‘যুদ্ধাপরাধীদের’ ঝেড়ে ফেলতে হবে বিএনপিকে
২৪ আগস্ট ২০১৬বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা, হয়রানি ও পুলিশি নির্যাতনের কারণেই হয়ত এখন আর ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কোথাও আন্দোলন দেখা যাচ্ছে না৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আন্দোলন সীমাবদ্ধ থাকছে সংবাদ সম্মেলন ও বিবৃতির মধ্যে৷ এমন নয় যে বিএনপির তৃণমূলে জনসমর্থন কম৷ তার ওপর সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন জমিয়ে তোলার মতো ইস্যুরও অভাব নেই৷ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, দুর্নীতি, নির্যাতন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, পরিবেশ বিপর্যয়ের ঘটানোর মতো নানা প্রকল্প গ্রহণ, নিরাপত্তাহীনতা আর জঙ্গিবাদের বিস্তার – এর যে কোনো একটি ইস্যুই যে কোনো সরকারকে টালমাটাল পরিস্থিতির মুখোমুখি করতে পারে৷ অথচ একটির পর একটি ঘটনা ঘটার পরেও সরকারবিরোধী সফল কোনো অবস্থান নিতে পারছে না বিএনপি৷
বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা যখন এমন দুর্বল, তখন জঙ্গিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য গঠনের ঘোষণা দিয়েছে দলটি৷ সিপিবি, বাসদ, গণফোরাম, বিকল্প ধারা, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মতো দলগুলোকে কাছে টানার জন্য বিএনপি জামায়াত ছাড়তে পারে বলে কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে৷ বিএনপির নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘‘জামায়াত আর বিএনপির সম্পদ নয় বরং বোঝা, তাই খুব দ্রুতই এ বোঝাকে ঘাড় থেকে নামিয়ে দেয়ার কথা চিন্তা-ভাবনা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া৷ এমনকি সরকার চাইলে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে বলেও তিনি জানান৷''
গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও এমাজউদ্দিনের মতোই বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার জন্য বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়েছেন৷
কিন্তু খোদ বিএনপির মধ্যেই জামায়াত নিয়ে রয়েছে হাজারো দোটানা৷ এমাজউদ্দিনের এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ‘‘জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার বিষয়ে ড. এমাজউদ্দিন যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তার একান্ত নিজস্ব, তার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই৷''
এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভবিষ্যত নিয়ে নতুন করে ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে৷ বিএনপি দাবি করে জামায়াতের সাথে তার জোট আদর্শগত নয়, বরং নির্বাচনে জয়লাভ এবং রাজপথে আওয়ামী লীগ বিরোধী আন্দোলনের জন্য কৌশলগত জোট গঠনের প্রয়োজনে তারা জামায়াতের সাথে গাঁটছড়া বেঁধেছে৷ বিএনপির মধ্যে অনেকেই মনে করেন জামায়াতের একটি শক্তিশালী ভোটব্যাংক রয়েছে যা বেশ কিছু আসনে বিএনপিকে নির্বাচনে জিততে সাহায্য করে৷ তাছাড়া জামায়াতের অর্থ ও সাংগাঠনিক সক্ষমতা রাজপথের আন্দোলনকে বেগবান করে৷ মূলত এ দু'টি কারণের জন্যই বিএনপির জামায়াতকে দরকার৷
বাংলাদেশের রাজনৈতিক জোট: আদর্শগত না কৌশলগত?
এ দু'টি ধারণা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার আগে আসলেই বিএনপি-জামায়াত জোট আদর্শগত না কৌশলগত সেটা নিয়ে আলোচনা জরুরি৷ আমার মতে, বাংলাদেশের প্রধান দু'টি রাজনৈতিক দলের কোনোটিই আদর্শ দিয়ে পরিচালিত হয় না৷ আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ ও সেক্যুলারিজমকে নিজেদের আদর্শের কেন্দ্র হিসেবে দেখাতে ভালোবাসে৷ কিন্তু বাস্তবে নির্বাচনে জয়ী হবার জন্য ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উভয়কেই ব্যবহার করে এসেছে এ দলটি৷ আওয়ামী লীগের ভেতরে ওলামা লীগের অস্তিত্ব, খেলাফতে মজলিশের মতো উগ্র-ইসলামপন্থি দলের সাথে সখ্যতা এবং হেফাজতে ইসলামকে কৌশলগত ভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যবহারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনীতি অনেকটাই বোঝা যায়৷ শাহবাগ আন্দোলনের উত্থান ও পতনের মাধ্যমেও আওয়ামী লীগের কৌশলগত রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নিপুন ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়৷ এর আগে কৌশলগত কারণেই জামায়াতের সাথে জোট বেঁধে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল আওয়ামী লীগ৷ বাংলাদেশের রাজনীতি এমনই জটিল ও চমকে ভরা যে, ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত আবারো জোট বাঁধলে মোটেও অবাক হবো না৷
একইভাবে বিএনপির জন্ম একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে – যেখানে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের হাত ধরে মূলত মধ্যপন্থি, তার সাথে ডানপন্থি ও বামপন্থি নেতারা জোট বেঁধে প্রথমে জাগদল ও পরবর্তীতে বিএনপি গঠন করে৷ বিএনপির রাজনীতির মূলধারায় মধ্যপন্থি ও বামপন্থি রাজনীতিকদেরই প্রাধান্য, এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে যখন বিএনপিকে মধ্য-ডানপন্থি রাজনৈতিক দল হিসেবে অনেকেই বিবেচনা করেন, তখনও দলের নীতি-নির্ধারণে কিন্তু তীব্র ডানপন্থি নেতাদের সংখ্যা নিতান্তই নগন্য৷ বিএনপি একটি ইন্টারেস্টিং রাজনৈতিক দল, কারণ এ দলটির জন্ম ক্যান্টনমেন্ট কেন্দ্রিক৷ কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখা দলও বিএনপি৷ আমি মনে করি, আওয়ামী লীগের মতোই বিএনপির প্রধান উদ্দেশ্য যে কোনোভাবে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় যাওয়া৷ আওয়ামী লীগ যেখানে মুক্তিযুদ্ধ ও সেক্যুলারিজম এই দু'টি ন্যারেটিভের উপর ভিত্তি করে তাদের রাজনীতি পরিচালনা করে, সেখানে বিএনপির ন্যারেটিভ একটাই৷ আর সেটা হলো আওয়ামী-বিরোধিতা৷ বিএনপি যতবারই জনগণের কাছে ভোট পেয়েছে, জনপ্রিয় হয়েছে, তার কারণ ছিল আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষোভ ও অসন্তোষ৷ বিএনপির নিজস্ব ন্যারেটিভের অনুপস্থিতি বর্তমান সময়ে দলটির নাজুক অবস্থানের অন্যতম কারণ৷ সেইসাথে এই অনুপস্থিতি আরেকটি বিষয় পরিষ্কার করে যে, বিএনপির আদর্শগত ন্যারেটিভের অভাব রয়েছে এবং দলটি মূলত ক্ষমতায় লক্ষ্য নিয়েই পরিচালিত হয়৷
মোট কথা আমার মতে, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দু'টি রাজনৈতিক দলই ‘রিয়ালিস্ট' বা বাস্তববাদী৷ তাদের মূল লক্ষ্য নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করা, নির্বাচনে জয় লাভ করা৷ আদর্শ বা ভাববাদিতার এখানে কোনো স্থান নেই৷ তাই তাদের সাথে যে কোনো দলের জোটই কৌশলগত, কখনই আদর্শগত নয়৷
বিএনপি-জামায়াতের কৌশলগত জোট
আমি এর আগের আলোচনায় উল্লেখ করেছি যে, দু'টি কৌশলগত কারণে বিএনপি জামায়াত জোট বেঁধেছে৷ প্রথমত: নির্বাচনে জামায়াতের ভোটব্যাংক বিএনপির ক্ষমতায় যেতে সাহায্য করে, দ্বিতীয়ত: রাজপথে জামায়াতের শক্ত অবস্থান বিএনপির সরকার বিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করে৷
নির্বাচনের ফলাফল ও জামায়াতের রাজনীতি বিশ্লেষণ করলে এ দু'টি ধারণাই ভুল প্রমাণিত হয়৷ এমনকি জামায়াতকে জোটে নিয়ে বিএনপির নিজস্ব রাজনৈতিক সক্ষমতা, সাংগাঠনিক কাঠামো ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা যে দিন-দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে তা-ও স্পষ্ট হয়ে উঠে৷ জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনি জোট গঠনের কারণে যুদ্ধাপরাধীদের লালন ও জামায়াতকে সুসংগঠিত হয়ে উঠার দায়ভারও বিএনপির কাঁধে এসে পড়ে৷ তাই বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক বামপন্থি ও উদারতাবাদীদের দল হওয়া সত্ত্বেও কিছু কট্টর ইসলামপন্থি নেতার কারণে আওয়ামী লীগ বেশ সফলভাবে বিএনপির গায়ে দেশবিরোধী তকমা সেঁটে দিতে সক্ষম হয়৷ যদিও জামায়াতকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় করে তুলতে বিএনপির সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের দায়ভারও কম নয়৷
কয়েকটি নির্দিষ্ট আসন ছাড়া জামায়াতের যে উল্লেখযোগ্য ভোটব্যাংক নেই তা নির্বাচনি ফলাফল বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়ে উঠে৷ পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (১৯৯১) জামায়াত ১৮টি আসন (মোট ভোটের ১২.১ শতাংশ), ৭ম নির্বাচনে (১৯৯৬) ৩টি আসন (৮.৬২ শতাংশ), ৮ম নির্বাচনে (২০০১) ১৭টি আসন (৪.২৮ শতাংশ) ও সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে দু'টি আসন ও ৪ শতাংশেরও কম সমর্থন পায়৷ বিএনপির সঙ্গে জোটে না থাকলে জামায়াত কতটা অসহায়, তা বোঝা যায় ১৯৯৬ সালে৷ অতি-আত্মবিশ্বাসী জামায়াত এ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের সবকটিতে প্রার্থী দেয় ও মাত্র তিনটি আসনে জেতে৷ বিএনপির সমর্থনপুষ্ট জামায়াত ২০০১ সালে ১৭টি আসন নিয়ে শক্ত অবস্থানে ফিরে আসে এবং মন্ত্রিসভায়ও জায়গা করে নেয়৷
বাংলাদেশে বেশ কিছু নির্বাচনি আসন রয়েছে যেখানে প্রধান দুই দলের মধ্যে ১০ বা ১৫ হাজারের মতো অল্প ব্যবধানে জয়ী নির্ধারিত হয়৷ অনেকেই ধারণা করে থাকেন, জামায়াতের সমর্থন এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ কিন্তু একটু ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, জামায়াতের উপর অতি-নির্ভরশীলতা বিএনপির নিজেদের রাজনৈতিক প্রচারণা ও সংগঠনকে ক্ষয়িষ্ণু ও দুর্বল করে ফেলে৷ এছাড়া, সিদ্ধান্ত না নেয়া সুইং ভোটাররা অনেক সময়ই শুধু জামায়াতের সঙ্গে জোটে থাকার কারণেই বিএনপির বিরুদ্ধে ভোট দেয়৷ জামায়াতের নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক ও জামায়াতবিরোধী সুইং ভোটারদের সংখ্যার মধ্যে তুলনা করলে সুইং ভোটারদের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি হওয়ার কথা৷ জামায়াতের নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনশীল ভোটব্যাংক যদি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারকই হতো, তবে ২০০৮ সালে বিএনপির ভরাডুবি ঠেকাতে তা কাজে লাগতে পারত৷ বাস্তবে তা হয়নি৷ কারণ দেশব্যাপী সামগ্রিক বিচারে জামায়াতের সমর্থকদের সংখ্যা বড়ই নগণ্য৷ তাই জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আখেরে বিএনপির কোনো লাভ হয়নি, বরং লাভ যদি কারও হয়ে থাকে তা জামায়াতেরই হয়েছে৷
এবারে আসি রাজপথে আন্দোলনের প্রসঙ্গে৷ শুধু জামায়াতের সাথে জোট বাঁধার কারণে আন্দোলনে বিএনপি যতটুকু জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে, তা বিএনপির রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল৷ সহিংস আন্দোলন, জ্বালাও-পোড়াও বা ভাঙচুরের আন্দোলন যে সরকারের পতন ঘটাতে পারে না তা এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত সত্য৷ লাগাতার হরতাল আর সহিংসতা জনগণকে রাজনৈতিক দল থেকে দূরে ঠেলে দেয়, অসন্তোষ আর ক্ষোভের জন্ম দেয়৷ বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বিএনপির ‘নিশ্চুপ' নীতি দলটিকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করেছে৷ এমনকি বিএনপি সমর্থকদের অনেকে জামায়াতের রাজনীতির প্রতি ঝুঁকে পড়েছে৷ এছাড়া জামায়াত-শিবিরের সাথে জোট বাধার কারণে সরকারের পক্ষেও বিএনপির বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়ন চালানো সহজ হয়েছে৷ জঙ্গিবাদ ইস্যুতে জামায়াত-শিবিরের সাথে জোট থাকার কারণেই বিএনপি বেকায়দায় পড়েছে৷ বিএনপির বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গি তোষণের৷ জামায়াতের সাথে জোট না থাকলে বিএনপির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের তর্জনী তোলা আওয়ামী লীগের জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতো৷
বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও প্রচারণার মূল চালিকাশক্তি ছাত্রদল৷ আশির দশকে স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলন ও নব্বইয়ে দল সংগঠিত করতে ছাত্রদল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল৷ ছাত্রলীগের মতোই ছাত্রদলের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও হত্যার নানা অভিযোগ রয়েছে৷ এছাড়া নামে ছাত্রদল হলেও এটি বয়স্ক ও অ-ছাত্রদের দ্বারা পরিচালিত৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও পাড়ায়-মহল্লায় বিএনপিকে একটি শক্ত প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করাতে ছাত্রদল বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে৷ কৌশলগত কারণে উচ্চপর্যায়ের নির্দেশ মেনে নিলেও ছাত্রদল কখনওই ছাত্রশিবিরকে মিত্র হিসেবে দেখেনি৷ অধ্যাপক ভুঁইয়া মনোয়ার কবিরের ‘পলিটিক্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অফ দ্য জামায়াত-ই-ইসলামী বাংলাদেশ' গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শুধু মার্চ ১৯৯১ থেকে মে ১৯৯৬ পর্যন্ত ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের মধ্যে ২০টি সংঘর্ষ হয়েছে৷ ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘটিত একটি বড় ধরনের রক্তাক্ত সংঘর্ষের পর খোদ বিএনপি নেতারা ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার জন্য সংসদে দাবি তোলেন৷ বর্তমানে আওয়ামী লীগ জামায়াতের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগলেও দুঃখজনক হলেও সত্যি, নব্বইয়ের দশকে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির সংঘর্ষের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে ও শিবিরকে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়৷ যে কারণে পরবর্তীতে, ১৯৯৬ সালে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে দেখা যায়৷ এভাবে প্রধান দু'টি দলই নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে স্বাধীনতা-বিরোধী শক্তিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বৈধতা দেয়৷ সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রদলের দুর্বলতার পেছনে জামায়াতের সাথে জোট কতটুকু দায়ী, তা বিশ্লেষণের দাবি রাখে৷
আমার মতে, নির্বাচন ও সরকার-বিরোধী আন্দোলনে জামায়াত বিএনপির জন্য যতটুকু সুবিধা বয়ে এনেছে, তার চেয়ে বেশি গ্লানি ও সংকট নিয়ে এসেছে৷ তাই দলটি আসলেই বিএনপির জন্য একটি বড় বোঝা৷ কৌশলগত কারণে এ জোট গঠন হলে সময় এসেছে বিএনপির নতুন আঙ্গিকে জোট গঠনের৷ বাসদ, সিপিবি, গণফোরাম, বিকল্প ধারা, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পাশাপাশি বর্তমান জোটের জামায়াত বাদে অন্য ডানপন্থি দলগুলোর সাথে ঐক্য গঠন করতে পারলে বিএনপি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে৷ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি – দু'টি দলই দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির জন্য অভিযুক্ত৷ তাই বিএনপি তার গা থেকে ‘যুদ্ধাপরাধী লালনের' গন্ধ ঝেড়ে ফেলতে পারলে আওয়ামী লীগের মতোই ‘গ্রহণযোগ্যতা' পাবে৷ সঠিক সময়ে এ সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে বিএনপির জন্য বর্তমান সময়ে চাইতেও কঠিন ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে৷
বন্ধু, আপনি কি সাইমুম পারভেজের সঙ্গে একমত? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷