রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় ক্রসফায়ার বাড়ছে?
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত দুই বছরের একটু বেশি সময়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় মোট ৪২ জন রোহিঙ্গা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন৷ এর মধ্যে উখিয়ায় ২৪ জন ও টেকনাফে ১৮ জন৷ নিহতদের মধ্যে তিনজন নারীও আছেন৷ জুন-জুলাইয়ে ছয় জন এবং আগস্টে পাঁচজন রোহিঙ্গা বন্দুকযদ্ধে নিহত হন৷
গত ২২ আগস্ট টেকনাফে স্থানীয় যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক নিহত হন৷ এই হত্যাকাণ্ডের জন্য রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের দায়ী করা হয়৷ টেকনাফ থানার ওসি (তদন্ত) এবিএমএস দোহা জানান, ‘‘এই মামলায় এজাহারভুক্ত পাঁচজন এবং সন্দেহভাজন দুইজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন৷ আরো আসামি আছে৷ তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে৷’’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টর রাসেল আহমেদ বলেন, ‘‘যারা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন তার বাইরেও আমরা আরো ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছি৷ তারাও রোহিঙ্গা৷ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কয়েকজন পলাতক আছে৷ তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে৷’’
যুবলীগ নেতা নিহত হওয়ার পরদিন ২৩ আগষ্ট গভীর রাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং জাদিমুরা রোহিঙ্গা শিবিরের পাশে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন রোহিঙ্গা মোহাম্মদ শাহ ও মো. শুক্কুর৷ ২৬ আগস্ট বন্দুকযুদ্ধে মোহাম্মদ হাসান নামে আরেক রোহিঙ্গা নিহত হন৷ ১ সেপ্টেম্বর নিহত হন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নুর মোহাম্মদ, ১৩ সেপ্টেম্বর নেছার ডাকাত ও আব্দুল করিম৷
সর্বশেষ ২২ সেপ্টেম্বর টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দিল মোহাম্মদ ও তার স্ত্রী জাহেদা বেগম বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন৷
পুলিশের দাবি, নিহত এই আট রোহিঙ্গার মধ্যে জাহেদা বেগম ছাড়া আর সবাই যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যাকাণ্ডে জড়িত৷ তারা ডাকাত দলের সদস্য৷ প্রতিটি ঘটনায়ই পুলিশ তাদের আটকের পর অভিযানে গেলে তারা ‘বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হয়৷ বন্দুকযুদ্ধের পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র এবং গুলিও উদ্ধার করে৷
মানবাধিকার কর্মী এবং কক্সবাজারের মানবাধিকার কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যুবলীগ নেতা হত্যা এবং ২৫ আগস্টের রোহিঙ্গা সমাবেশের পর থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি স্থানীয় মানুষ ক্ষুব্ধ৷ সরকারেরও মনোভাব আগের চেয়ে ভিন্ন৷ অথচ এই রোহিঙ্গাদের শুরুতে সাদরে গ্রহণ করেছে৷ ক্রসফায়ার বেড়ে যাওয়ার কারণ এগুলো হতে পারে৷ যুবলীগ নেতা হত্যার পর ক্রসফায়ার বেড়ে গেছে৷ তবে রোহিঙ্গারাও নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এই পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান আমি দেখি না৷ তারা হয়তো মনে করছেন, রোহিঙ্গারা বিদেশি, তাই প্রচলিত আইনে বিচার হয়তো জটিল হতে পারে৷’’
মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, ‘‘যুবলীগ নেতা হত্যার পরই আমরা ক্রসফায়ারের ঘটনা বাড়তে দেখছি৷ ওই একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছয়-সাতজন রোহিঙ্গা সন্দেহভাজনকে পুলিশ হেফাজতে ক্রসফায়ারে নিহত হতে দেখেছি৷ আমার মনে হয়েছে রোহিঙ্গারা কক্সবাজার এলাকায় যে-কোনো অপরাধের ব্যাপারে এখন টার্গেটেড৷ আমরা আগে মাদকবিরোধী যুদ্ধে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের ক্রসফয়ারে নিহত হতে দেখেছি৷ এখন মাদক, মানবপাচারসহ নানা অপরাধে রোহিঙ্গারাই নিহত হচ্ছে৷ আমার মনে হয়, তারা যেহেতু শরণার্থী তাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আরো সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘এর মধ্য দিয়ে ক্যাম্প এলাকায় একটি ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের চাপে এবং অপরাধ থেকে দূরে রাখার একটি চেষ্টা হতে পারে৷’’