রাজস্থানে কুপিয়ে হত্যা
৮ ডিসেম্বর ২০১৭সোশ্যাল মিডিয়া ক্ষিপ্ত এক অভিবাসী বাঙালি শ্রমিকের নৃশংস খুনের ঘটনায়৷ কারণ, সোশ্যাল মিডিয়াতেই প্রথম পোস্ট করা হয় ওই ভয়ঙ্কর ভিডিও, যেখানে মোহাম্মদ আফরাজুল খান নামে ৪৬ বছরের এক মানুষকে কুপিয়ে খুন করে, তার পর তাঁর দেহ জ্বালিয়ে দেওয়ার গোটা ঘটনা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে৷ বস্তুত সোশ্যাল মিডিয়া প্রথম হইচই শুরু করাতেই টনক নড়ে প্রশাসনের৷ নয়তো রাজস্থান পুলিশ ঘটনার খবর পেয়ে গিয়ে কেবল অর্ধদগ্ধ মৃতদেহটি হেফাজতে নিয়েই দায় সেরেছিল৷ এই হত্যার পিছনে তথাকথিত ‘লাভ জিহাদ’-এর বিরোধিতা আছে, এমন একটা প্রচারে আরও নিষ্ক্রিয় ছিল পুলিশ৷ যেহেতু বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি শাসিত রাজস্থানে কার্যত খোলা ছাড়া আছে তথাকথিত হিন্দুত্ববাদীদের৷ গোরক্ষার নামে গুন্ডামি থেকে শুরু করে লাভ জিহাদের বিরোধিতার অজুহাতে এমন নৃশংসভাবে মানুষ খুন, সবই নজর এড়িয়ে যাচ্ছে প্রশাসনের৷
পশ্চিমবঙ্গে এই ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে৷ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই টুইট করে নিজের ক্ষোভ জানান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ তিনি লেখেন— বাংলার একজন শ্রমিকের এই হত্যার তীব্র নিন্দা করছি৷ কোনও মানুষ কী করে এত অমানবিক হতে পারে! দুঃখজনক!
সিপিএম নেতা, সাংসদ মহম্মদ সেলিমও টুইট করে নিজের ক্ষোভ জানিয়েছেন এই ঘটনার পর ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের নির্বিকার আচরণে৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘একজন মানুষকে ক্যামেরার সামনে কুপিয়ে, পুড়িয়ে খুন করা হলো৷ আর ভারতীয় টেলিভিশন ব্যস্ত রইল (প্রধানমন্ত্রী) নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে (কংগ্রেসের) মনিশঙ্কর আয়ার কী বলেছেন, সেই নিয়ে৷ এটাই আমাদের সম্পর্কে অনেক কথা বলে দেয়৷’’
ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল বর্ষীয়ান সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে৷ তিনি এখনও ওই ভয়ঙ্কর ভিডিওটি চাক্ষুস করার ধাক্কা সামলে উঠতে পারেননি৷ বললেন, ‘‘শুধু মর্মান্তিক নয়, পৈশাচিক ঘটনাও বটে৷ দেখতে দেখতে গা শিউরে ওঠে৷ ধর্ম যদি মানুষকে এই জায়গায় নিয়ে যায়, ধর্ম যদি মানুষকে উন্মাদ করে দেয়, রক্তোন্মাদ করে দেয়— তা হলে বলতে হয় আমরা চরম দুর্ভাগ্যজনক এক অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছি৷’’ ব্যক্তিজীবনে ধর্মবিশ্বাসী শীর্ষেন্দু জোর দিয়ে বললেন, ‘‘এটা ধর্মের প্রকৃত পরিচয় নয়৷ ধর্মের যে বিকার এবং বিকৃতি, এ তারই প্রকাশ৷’’ সত্তরের দশকের কবি মৃদুল দাশগুপ্ত, যিনি ‘আমি আরব গেরিলাদের সমর্থন করি’র মতো কবিতা সংকলন বের করেছেন, তিনি চূড়ান্ত ক্ষিপ্ত৷ ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘শোক, হতাশা প্রকাশের সময় এটা নয়, বরং রাগের বহিঃপ্রকাশ হোক৷ এই সরকারকে বরখাস্ত করুক মানুষ, যারা এমন ধরনের ঘটনা ঘটতে দেয়৷ এসব দেখেও চুপ করে থাকে৷’’ তা হলে কি পরের নির্বাচনে জবাব দেবে মানুষ? মৃদুল দাসগুপ্ত এতটাই ক্রুদ্ধ যে, তাঁর বক্তব্য, ‘‘নির্বাচিত সরকারকে সহ্য করারও একটা সীমা থাকে! পরের নির্বাচন নয়, এই সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হওয়া দরকার এখনই!’’
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...