যুক্তরাজ্যে দাবি আদায়ের লড়াইয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, চাকুরিজীবীরাও
যুক্তরাজ্যে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গণধর্মঘটে শিক্ষক, পড়ুয়া, সরকারি পেশাজীবীরাও যোগ দিয়েছেন। এক দশকের মধ্যে দেশটির সবচেয়ে বড় এই ধর্মঘটের সমর্থনে বুধবার পথে নামেন পাঁচ লাখের কাছাকাছি শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী এবং ট্রেন চালক।
আন্দোলন চলবে
লন্ডনের রাস্তায় প্রতিবাদী শিক্ষকের ঢল বুঝিয়ে দিচ্ছে বেতন বৃদ্ধির দাবি এবং সুস্থ কাজের পরিবেশের দাবিতে এই আন্দোলনকে সহজে দমন করা যাবে না।
নতুন প্রজন্ম
বাবার কাঁধে চেপে ধর্মঘটের সমর্থনে লন্ডনের রাস্তায় দেখা গিয়েছে এই খুদেকে। তার হাতের পোস্টারে লেখা, 'আমার ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করুন। শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন দিন।'
শিক্ষকদের মূল্য
প্রতিবাদীদের মাথায় মাথায় বুধবার ঢেকে গিয়েছিল লন্ডনের রাস্তাঘাট। সেখানেই শিক্ষকদের হাতে পোস্টারে লেখা ছিল, শিক্ষকতা এমন একটা পেশা যা অন্য পেশার ভিতও তৈরি করে দেয়। প্রায় তিন লাখ শিক্ষক ধর্মঘটে অংশ নেন বলে মনে করা হচ্ছে।
পড়ুয়াদের জন্য
পড়ুয়াদের কথা ভেবে শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ করুক সরকার। শিশুদের আরো ভালো ভবিষ্যতের জন্য এটা জরুরি। এমনই নানা পোস্টারে ছয়লাপ হয়ে গিয়েছিল প্রতিবাদ সমাবেশ।
প্রতিবাদ স্কটল্যান্ডেও
পাবলিক অ্যান্ড কমার্শিয়াল সার্ভিস ইউনিয়নের (পিসিএস) সদস্যরা স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে মোউন্ডে একটি সমাবেশে যোগ দেন। কর্মস্থলে অতিরিক্ত চাপ ও স্বল্প মজুরিতে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেয়ে যুক্তরাজ্যের নানা প্রান্তের হাজারো কর্মীরা পথে নামেন।
আরো পড়াতে চাই
ব্রিটেনে মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলেও বেতন বেড়েছে নিতান্তই স্বল্প হারে। ফলে, অ্যাম্বুলেন্স কর্মী, ট্রেন চালক, শিক্ষক, ডাককর্মী প্রত্যেকেই রীতিমতো ক্ষুব্ধ। কিন্তু নিজেদের কাজকে ভালবাসেন তারা। এই পেশায় থাকতে চান বলেই বেতন বৃদ্ধির দাবিতে প্রতিবাদ জানান অনেকে। তরুণী এক শিক্ষিকার হাতের পোস্টারেও সে কথাই লেখা। আরও ৩০ বছর শিক্ষকতা করতে চান, এমনটাই লেখা তার পোস্টারে।
প্রতিবাদ ওয়েলসে
ওয়েলসের টিইউসির সাধারণ সম্পাদক শাভ তাজ কার্ডিফ হাই স্কুলের বাইরে শিক্ষকদের প্রতিবাদের সময় নিজের মেয়েদেরও সঙ্গে এনেছেন। শিক্ষকদের তারা ভালবাসেন এমনটাই লেখা রয়েছে কিশোরী কন্যার পোস্টারে।
ভবিষ্যতের ভার
পেশাজীবীরা যতই ধর্মঘট করুন, দেশ ও বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার যে স্ট্র্যাটেজি নিয়েছে তাতে অনড় থাকার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী জিলিয়ান কেগান। ধর্মঘটে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে শিক্ষকদের দাবি, ভবিষ্যতের শিক্ষা গড়ে তোলার সময় এখন। তাই আন্দোলন চলবেই।
সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন
স্কটল্যান্ডের ক্ল্যাকম্যানানশায়ারের অ্যালোয়ার কাউন্সিল সদর দপ্তরের বাইরেও প্রতিবাদ সমাবেশ দেখা গিয়েছে। ব্রিটিশ সরকার সরকারি চাকুরিজীবীদের বেতন-ভাতার বিষয়ে বেশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সরকারের দাবি, তারা বেতন বাড়ানোর যে দাবি করছে তা পূরণ করা হলে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে। চাকুরিজীবীরা জানিয়েছেন, সরকার সিদ্ধান্ত না বদলালে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
আরো বড় জমায়েত
ধর্মঘটী শিক্ষকদের অনেকে নানা প্রান্ত থেকে লন্ডনের প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিতে হ্যামারস্মিথের টিউব ট্রেনে পোস্টার হাতে বসে রয়েছেন শিক্ষকরা।
বেতন বাড়াতেই হবে
লাখ লাখ মানুষের ভিড়ই প্রমাণ করে দিয়েছে সহজে কেউই হাল ছাড়বেন না। ধর্মঘটের কারণে যুক্তরাজ্যজুড়ে স্কুল বন্ধ রাখা হয়। ট্রেন চলাচলও অনেক জায়গায় বন্ধ ছিল। সীমান্তে নিরাপত্তা তল্লাশির জন্য সেনাবাহিনীকে মোতায়েন রাখা হয়। অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতিতে শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে অন্য কাজে যেতে চাইছেন কেউ কেউ। যা শিক্ষক সংগঠনকে চিন্তায় ফেলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, সবমিলিয়ে সুনাক সরকারের উপর চাপ বাড়ছে আরো।