যে চিঠিতে তৃণমূলের হোতাদের নাম নেই
৭ ডিসেম্বর ২০২০পশ্চিমবঙ্গের যেসব রাজনৈতিক নেতা তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, তাদের কয়েকজনের নাম ‘ফাঁস’ করেছেন জেলবন্দি সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন৷ একেবারে নাম করে করে বলেছেন, চিট ফান্ডের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা টাকা কোন কোন নেতার পকেটে গেছে৷ এবং তাদের কেউ কেউ এখন বিজেপিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে তিনি ব্যথিত৷ প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে সুদীপ্ত সেন জানিয়েছেন, যে চিঠি রাজ্য কারা বিভাগ থেকে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী, বা মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে পৌঁছেছে কিনা জানা নেই৷ এমনকি চিটফান্ড দুর্নীতির তদন্তকারী কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই, বা অন্য আর্থিক বেনিয়ম অনুসন্ধানী সংস্থার হাতেও যায়নি৷ সরাসরি ফাঁস হয়ে গেছে গণমাধ্যমে! খোদ চিটফান্ড–কর্তার লেখা চিঠির এই বিচিত্র গতিপথ ছাড়াও সাড়া ফেলেছে, যাঁদের নাম এই চিঠিতে আছে৷
একটি নাম, রাজ্য রাজনীতিতে এই মুহূর্তে যার অবস্থান এবং অভিমুখ নিয়ে সবথেকে বেশি জল্পনা, সেই শুভেন্দু অধিকারীর৷ তিনি দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে অসন্তোষের জেরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে আছেন৷ সেই শুভেন্দু ঠিক কত কোটি টাকা নিয়েছিলেন সারদাকর্তার কাছ থেকে, নির্দিষ্টভাবে বলা আছে চিঠিতে৷ আছে মুকুল রায়ের নাম, যিনি আগেই তৃণমূল নেত্রীর হাত ছেড়ে বিজেপির হাত ধরে বসে আছেন৷ যদিও মুকুল ঠিক কত টাকা নিয়েছেন, সেটা সারদা–কর্তার মনে পড়েনি৷ বাকি তিনটি নাম হলো পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী, পশ্চিমবঙ্গ বামফ্রন্টের সভাপতি বিমান বসু এবং রাজ্য বিধানসভায় বামফ্রন্টের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর নাম৷ দলত্যাগী মুকুল, বা বিক্ষুব্ধ শুভেন্দুর বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আনাতে যে সন্দেহ উঠেছিল, শেষ তিনজনের নাম তালিকায় থাকায় তা আরও জোরদার হয়েছে যে, এই চিঠি কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?যেখানে বিরোধী, বা বিক্ষুব্ধদেরই নাম আছে, কিন্তু শাসকদলের একজনেরও নাম নেই৷ ২০২১ বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে এমন পত্রবোমা ফেলে সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন কি নিজের জামিন পাওয়ার রাস্তা তৈরির চেষ্টায় আছেন?
চিঠিতে অভিযুক্ত সুজন চক্রবর্তী বলছেন, শাসকদলেরই সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই চিঠি সুদীপ্ত সেনকে দিয়ে সম্ভবত লেখানো হয়েছে, যা অত্যন্ত কাঁচা কাজ৷ ধরা পড়ে গেছে৷ তাঁর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘একটা লোক সাত বছর ধরে সরকারের হেফাজতে, কারা দপ্তরের হেফাজতে, সে এখন বন্দি৷ সে একটা পিটিশন করল সাত বছর পরে৷ সেখানে অশ্রুতপূর্ব কিছু কি সাত বছর পরে তার মনে পড়লো, নাকি কেউ তাকে মনে করিয়ে, কিছু লিখিয়ে সই করিয়ে রাখলো? এটা স্রেফ জালিয়াতি৷’’
কিন্তু ঘটনা হলো, রাজ্য রাজনীতিতে এই চিঠিকে কেউ সিরিয়াসলি নিচ্ছেন না৷ যদিও অধীর রঞ্জন চৌধুরী, বা বাম নেতারা বলেছেন আইনি ব্যবস্থা নেবেন৷ কিন্তু সিপিআইএম পার্টির ‘হোল টাইমার’, পার্টির মাসোহারা নিয়ে দিন চালানো বিমান বসু একাই দু কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন শুনে হাসাহাসি হচ্ছে৷ সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘যে এটা লিখিয়েছে, তার যদি বুদ্ধি থাকতো তাহলে আমাকে নয় কোটি দিয়ে বিমান বসুকে দু কোটি দেয় না!এটাও সবাই বোঝে যে, মুকুলের ওপর দুঃখ আছে, সে দল ছেড়েছে৷ শুভেন্দুর ওপর দুঃখ আছে, যে সে দল ছেড়ে দেবে৷ এই ভয়ে, শুভেন্দুর নামটা আনতে হবে বলে এই সুযোগটা নিচ্ছে৷ যেহেতু সামনে ভোট!’’