লাভ প্যারেড দুর্ঘটনা: জার্মান সরকারি কৌঁসুলির তদন্ত
২৬ জুলাই ২০১০ডুইসবুর্গের লাভ প্যারেড টেকনো সঙ্গীতোৎসবে সংঘটিত শনিবারের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১৯ জন, আহতের সংখ্যা ৩৪০ জনের বেশী৷ কর্তৃপক্ষ রবিবারেও দুর্ঘটনার কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি৷ট্র্যাজেডিটা ঘটে উৎসব প্রাঙ্গণে প্রবেশের একমাত্র পথ একটি টানেলের মুখে৷ তবে নিহতদের অধিকাংশকে টানেলের মুখে টানেল থেকে মাঠে ওঠার ব়্যাম্পটির কাছে পাওয়া গেছে, টানেলের ভিতরে নয়, বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷
জার্মান জনমত এবং বহির্বিশ্বের সমালোচনা এখন একটি বুনিয়াদী প্রশ্ন নিয়ে: লাভ প্যারেডের মূল অনুষ্ঠানটি যে পুরনো রেলওয়ে সাইডিং-এ অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে বড় জোর আড়াই লাখ লোক ধরে, বলে সরকারি নথিপত্রেই রয়েছে৷ অথচ শনিবার সেখানে এসেছিল ১৪ লাখ মানুষ৷ লাভ প্যারেডের আয়োজকরা নাকি পাঁচ লাখ দর্শক প্রত্যাশা করছেন, বলে লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন৷ আয়োজকদের বক্তব্য, লাভ প্যারেড মোদীদের সকলেই যে অনুষ্ঠানস্থলে আসার চেষ্টা করবে, সেটা তারা ভাবতে পারেননি৷
জার্মান পুলিশের শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি রাইনের ভেন্ড আরো বড় একটি প্রশ্ন তুলেছেন: লাভ প্যারেডে যে দশ লাখ কি তারও বেশী লোক হয়, তা সবাই জানে৷ বার্লিন এক কথা৷ কিন্তু ২০০৯ সালে এই রুর অঞ্চলেরই বোখুম শহর সাধ্যে কুলোবে না বলে লাভ প্যারেড বাতিল করেছে৷ সেক্ষেত্রে ডুইসবুর্গের এই দুঃসাহস হল কেন?
দুর্ঘটনার ঘটনাস্থল আরেকটি প্রশ্ন৷ টানেলটি দেখলেই বোঝা যায় যে, এখানে চাপাচাপি এবং জনাতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে৷ এমনকি ব্লগাররা এই লাভ প্যারেডের অনেক আগে থেকেই সে'বিষয়ে সাবধান করে দিয়ে আসছে৷ অথচ পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় স্ক্রিনিং পয়েন্ট সৃষ্টি করে লাউডস্পিকারের মাধ্যমে মানুষের স্রোত পরিচালনা করার উপরেই পুরোপুরি নির্ভর করেছে৷ মুশকিল হল, বাইরে মাঠ থেকে আসছে টেকনোর সরব সঙ্গীত৷ তার উপর মানুষের ভিড় এবং পানোন্মত্ত তরুণ জনতা৷ সে গোলযোগে কেউ পুলিশের নির্দেশ শুনতে পেয়েছে কিনা সন্দেহ৷
বার্লিন রাজধানী, কি বড় শহর বলে নয়৷ বার্লিনের সুবিধা হল, সেখানকার লাভ প্যারেড শহরের যে প্রশস্ত রাজপথটিতে অনুষ্ঠিত হতো, তার দু'পাশে টিয়ারগার্টেন নামধারী সুবিশাল খোলামেলা সরকারি উদ্যান৷ কাজেই লোকজনদের ছড়িয়ে পড়ার কোনো বাধা ছিল না৷ ডুইসবুর্গে মানুষের সেভাবে ছড়িয়ে পড়ার, অর্থাৎ পালানোর কোনো পথ ছিল না৷ এরকম পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র পুলিশি নিয়ন্ত্রণের উপর নির্ভর করাটাই ভুল৷
তদন্তে প্রকাশ পাবে, ভুলটা কি এবং কে ভুলটা করেছে৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম