মিউজিয়ামের দর্শকই যখন ছবির বিষয়বস্তু
১৫ এপ্রিল ২০২১দর্শক যেন শিল্পকর্মেরই অংশ৷ ছবির সঙ্গে দর্শকের মিল চোখে পড়ার মতো৷ ছবির মোটিফ সাজানো মনে হলেও বাস্তবে কিন্তু আকস্মিকভাবে সেই মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করা হয়েছিল৷
স্টেফান ড্রাশান সেই সব মুহূর্ত আবিষ্কার করতে ভালোবাসেন৷ দিনে এক থেকে পাঁচটি ভালো ছবি তোলাই তাঁর লক্ষ্য৷ মিউজিয়ামের প্রবেশপথেই অস্ট্রিয়ার এই আলোকচিত্রী দর্শকদের চুলের বাহার ও বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেন৷ নিজের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে স্টেফান বলেন, ‘‘আমি আসলে আবিষ্কার করতে চাই, সেইসঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় তুলে ধরতে চাই৷ আমি কী দেখতে পাচ্ছি, কতটা দেখতে পাচ্ছি, কোন উপমা সৃষ্টি করতে পারি? আমার মতে, গোটা জীবনই আসলে আবিষ্কারের লক্ষ্যে ভ্রমণের মতো৷''
ইউরোপের বড় মিউজিয়ামগুলি স্টেফান ড্রাশানের দ্বিতীয় বাসার মতো৷ আজ তিনি জার্মানির পট্সডাম শহরের বার্বেরিনি মিউজিয়ামে এসে ‘পিপল ম্যাচিং আর্টওয়ার্কস' সিরিজের জন্য ছবি তুলছেন৷ ২০১৯ সালেই তার ছবির দ্বিতীয় বইটি প্রকাশিত হয়৷ ব্লগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রদর্শনীর কারণে আন্তর্জাতিক স্তরেও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন৷
কখনো চুলের বিন্যাস, কখনো বা নক্সা, রং অথবা শরীরের ভঙ্গির ভিত্তিতে তিনি মানুষ ও শিল্পের মধ্যে সংযোগ খুঁজে পান৷ একবার মিউজিয়ামে প্রবেশের পাঁচ মিনিট পরেই তিনি প্রথম ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেন৷ স্টেফান ড্রাশান বলেন, ‘‘ঘটনা ঘটতে হবে এবং তার মধ্যে একটা কাব্যিক শান্তি থাকতে হবে৷ না ধরে রাখলে যে কোনো মুহূর্ত নিমেষেই শেষ হয়ে যায়৷ আমার জুতো প্রায় কোনো শব্দ করে না৷ ফ্যাশনদূরস্ত জুতো পরলে ভালই লাগতো৷ কিন্তু এর থেকে নিঃশব্দ জুতো আর পাই নি৷''
একটি ফটোর জন্য তিনি প্রায় ১১ সেকেন্ড সময় পান৷ কোনো শিল্পকর্মের সামনে দর্শকের গড় সময়ও ঠিক তাই৷ ছবির মাধ্যমে আলোকচিত্রী অতীতকে বর্তমানে নিয়ে আসেন৷ ইটালির বারোক যুগের চিত্রশিল্পী কার্ভাজোর একটি ছবির ফটো সম্পর্কে তিনি খুবই সন্তুষ্ট৷
নিজের অজান্তেই দর্শক শিল্পকর্মের অংশ হয়ে ওঠেন৷ অন্য অনেক ফটো শিল্পীর মতো তিনি ছবি তোলার পর ঘষামাজার বিষয়টিকে তেমন আমল দেন না৷ নিজের ল্যাপটপে বড়জোর ছবি কিছুটা কাটছাঁট করেন৷ স্টেফান বলেন, ‘‘আমি কখনো কোনো ফটোর পেছনে এক মিনিটের বেশি সময় নষ্ট করি না৷ ফটোশপের মাধ্যমে রদবদল অথবা আগে থেকে পরিকল্পনা করা যায় বটে, কিন্তু আমি খাঁটি মুহূর্ত চাই৷''
বহু বছর ধরে মানুষ ও বস্তুর মধ্যে সংযোগ ঘটিয়ে চলেছেন এই শিল্পী৷ নিজের পেশার জন্য প্রথাগত শিক্ষা কখনো নেন নি৷ তাঁর অন্য একটি সিরিজের নাম ‘কার্স ম্যাচিং হোম'৷ তাতে গাড়ি ও বাড়ির মধ্যে মিল তুলে ধরা হয়েছে৷ ‘কাপল্স ম্যাচিং' সিরিজে ঘনিষ্ঠ দম্পতিদের ছবি দেখা যায়৷ কিছু ছবি তিনি দুই বছর ধরে নিজের কাছে রেখে তারপর প্রকাশ করেন৷ স্টেফানের মতে, ‘‘ফটোগ্রাফি, অথবা শুধু আমার তোলা ছবি আসলে জীবনের প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ হওয়া উচিত৷ তার মধ্যে প্যাশন বা আবেগের ছাপ থাকতে হবে৷ মানুষ অথবা শিল্পকর্মকে কখনো হেয় করে তুলে ধরা হয় নি৷ জীবন অনুভূতির আতসবাজির মতো হতে পারে৷''
নতুন শিল্পকর্মের অংশ হতে চাইলে পরের বার মিউজিয়ামে যাবার সময়ে জামাকাপড় ও চুলের বিন্যাসের কথা ভেবে বাসা থেকে বের হতে হবে৷
ক্রিস্টিনা লাউবে/এসবি