‘মুরাদ হাসানের ঘটনায় অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো হচ্ছে’
১০ ডিসেম্বর ২০২১ফাঁস হওয়া অডিওতে এক চিত্রনায়িকাকে ফোনে ধর্ষণের হুমকি দেয়া এবং তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে বর্ণবাদী মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি মন্ত্রিত্ব হারান সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ৷ শুক্রবার তিনি দেশ ছেড়ে ক্যানাডার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান৷ তার বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা না নেয়ায় এবং বিদেশ যেতে বাধা না দেয়ায় সরকারের সমালোচনা করেন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান৷
‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ ইউটিউব টকশোতে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তাকে এভাবে দেশ ছেড়ে চলে যেতে দেয়ার মানে হলো সে যে কালচার অব ইমপিউনিটি (বিচারহীনতার সংস্কৃতি) এনজয় করল এটা কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল৷ সে আইনি কোন বিচারের মুখোমুখি পড়ল না৷ তিনি যেসব কথাবার্তা বলেছেন সেগুলো যে শুধু অরাজনৈতিক, সামাজিক শিষ্টাচার বহির্ভূত তাই নয়, এগুলো কিন্তু অপরাধমূলক৷’’ তিনি মনে করেন এক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরই উচিত ছিল আইন প্রয়োগ করা৷ এভাবে ডা. মুরাদকে বিদেশে যেতে দেয়া খারাপ দৃষ্টান্ত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷
তবে তার সঙ্গে দ্বীমত পোষণ করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী৷ তিনি বলেন, ‘‘জাইমার বিরুদ্ধে উনি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক মন্তব্য করেছেন৷ কিন্তু জাইমা কি কোন মামলা করেছে? আমার জানামতে, না৷ আরেকটি যেটি অডিও মাহির সাথে এটা কনফিডেনশিয়াল ফোন আলাপ... সেখানে যদি ক্রাইম হয়েও থাকে মাহি উনি দুই বছরের মধ্যে কোন মামলা করেছেন বলে আমার মনে পড়ে না৷ যারা ভিকটিম তারা যদি মামলা না করে তাহলে সারা বাংলাদেশে আমরা কোথায় মামলা করব, কেন মামলা করব?’’
শামীম হায়দার মনে করেন, সার্বিকভাবে ডা. মুরাদ হাসানের ইস্যু নিয়ে সবাই অতিরিক্তি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন৷ তার মতে, যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ দণ্ডিত নন ততক্ষণ একজন নাগরিক নির্দোষ৷ এইক্ষেত্রে জনতুষ্টিমূলক আচরণে উল্টো মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ থাকে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি ক্যাটাগরিক্যালি মনে করি মন্ত্রী মুরাদের ক্ষেত্রে মনে হয় আমরা একটু ওভার রিঅ্যাক্ট করছি৷ তার মুখের ভাষা অত্যন্ত খারাপ৷ তার এই খারাপ ভাষা থাকলে রাজনীতি করা উচিত কিনা তা নিয়ে অ্যকাডেমিক বিতর্ক হতে পারে৷’’ এই সংসদ সদস্যের মতে প্রতিমন্ত্রী ও দলের পদ হারানোর মধ্য দিয়ে ডা. মুরাদ হাসান যথেষ্ট শাস্তি পেয়েছেন৷
সংসদ সদস্য হিসেবে মুরাদের বিদেশে যাওয়া নিয়ে কোন বাধা ছিল কিনা সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সংসদ অধিবেশন যখন চলবে তখন চিফ হুইপের একটা সুপারিশের ভিত্তিতে স্পিকার অনুমতি দিবেন৷ এটাও অনেক ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা ছিল না, একটা কাস্টম হয়ে দাঁড়িয়েছে৷’’
দুইজন বক্তাই কল রেকর্ড ফাঁসের সমালোচনা করেন৷ শামীম হায়দার পাটোয়ারীর মতে এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নিজেই নিজের ফাঁদে পড়ছে৷ কল ফাঁসের মধ্য দিয়ে মানুষকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷
রিজওয়ানা হাসান বর্তমান সরকারের আচরণকে কর্তৃত্বপরায়ণ হিসেবে অভিহিত করেন৷ তার মতে, সরকার কোন ক্ষেত্রেই জনমত মানছে না৷ বর্তমান রাজনীতি অসুস্থ ধারায় চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতি বলে দেশে কিছু দেখতে পাচ্ছি না, যেটা হচ্ছে তা হলো বিরোধী দলকে দমন করা৷’’
এফএস/এআই