মিশরে প্লাস্টিক বর্জ্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম
১৮ জানুয়ারি ২০২৩আলেক্সান্দ্রিয়া মিশরের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর৷ সেখানকার সমুদ্র সৈকত স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়৷ সপ্তাহান্তে মানুষ সপরিবারে সৈকতে বেড়াতে আসেন৷ কিন্তু অনেকেই সেখানে আবর্জনা ফেলে যান৷
নুর হাজেম আবর্জনার স্তূপ দেখে বেশ কিছুকাল ধরে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন৷ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে মিলে তিনি মিশরের সৈকতগুলিতে বেড়ে চলা দূষণের মোকাবিলা করছেন৷ ‘ব্যানলাস্টিক ইজিপ্ট' নামের পরিবেশ সংরক্ষণ গোষ্ঠী গত প্রায় চার বছর ধরে সৈকত সাফাই অভিযান আয়োজন করে আসছে৷ তারা প্রায় দশ টন আবর্জনা উদ্ধার করেছে৷ তাদের কাজ অনেকেরই নজর টানছে৷ নুর মনে করেন, ‘‘এই মুহূর্তে হয়তো কোনো জোরালো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না৷ কিন্তু আমরা নতুন কোনো মানুষকে সেই কাজ শেখালে এই আইডিয়া আরও বড় হয়ে যায়৷ প্রত্যেক বার আমাদের কাজ দেখে সমস্যা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়ে৷''
মিশরে প্রতি বছর প্রায় ১,২০০ কোটি প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করা হয়৷ তার মধ্যে প্রায় অর্ধেক পথের ধারে বা গ্রামাঞ্চলে বর্জ্য হিসেবে পড়ে থাকে৷ বাকি প্লাস্টিক ভাগাড়ে জমা হয়৷ ব্যানলাস্টিক ইজিপ্টের স্বেচ্ছাসেবীরা সেই প্রবণতা বন্ধের আশা করছেন৷ তাদের সংগ্রহ করা বর্জ্য নতুন জীবন পায়৷ নুর হাজেম বলেন, ‘‘আগে এই ধরনের বর্জ্য ভাগাড়ে নিয়ে গিয়ে পুঁতে দেওয়া হতো৷ এখন আমরা ‘এনভারন অ্যাডাপ্ট' নামের এক কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতা শুরু করেছি৷ আমরা তাদের বর্জ্য সরবরাহ করি, তারা সেগুলিকে জ্বালানিতে রূপান্তরিত করে৷''
‘এনভারন অ্যাডাপ্ট' প্লাস্টিক বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে বছরে প্রায় এক হাজার টন জ্বালানি উৎপাদন করে৷ প্রথমে বর্জ্য আলাদা করে টুকরো টুকরো করা হয়৷ এক সিমেন্ট কোম্পানি উৎপাদন প্রক্রিয়া আরো টেকসই করে তুলতে প্লাস্টিক থেকে তৈরি জ্বালানি ব্যবহার করে৷ আলেক্সান্ড্রিয়া শহরের প্রায় দশ শতাংশ বর্জ্য এখন সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়৷ ‘এনভারন অ্যাডাপ্ট'-এর কর্ণধার ওমর হাসানাইন বলেন, ‘‘আমরা যে আবর্জনা নিয়ে কাজ করি, সেটি অত্যন্ত দূষিত৷ কারণ মিশরে উৎসেই বর্জ্য আলাদা করার কোনো ব্যবস্থা নেই৷ আমরা সেই উপাদান যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেলে এমন পদার্থ সৃষ্টি করি, যা জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির বিকল্প হতে পারে৷''
আম্র শালান ও খালেদ রাফাত প্লাস্টিক বর্জ্য জ্বালানিতে রূপান্তরিত করার থেকেও বেশি কিছু করতে চান৷ সেই লক্ষ্যে তাঁরা ২০২১ সালে ‘টাইলগ্রিন' নামের রিসাইকেল স্টার্টআপ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন৷
প্লাস্টিক ব্যাগ, কন্টেনার ও খাদ্য শিল্পের সিংগেল ইউজ প্লাস্টিক সংগ্রহ করে তাঁরা সেগুলি প্রক্রিয়াজাত করেন৷ সেই সব উপাদান পরিষ্কার করে, টুকরো টুকরো অবস্থায় গলিয়ে ইট বা টাইল তৈরি করা হয়৷ টাইলগ্রিনের সহ প্রতিষ্ঠাতা খালেদ রাফাত বলেন, ‘‘আমরা একেবারেই সিমেন্ট ও কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করি না৷ আমাদের মূল উপাদান হলো কম মূল্যের ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য৷ আমরা শুধু বালুর মতো প্রাকৃতিক উপাদান যোগ করি৷''
টাইল গ্রিন কোম্পানির দাবি, তাদের উৎপাদিত প্রতি ১০০ বর্গ মিটার প্লাস্টিক টাইল প্রায় চার টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড সাশ্রয় করে৷ তাছাড়া সেই টাইল নাকি সিমেন্টের থেকেও বেশি মজবুত৷ ক্রেতাদের সামনে হাতেনাতে তার প্রমাণ দেখানো হয়৷ খালেদ রাফাত বলেন, ‘‘আমাদের পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার সময় কোনো নির্গমন ঘটে না৷ অন্যদিকে সিমেন্ট উৎপাদনের সময় বিশাল মাত্রায় কার্বন নির্গমন হয় ও অনেক পানির প্রয়োজন হয়৷ আমাদের পণ্য পুরোপুরি রিসাইকেল করা যায় এবং কোনো বর্জ্যও সৃষ্টি হয় না৷''
এই স্টার্টআপ কোম্পানি প্রতি মাসে প্রায় ১,৪০০ বর্গ মিটার আয়তনের সাইডওয়াক উৎপাদন করে, যা বছরে প্রায় ৪৮০ টন পুনর্ব্যবহৃত সিংগেল ইউজ প্লাস্টিকের সমান৷
মিশরে প্রতি বছরে লাখ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্যের সঙ্গে তুলনা করলে সেই পরিমাণ বেশি নাও মনে হতে পারে৷ কিন্তু মিশরেও যে রিসাইক্লিং-এর সম্ভাবনা উজ্জ্বল, এমন উদ্যোগ তা স্পষ্ট করে দিচ্ছে৷
ব্যানলাস্টিক ইজিপ্টের স্বেচ্ছাসেবী আবর্জনা সংগ্রহকারীরা তা প্রমাণ করে দিচ্ছেন৷ তরুণ অ্যাক্টিভিস্টরা আলেক্সান্ড্রিয়ায় পরবর্তী সৈকত সাফাই অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷
ওমর/শ্নাইডার/এসবি