বিজেপির কোবিন্দের দিকেই পাল্লা ভারি
১৮ জুলাই ২০১৭সোমবার রাষ্ট্রপতি পদের ভোটদান পর্ব শেষ হবার পর, এখন জল্পনা রায়সিনা হিলসের রাষ্ট্রপতি ভবনের দৌড়ে কে এগিয়ে আছেন – তা নিয়ে৷ রেকর্ড সংখ্যক ভোট পড়েছে, হয়েছে ক্রস-ভোটিং৷ সেদিক থেকে ভোট পর্ব শেষে মনে হচ্ছে, পাটিগণিতের হিসেবে পাল্লা ভারি বিজেপি জোটের প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দের৷ কোবিন্দের পক্ষে ভোট পড়েছে ৬৪ শতাংশ৷ তবে ক্রস-ভোটিং হলে সেটা আরো বাড়বে, এমনটাই দাবি বিজেপির৷ আর ভোটের পর প্রধানমন্ত্রী মোদীর শরীরী ভাষাতেও সেটা চাপা থাকেনি৷
অবশ্য কংগ্রেস জোটের প্রার্থী মীরা কুমারও কিছু কম নন৷ তাঁর হয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী গতকাল সাংসদ ও বিধায়কদের বিবেকের ভোট দেবার আবেদন রেখেছেন৷ বলেছেন, এটা একটা আদর্শগত লড়াই৷ সহিষ্ণুতা ও বহুত্ববাদের লড়াই৷ দেশকে কখনই সংকীর্ণতা, বিভেদকামী সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে বন্ধক রাখা যায় না৷ দেশকে বাঁচাতে পারেন মীরা কুমার এবং গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর মতো ব্যক্তিরাই৷ উল্লেখ্য উপরাষ্ট্রপতি পদে কংগ্রেস ও বিরোধী পক্ষের প্রার্থী গোপালকৃষ্ণ গান্ধী, যিনি জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর পৌত্র৷ তিনি সাংসদ ও বিধায়কদের কাছে আবেদন রেখেছেন, অঙ্কের বিচারে এই লড়াই যেন পথভ্রষ্ট না হয়৷
তবে সার কথাটি বুঝেছেন বহুজন সমাজ পার্টির দলিত নেত্রী মায়াবতি৷ বলেছেন যিনিই জিতুন তিনি হবেন ভারতের দ্বিতীয় দলিতরাষ্ট্রপতি৷ এটাই বড় কথা৷ জাতপাতকে সরিয়ে রেখে ভারতের সাংবিধানিক পরিসরে দলিত রাষ্ট্রপতির বিশিষ্টতা স্বীকার্য৷ মীরা কুমার জিতলে তিনিই হবেন ভারতীয় গণতন্ত্রে প্রথম দলিত মহিলা রাষ্ট্রপতি৷ ভারতের প্রথম দলিত রাষ্ট্রপতি হন প্রয়াত কে. আর. নারায়ণন৷ তিনি ছিলেন একজন প্রাক্তন কূটনীতিক৷ রাষ্ট্রপতিপদে লড়েছিলেন নির্দল প্রার্থী হিসেবে৷ দলীয় রাজনীতির ঊর্ধে উঠে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে অনন্য নজির রেখে গেছেন তিনি৷ সরকারের রবার স্ট্যাম্প না হয়ে দরকার হলে সরকারকে প্রশ্ন করতে ছাড়েননি৷ সরকারের সিদ্ধান্ত চোখ বুজে মেনে নেননি৷ তাঁর নিজের ভাষায়, সংবিধানের চার দেওয়ালের মধ্যেই তিনি কাজ করেছেন৷ এবং দরকারে রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন৷
রামনাথ কোবিন্দ কি সেটা করতে পারবেন? প্রশ্ন সেখানেই৷ এ কথা ঠিক যে, তিনি বিহারের রাজ্যপাল হিসেবে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেছেন ইতিমধ্যেই৷ সুপ্রিম কোর্ট এবং দিল্লি হাইকোর্টে ১৬ বছরের প্র্যাকটিস করার অভিজ্ঞতাও আছে তাঁর৷ কিন্তু তিনি সংঘ পরিবার ঘেঁষা৷ ওদিকে আবার কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত মোরারজী দেশাই-এর আপ্ত-সহায়ক ছিলেন৷ কাজেই তাঁর সম্পর্কে কিছুই জোর দিয়ে বলার সময় আসেনি৷ যতক্ষণ না হাতে-কলমে কোনো কিছু প্রমাণিত না হচ্ছে৷
অতীতে কয়েকজন রাষ্ট্রপতির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছিল বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা৷ যেমন ইন্দিরা গান্ধীর আমলে জরুরি অবস্থা জারি নিয়ে তত্কালীন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ একটি শব্দ উচ্চারণ না করে চুপচাপ অধ্যাদেশে সই দিয়েছিলেন৷
ওদিকে, মীরা কুমারের পরিচয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার তকমা রয়েছে৷ গোড়ামি তাঁর রক্তে নেই৷ পিতা ছিলেন নেহেরু জমানায় উপ-প্রধানমন্ত্রী বাবু জগজীবন রাম৷ মীরা কুমার বিহার থেকে পাঁচবার সাংসদ হন৷ এছাড়া সংসদের প্রাক্তন স্পিকার ও দক্ষ কূটনীতিবিদ৷ তবে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতাই একমাত্র মাপকাঠি নয়৷ নিজস্ব বিচারধারাই আসল বলে মনে করা হয়৷
অন্যদিকে উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়েও চলেছে তোড়জোড়৷ বিজেপি ভেঙ্কাইয়া নাইডুর নাম ঘোষণা করেছে৷ বর্তমানে তিনি মোদী মন্ত্রিসভার শহরাঞ্চল উন্নয়ন এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী৷ এর কারণ সম্ভবত দক্ষিণী রাজ্যগুলির দিকে হাত বাড়ানো এবং সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিজেপির নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা৷ রাজ্যসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্টতা নেই৷ উপ-রাষ্ট্রপতিই রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন হয়ে থাকেন৷ বলা বনাহুল্য, প্রধানমন্ত্রী মোদী এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চান৷ রাষ্ট্রপতি এবং উপ-রাষ্টপতি পদে জিতে মোদী তাঁর ভিদ মজবুত করতে চাইছেন, মূলত ২০১৯ সালের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে৷ উপ-রাষ্ট্রপতি পদের ভোট আগামী ৮ই আগস্ট৷ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মতো উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও ভোটদাতার সংখ্যা একই, অর্থাৎ সংসদের উভয় কক্ষের ৭৭৬ জন সাংসদ এবং সব রাজ্যের ৪১২০ জন বিধায়ক নিয়ে গঠিত মোট ৪৮৯৬ জনের ইলেক্টোরাল কলেজ৷ ভোটমূল্য অবশ্য সবার সমান নয়৷ এটা নির্ধারিত হয় রাজ্যগুলির জনসংখ্যার অনুপাতে৷