1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মেক্সিকোর নতুন সমস্যা ‘সারগ্যাসম'

১৬ জানুয়ারি ২০১৯

দারুণ সব সৈকত থাকার কারণে প্রতিবছর অনেক পর্যটক মেক্সিকোসহ ক্যারিবীয় দেশগুলোতে ঘুরতে যান৷ কিন্তু ইদানীং এক সমস্যা দেখা দেয়ায় পর্যটকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে৷ নতুন এই সমস্যার নাম ‘সারগ্যাসম', যা একধরনের সামুদ্রিক শৈবাল৷

https://p.dw.com/p/3Bb8A
Flechte Cetraria islandica
ছবি: Dorothee Killmann/Uni Koblenz

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এই শৈবালের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে৷ একে একটি বিশাল পরিবেশগত বিপর্যয় বলে মনে করছেন ইন্সটিটিউট অফ ওশান সায়েন্সেস অ্যান্ড লিমনোলোজির ব্রিগিটা ফান তুসেনব্রুক৷

তবে কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা এই বিপুল সংখ্যক সারগ্যাসমকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন৷ তাঁরা নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখছেন৷

উদ্যোক্তা ডেভিড খাওরেগি জানান, ‘‘আমরা সারগ্যাসম দিয়ে একটি পুরো শিল্পখাত গড়ে তুলতে চাই৷ আমার তো মনে হয় তখন আমাদের উলটো সারগ্যাসমের চাষ করতে হবে!''

সাধারণত বারমুদা ট্রায়াঙ্গল এলাকার সমুদ্রের পানিতে সারগ্যাসম ভেসে বেড়ায়৷ তবে কয়েক বছর ধরে ক্যারিবীয় এলাকার সৈকতে এর দেখা পাওয়া যাচ্ছে৷

বিপুল সংখ্যক সারগ্যাসমের কারণে ইকোসিস্টেমে পরিবর্তন আসছে৷ মেক্সিকোর পুয়ের্টো মোরেলস উপকূলে বিজ্ঞানীরা বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছেন৷

গবেষক ব্রিগিটা ফান তুসেনব্রুক বলেন, ‘‘আমরা এখনো সারগ্যাসম সম্পর্কে বেশি কিছু জানি না৷ তবে এটুকু বুঝতে পারছি, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এরা বেশি পুষ্টি পাচ্ছে৷ ফলে এদের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে৷ আমরা আরো বেশি তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছি৷''

সাগর পাড়ে জমা হওয়া সারগ্যাসম থেকে একসময় হাইড্রোজেন সালফাইড ছড়াতে শুরু করে, যার গন্ধ অনেকটা পচা ডিমের মতো৷ ফলে সেই সময় সৈকতে যাওয়া সম্ভব হয় না৷ গতবছর অবস্থা এতটাই বেগতিক হয়ে পড়েছিল যে, বার্বাডোজে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হয়েছিল৷

অনেক দেশের আয়ের একটা বড় উৎস পর্যটন থেকে আসায়, সেই দেশগুলো সারগ্যাসম নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে৷ যেমন, গতবছর মেক্সিকোর প্লায়া দেল কার্মেনে কম পর্যটক দেখা গেছে৷ ফলে সরকার সারগ্যাসমের হাত থেকে সৈকত বাঁচাতে উদ্যোগ নিয়েছে৷

উদ্যোক্তা ডেভিড খাওরেগি বলেন, ‘‘আমরা একটি উপায় বের করেছি, যাকে  সারগ্যাসমবিরোধী প্রতিবন্ধক বলে ডাকছি৷ এটা পানিতে ভেসে থেকে সারগ্যাসমকে সৈকত পর্যন্ত পৌঁছা থেকে বিরত রাখে৷''

নীচের অংশে এমন ছিদ্র করা হয়েছে, যেন মাছ কিংবা কচ্ছপ বের হয়ে যেতে পারে৷

ডেভিডের কোম্পানি কিছুদিন হলো সারগ্যাসমবিরোধী প্রতিবন্ধক উৎপাদন শুরু করেছে৷ আরো অনেক কোম্পানি এই কাজে নামার চিন্তা করছে৷

খাওরেগি বলেন, ‘‘সারগ্যাসম নিয়ে কী করা যায় তার খুব একটা অভিজ্ঞতা মেক্সিকোর নেই৷ ফলে আমাদের মতো অন্য খাত থেকে আসা কোম্পানিগুলো এটা সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে৷''

এই ল্যাবরেটরিতে সারগ্যাসম থেকে বায়োগ্যাস তৈরির চেষ্টা চলছে৷ যদিও শৈবাল থেকে বায়োগ্যাস তৈরির বিষয়টি নতুন নয়, এখানকার গবেষকরা বলছেন, সারগ্যাসমের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট মাশরুম মেশালে ভালো হয়৷

বায়োটেকনোলজিস্ট রাউল তাপিয়া বলেন, ‘‘মাশরুম দিয়ে আমরা সারগ্যাসমের বাইরের অংশের কোষপ্রাচীর ভাঙার চেষ্টা করি৷ ফলে কার্বন সংগ্রহের কাজটা একটু সহজ হয়৷ এছাড়া ৩০ শতাংশ বেশি বায়োগ্যাস পাওয়া যায়৷''

প্রাথমিক গবেষণায় সফলতা পাওয়া গেছে৷ গবেষকরা এখন বেশি পরিমাণে বায়োগ্যাস উৎপাদনের পরিকল্পনা করছেন৷ তবে এজন্য পর্যাপ্ত তহবিল প্রয়োজন৷

সারগ্যাসম দিয়ে পুয়ের্টো মোরেলসে একজন একটি বাড়িও তৈরি করেছেন৷ উদ্যোক্তা ওমর ভাসকেস বলেছেন, ‘‘ইটগুলো তৈরিতে সারগ্যাসম ব্যবহার করা হয়েছে৷ এছাড়া দুই ইটের মাঝেও সারগ্যাসম আছে৷ সব মিলিয়ে এই বাড়ির প্রায় ৬০ শতাংশই সারগ্যাসম দিয়ে তৈরি৷''

এই বাড়ি বানিয়ে আলোচিত হয়েছেন ভাসকেস৷ কারণ, এর আগে কেউ সারগ্যাসম দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেননি৷ ব্যবসায়ীরা তাঁর এই কৌশল আরো বড় পরিসরে প্রয়োগ করতে চান৷ তবে এভাবে নির্মিত বাড়ি কতটা মজবুত হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়৷

৪০ বর্গমিটারের এই বাড়িতে দুটো ঘর আর একটি টয়লেট আছে৷ যাঁদের পাকা বাড়ি তৈরির সামর্থ্য নেই তাঁরা ভাসকেসের মতো সারগ্যাসম দিয়ে বাড়ি বানাতে পারেন৷

উদ্যোক্তা ওমর ভাসকেস বলেন, ‘‘সমাজে পরিবর্তন আনার বিষয়টি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ৷ যেমন নতুন চাকরি সৃষ্টি, গরিব মানুষকে সহায়তা করা ইত্যাদি৷ ফলে আমার কৌশল নিয়ে আমি ব্যবসা করতে চাইছি না৷ কিন্তু অনেকেই এভাবে বাড়ি বানাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে শিগগিরই কোম্পানি গঠন করে বাড়ি তৈরি শুরুর কথা ভাবছি৷''

গত বছরের শেষ দিকে সারগ্যাসম আবার সাগরে ফিরে গেছে৷ তবে মে মাসে আবার ফিরে আসবে বলেই এলাকাবাসী মনে করছেন৷

কাটিয়া ড্যোনে/জেডএইচ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য