পরিবর্তনের হাওয়া
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২স্বাধীন মিয়ানমারের ইতিহাসের প্রায় সবটা জুড়েই রয়েছে সামরিক শাসনের কালো ছায়া৷ এই অবস্থায় দেশের সেরা শিক্ষক, প্রকৌশলি, বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই বিদেশে নির্বাসনের জীবন বেছে নিয়েছিলেন৷ যে কোনো দেশ বা সমাজের ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি মোটেই মঙ্গলজনক হতে পারে না৷ কিন্তু মিয়ানমারের নতুন সরকারের রাজনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ এবং সেই উদ্যোগের প্রতি বিরোধী নেত্রী অং সান সু চি'র সমর্থন ও সক্রিয় সহযোগিতা বিদেশে বসবাসরত বর্মীদের মনেও সাড়া তুলেছে৷ সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের অনেকেই দেশে ফিরতে শুরু করেছেন৷ নতুন করে দেশ গড়ার কাজে তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে, এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷
অং নাইং ও'র কথাই ধরা যাক৷ প্রায় ২৫ বছর পর তিনি দেশে ফিরেছেন৷ ১৯৮৮ সালে ছাত্র আন্দোলনের সময় তাঁকে দেশ ছাড়তে হয়৷ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে তিনি আজ সফল এক শিক্ষাবিদ৷ মিয়ানমার বিশেষজ্ঞ রিচার্ড হর্সে সংবাদ সংস্থা এএফপি'কে বলেছেন, এমন দৃষ্টান্তের খবর পেয়ে বাকিরাও দেশে ফিরতে উৎসাহ পাচ্ছেন৷ তাঁর মতে, এই প্রবণতা মিয়ানমারের ভবিষ্যতের জন্যও অত্যন্ত জরুরি৷ বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিটি ধাপে পরিকল্পনা রূপায়নের জন্য দক্ষ ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী ও বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন৷ তাদের অভাব দেখা দিলে সংস্কারও বেশিদূর এগোতে পারবে না৷ গোটা বিশ্ব মিয়ানমারের সংস্কার প্রক্রিয়ার উপর নজর রাখছে৷ তারা নিষেধাজ্ঞাগুলিও একে একে তুলে নেবে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে৷ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল – আইএমএফ মিয়ানমারের অর্থনৈতিক উন্নতির সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল বলে মনে করে৷ তবে দুর্বল অবকাঠামো সহ অনেক অর্থনৈতিক সমস্যার দ্রুত সমাধান করাই সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ৷
গত কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারের শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা ছিল করুণ৷ সামরিক শাসকরা ছাত্র রাজনীতির ভয়ে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করে নি৷ দুর্নীতি, স্বজনপোষনের মতো সমস্যার কারণেও সেদেশে উপযুক্ত শ্রমিক বা কর্মীদের সংখ্যা কম৷ তার উপর ছিল নিপীড়ন ও পেশাগত সুযোগের অভাব৷ ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে দলে দলে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে৷ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও পশ্চিমা দেশগুলিতে ছড়িয়ে আছে তারা৷ এদের একটা বড় অংশকে দেশে টানতে সরকার একাধিক পদক্ষেপের ঘোষণা করেছে৷ এর মধ্যে আছে আয়করের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ছাড়, আইনি পথে দেশে অর্থ পাঠানোর ব্যবস্থা ইত্যাদি৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক