যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: যে রাজ্যগুলোর ফলাফল পার্থক্য গড়ে দেবে
কমলা হ্যারিস না ডনাল্ড ট্রাম্প কে হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট তা নির্ধারিত হতে পারে মুষ্টিমেয় কয়েকটি রাজ্যর ফলাফলে৷ এই রাজ্যগুলো পরিচিত ‘সুইং স্টেট’ নামে৷
সুইং স্টেট কেন গুরুত্বপূর্ণ
যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৫০টি রাজ্য৷ প্রতিটির রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যক ইলেক্টোরাল ভোট৷ কোন একটি রাজ্যে যেই প্রার্থী জয়ী হবেন তিনি সবকটি ইলক্টোরাল ভোট পাাবেন৷ ব্যতিক্রম শুধু মেইন ও নেব্রাস্কা৷ বেশিরভাগ রাজ্যেই কে এগিয়ে সেটি সমর্থনের ভিত্তিতে ও জরিপের মাধ্যমে আগেভাবে ধারণা করা যায়৷ কিন্তু কয়েকটি রাজ্য আছে যেগুলোতে অনুমান করা কঠিন৷ ‘সুইং স্টেট’ নামে পরিচিত এই রাজ্যগুলোতেই মনযোগ এখন দুই প্রার্থীর শিবিরের৷
কোন রাজ্যগুলো
সময়ের সাথে সাথে সুইং স্টেটের পরিবর্তন হয়েছে৷ জনসংখ্যা বা ইস্যুর কারণে ভিন্ন ভিন্ন রাজ্য এমন সুইং স্টেটের তালিকায় ঢুকেছে৷ চলতি বছর গর্ভপাতের অধিকারের মতো অভিন্ন ইস্যুর পাশাপাশি রাজ্যগুলোর নিজস্ব ইস্যুও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷ দেখে নিন কোন রাজ্যগুলো এবার ‘সুইং স্টেট’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে৷
অ্যারিজোনা
মেক্সিকো সীমান্তবর্তী অ্যারিজোনা রাজ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু অনিয়মিত অভিবাসন৷ বাইডেন প্রশাসনে এই সীমান্তের অভিবাসন সংকট সমাধানের দায়িত্ব ছিল ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের কাঁধে৷ অনেকে মনে করেন তিনি তাতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ ট্রাম্প এই ব্যাপারে হ্যারিসকে আক্রমণ করার সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করছেন না৷ অ্যারিজোনার ভোটারদের এক তৃতীয়াংশ হিস্পানিক৷ এই রাজ্যে ইলেক্টোরাল ভোট ১১টি৷ গতবার জিতেছিলেন বাইডেন৷
জর্জিয়া
১৯৯২ সালের পর গত নির্বাচনেই প্রথমবারের মতো কোন ডেমোক্রেট প্রার্থী হিসেবে জর্জিয়ায় জয় পেয়েছিলেন বাইডেন৷ কিন্তু ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র দশমিক দুই শতাংশ৷ এই রাজ্যের ৩৩ শতাংশ ভোটার কৃষ্ণাঙ্গ, যা কমলা হ্যারিসের পক্ষে যেতে পারে৷ ২০২০ সালের নির্বাচনের সময় এই রাজ্যের নির্বাচনের ফল পাল্টানোর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে, যার বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে৷ রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট ১৬টি৷
মিশিগান
ফোর্ড, জেনারেল মোটর্স, ক্রাইসলারের মতো গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা মিশিগান৷ গত বছর বাইডেন এই রাজ্যে জিতে অ্যামেরিকার বাজারে চীনের ইলেক্ট্রিক গাড়ি রুখতে বিশাল অঙ্কের করারোপ করেন৷ রাজ্যের ভোটারদের উল্লেখযোগ্য অংশ আরব-অ্যামেরিকান৷ এবার গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষিতে নতুন করে তাদের সমর্থন আদায়ের চ্যালেঞ্জ ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সামনে৷ রাজ্যটির ইলক্টোরাল ভোট ১৫টি৷
নেভাদা
দক্ষিণ সীমান্তবর্তী রাজ্য নেভাদার জন্যেও অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ এক ইস্যু৷ এখানকার জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ হিস্পানিক৷ রাজ্যটি অতিমাত্রায় পর্যটননির্ভর৷ বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্য সুইং রাজ্যগুলোর মধ্যে নেভাদার অর্থনীতিই সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে৷ একইসাথে সব রাজ্যের মধ্যে নেভাদাতে বেকারত্বের হারও শীর্ষে৷ ২০২০ সালের নির্বাচনে নেভাদায় জয় পেয়েছিলেন বাইডেন৷ ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ছয়টি৷
নর্থ ক্যারোলিনা
সুইং স্টেটের তালিকায় নবীনতম রাজ্য নর্থ ক্যারোলিনা৷ জুলাইতে বাইডেন সরে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত ট্রাম্প এখানে এগিয়ে ছিলেন৷ হ্যারিস সেই ব্যবধান কমিয়ে আনতে সক্ষম হন৷ গত ১১টি নির্বাচনে এখান থেকে মাত্র একবার জিতেছেন ডেমোক্রেটরা৷ গত তিন দশকে এখানকার জনসংখ্যায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে৷ শ্বেতাঙ্গদের হার ৭৫ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৬০ শতাংশে৷ ২০২০ সালের নির্বাচনে ১৬ ইলোক্টোরাল ভোটের রাজ্যটিতে জয়ী হয়েছেন ট্রাম্প৷
পেনসিলভেনিয়া
অন্য রাজ্যের তুলনায় পেনসিলভেনিয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির চাপ বেশি৷ প্রাকৃতিক গ্যাস নিষ্কাশনে ফ্র্যাকিং পদ্ধতি ব্যবহারের পরে টেক্সাসের পর এটি সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী রাজ্যে পরিণত হয়েছে৷ ট্রাম্পের অবস্থান ফ্র্যাকিংয়ের পক্ষে৷ হ্যারিস শুরুতে বিপক্ষে থাকলেও এখন বিকল্প খোলা রাখার পক্ষে৷ ১০ সেপ্টেম্বর এই রাজ্যে বিতর্কে মুখোমুখি হন ট্রাম্প-হ্যারিস৷ ১৯ ইলেক্টোরাল ভোটের রাজ্যটিতে ২০২০ সালে জিতেছেন বাইডেন৷
উইসকনসিন
গত দুইটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়া রাজ্যের মধ্যে অন্যতম ছিল উইসকনসিন৷ প্রতিবারই মাত্র ২৫ হাজারের কম ভোটের ব্যবধানে প্রেসিডেন্ট বেছে নিয়েছেন এখানকার ভোটাররা৷ এখানকার প্রতিটি ভোটই তাই পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ এই রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ১০৷ দশমিক ছয়-তিন শতাংশ ভোটের ব্যবধানে ২০২০ সালের নির্বাচনে জিতেছেন ট্রাম্প৷