রিমাইগ্রেশন-বিতর্ক ও এএফডিকে নিষিদ্ধ করার দাবি
১৬ জানুয়ারি ২০২৪গত ১০ জানুয়ারি অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম কারেকটিভ রিপোর্ট করেছিল যে, পটসডামের একটি হোটেলে দক্ষিণপন্থি দল এএফডি ও নব্য নাৎসিরা বৈঠক করেন।
সেই বৈঠকে যোগদানকারী নেতারা ‘রিমাইগ্রেশন’ নিয়ে আলোচনা করেন। ‘রিমাইগ্রেশন’ মানে জার্মানিতে যে অভিবাসীরা আছেন, তাদের ফেরত পাঠানো। তারা যে দেশ থেকেই আসুন না কেন, তাদের নিজেদের আদি দেশে ফেরত পাঠাতে হবে, এই ছিল বৈঠকের বিষয়বস্তু।
দক্ষিণপন্থি ও অতি-দক্ষিণপন্থিরা রিমাইগ্রেশন কথাটি খুবই ব্যবহার করেন। কারেকটিভের রিপোর্ট বলছে, পটসডামের বৈঠকে অভিবাসীদের বহিষ্কার করা নিয়ে একটি সামগ্রিক ধারণা ও মাস্টার প্ল্যান বানানোই ছিল মূল কর্মসূচি।
সেখানে যারা রেসিডেন্ট পারমিট নিয়ে আছেন অথবা যারা জার্মানির নাগরিকত্ব পেয়েছেন, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজের সঙ্গে মিশে যেতে পারেননি, তাদের প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।
সংবিধান-বিরোধী কাজ নিয়ে ক্ষোভ
বৈঠকে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা জার্মানির সংবিধানে লিখিত মৌলিক অধিকারের বিরোধী। তাছাড়া সরকারি আইনে কাউকে তাদের জাতি, সম্প্রদায়, ভাষা বা মূল দেশের ভিত্তিতে বৈষম্য করা যায় না।
পটসডামের রিপোর্ট নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছে। এফডিপি-র পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা ত্রিশ্চিয়ান ডার বলেছেন, ‘‘লাখ লাখ অভিবাসীদের বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত জার্মানির ইতিহাসে অন্ধকারতম অধ্যায়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে৷’’ তিনি ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সালের নাৎসী যুগের প্রসঙ্গই তুলেছেন।
কারা বৈঠকে ছিল?
কারেকটিভের রিপোর্ট বলছে, অবসরপ্রাপ্ত ডেন্টিস্ট ও অতি-দক্ষিণপন্থি নেতা গেয়ারনোট ম্যোরিশ ছিলেন এই বৈঠকের আয়োজক। তার সঙ্গে ছিলেন শিল্পপতি হানস-ক্রিশ্চিয়ান লিমের। বৈঠকে যারা যোগ দিয়েছিলেন, তাদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার ইউরো ডোনেশন চাওয়া হয়। এএফডি-র সহকারী নেতা অ্যালিস ভাইডেলের পরামর্শদাতা রোলান্ড হার্টভিশ আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়াও এএফডির পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে কয়েকজন বৈঠকে ছিলেন।
জার্মানির সবচেয়ে বড় বিরোধী দল সিডিইউ-এর কয়েকজন নেতাও ছিলেন বলে রিপোর্ট জানাচ্ছে।
তবে বৈঠকে যারা যোগ দিয়েছিলেন, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নাম হলো অস্ট্রিয়ার রাজনীতিবিদ মার্টিন সেলনার। তিনিই রিমাইগ্রেশনের তত্ত্ব বিস্তারিতে বলেন।
এএফডির মত
কিছুদিন আগে জার্মানির চ্যান্সেলর শলৎস বলেছিলেন, ‘‘যাদের জার্মানিতে থাকার অধিকার নেই, এমন মানুষদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা আমাদের শেষ পর্যন্ত করতেই হবে৷’’
বিরোধী জোট সিডিইউ-সিএসইউয়ের অনেক রাজনীতিবিদও এই মত সমর্থন করেন।
এএফডি দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানাচ্ছে, অভিবাসীদের গণহারে নিজেদের দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। ২০২১ সালে দল তার ইস্তাহারে রিমাইগ্রেশন কথাটা ব্যবহার করেছে।
১০ জানুয়ারি দল এক্স-এ যে মেসেজ পোস্ট করেছে, তাতেও রিমাইগ্রেশন কথাটি আছে।
এএফডিকে নিষিদ্ধ করার দাবি
এএফডি-র নেতা ও পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্য পটসডাম বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন, এই তথ্য সামনে আসার পরই আবার ওই দলকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে।
সিডিইউ নেতা ও একটা রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টমাস স্ট্রবল বলেছেন, ‘‘গোয়েন্দা সংস্থাগুলির এএফডি-র কাজকর্ম খতিয়ে দেখার যথেষ্ট কারণ আছে৷’’
জার্মানিতে শুধুমাত্র জাতীয় সাংবিধানিক আদালত একটি দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। ১৯৫৬ সালে শেষবার একটি দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
সিডিইউ নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস বলেছেন, আমাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। এএফডিকে নিষিদ্ধ করে তাদের শহিদের মর্যাদা দেয়ার কোনো অর্থ হয় না।
পিটার হিলে/জিএইচ