নজরুল ইসলামের কবিতাও বলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় নজরুলের একটি কবিতা আছে, ‘অসত্যের কাছে কভু নত নাহি কর শির/ ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ, লড়ে যায় বীর৷'' মহাভারতের প্রসঙ্গ তুলে মহুয়ার দাবি, ‘‘এরা বস্ত্রহরণ শুরু করেছে৷ এবার মহাভারতের যুদ্ধ হবে৷''  মা দুর্গা এসে গেছে বলে তিনি সংসদ ভবনের ভিতরে ঢুকে যান৷

রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া

তৃণমূল তো বটেই, বিরোধী দলগুলি মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে৷ লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘এরকম প্রতিহিংসার রাজনীতি কেন হবে? একটা নজির তৈরি করা হচ্ছে৷ আজ তো কলঙ্কের দিন৷''

লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, ‘‘কেন এত তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে৷ শুক্রবার হলো লোকসভায় প্রাইভেটস মেম্বারস ডে৷ এই দিন অনেক সাংসদ নিজের ফিরে যান৷ মনে হচ্ছে, রাজনৈতিক শত্রুতার জন্যই এরকম করা হচ্ছে৷''

কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বলেছেন, ‘‘কমিটি উপযুক্ত পদ্ধতিও অনুসরণ করেনি৷ আড়াই মিনিটে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ মহুয়াকে নিজের কথা বলতে দেয়া হয়নি৷''

কংগ্রেস নেতা কার্তি চিদম্বরমের মন্তব্য, ‘‘এর ফলে মহুয়া আরো ৫০ হাজার ভোট বেশি পাবেন৷''

বিজেপি-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘শূর্পনখার জন্য মহাভারত হয়নি৷'' নাম না করে তিনি মহুয়াকে শূর্পনখার সঙ্গে তুলনা করেছেন৷

বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘ভারতের সুরক্ষার সঙ্গে কেউ আপস করলে সেটা ভয়ংকর বিষয়৷ তাই আমরা শাস্তি চাই৷''

‘রাজনৈতিক মোকাবিলা'

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘বিষয়টি রাজনৈতিক রূপ নিয়েছে । বিরোধীরা রাজনৈতিকভাবে এর মোকাবিলা করছে৷ বিজেপি-ও এর থেকে রাজনৈতিক লাভ পাওয়ার চেষ্টা করবে৷''

জিএইচ/জেডএইচ (সংসদ টিভি)