সংবাদভাষ্য: ম্যার্কেল-এর উত্তরসূরি
১৭ ডিসেম্বর ২০১৩জবর খবর! উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হচ্ছেন৷ এই প্রথম জার্মান সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেবেন একজন নারী৷ এটা কি একটা এক্সপেরিমেন্ট? অবশ্যই নয়৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর মোক্ষম চাল এটা৷
জাহির করার অনেক সুযোগ
দৃঢ় ও উচ্চাভিলাষী বলে পরিচিত ৫৫ বছর বয়স্ক ফন ডেয়ার লাইয়েন বেশ গুরুত্বপূর্ণ এক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন, যা এতকাল পুরুষদের একচেটিয়া ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত ছিল৷ এমন পদ থেকে সমান্তরালভাবে পররাষ্ট্র নীতি পরিচালনা করা যায়৷ ফলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এসপিডি দলের ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার-এর পক্ষে কাজ চালানো মোটেই সহজ হবে না৷ কারণ আসল পররাষ্ট্র নীতি পরিচালনা করে চ্যান্সেলর-এর দপ্তর৷ অতএব ক্ষমতা ধরে রাখতে এটা ম্যার্কেল-এর বড় কৌশলগত চাল৷
গোঁয়ার ও ধৈর্যশীল
উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন-এর উপর থেকে স্পটলাইট আর সরবে না৷ জার্মান সেনাবাহিনীতে নারীদের অংশগ্রহণ এখন নতুন কোনো বিষয় নয়, যদিও তাদের অনেক দৈনন্দিন সমস্যা রয়েছে৷ কিন্তু পুরুষ-প্রধান এমন এক ক্ষেত্রের চারিদিকে কণ্টকিত পথ৷ তবে ছোটখাটো চেহারার সদা হাস্যময় এই নারীকে খাটো করে দেখার উপায় নেই৷ তিনি বেশ গোঁয়ার ও ধৈর্যশীল হিসেবে পরিচিত৷ নিজের পরিবারে ৫ ভাইকে সামলে চলতে হতো, তাই সহজে হার মানার পাত্রী নন ফন ডেয়ার লাইয়েন৷
এই একটি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আঙ্গেলা ম্যার্কেল তাক লাগিয়ে দিয়েছেন৷ বিগত সরকারে শ্রমমন্ত্রী হিসেবে কাজ করার পর ফন ডেয়ার লাইয়েন নতুন সরকারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন বলে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন৷ ডাক্তার হিসেবে সেটাই তাঁর পক্ষে উপযুক্ত হতো৷ আবদার করার তেমন সুযোগও তাঁর ছিল না৷ প্রায়ই ‘একলা চলো রে' নীতির কারণে ফন ডেয়ার লাইয়েন নিজের দলে মোটেই জনপ্রিয় নন৷ এমনকি চ্যান্সেলর ও দলীয় নেত্রী হিসেবে ম্যার্কেল-এর সঙ্গেও প্রায়ই তাঁর সংঘাত ঘটে৷ তা সত্ত্বেও ম্যার্কেল তাঁর পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নিলেন৷ কেন? মনে রাখতে হবে, ম্যার্কেল-এর সহযোগী বাভেরিয়ার সিএসইউ দল এবার তেমন চমকপ্রদ কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পায় নি৷ অর্থাৎ তাঁর সিদ্ধান্তের পেছনে নিশ্চয় কোনো কারণ রয়েছে৷
প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য পদোন্নতি
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষে যে নারীকে বসানো হচ্ছে, দলের মধ্যে ‘আধুনিক নারী' হিসেবে তাঁর ভাবমূর্তি বেশ উজ্জ্বল৷ তিনি এমন সব ভোটারদের মন ছুঁতে পারেন, সিডিইউ দল যাদের মন জয় করার চেষ্টা করছে৷ ৭ সন্তানের মা ফন ডেয়ার লাইয়েন ইংরিজি ও ফরাসি ভাষায় স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারেন৷ বেশ কয়েক বছর বিদেশে কাটিয়েছেন তিনি৷ নিজের স্মৃতিশক্তিহীন বাবারও দেখাশোনা করেন৷ কী ভাবে তিনি এতকিছু সামলান, অনেকের কাছেই সেটা একটা রহস্য৷
কয়েক বছর ধরে পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বীদের একে একে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পেরেছেন ম্যার্কেল৷ তাঁর উত্তরসূরি হবার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, দলের মধ্যে এমন কেউ আর অবশিষ্ট নেই৷ দলে ম্যার্কেল-ই সর্বাধিনায়ক৷ এবার এক নারী তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে৷
উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন চ্যান্সেলর হবার যোগ্য বলে অনেকেই মনে করেন৷ ম্যার্কেল-এর মতোই শক্ত মাটিতে গড়া তাঁর ব্যক্তিত্ব৷ ম্যার্কেল-ও কোনোদিন দলে সরাসরি তাঁর বিরোধীদের লাগাম টেনে ধরেন নি৷ তাঁরা নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছেন৷ ফন ডেয়ার লাইয়েন এমন এক অদ্ভুত দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারেন, যেখানে পদোন্নতি হয়তো লক্ষ্য পূরণের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ কারণ একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ জার্মানিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের মেয়াদ প্রায়ই খুব সীমিত হয়৷ তবে এবার হয়তো বিষয়টি অন্যদিকে গড়াতে পারে৷ তৃতীয় কার্যকালে ম্যার্কেল হয়তো নিজেই উত্তরসূরি খোঁজার কাজ শুরু করছেন৷