মাসাই আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী অলিম্পিক
কেনিয়া ও তাঞ্জানিয়া সীমান্তের জঙ্গলে বসবাসরত নৃ-গোষ্ঠীরা মাসাই নামে পরিচিত৷ নিলো-সাহারা ভাষার অন্যতম ‘মা’ ভাষায় কথা বলা এ আদিবাসীরা যাযাবর যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত৷ যুদ্ধের নানা কৌশল নিয়েই তাঁরা আয়োজন করে ‘মাসাই অলিম্পিক’৷
মাসাই হাই জাম্প
তাঞ্জানিয়া ও কেনিয়ার দাপ্তরিক ভাষা সোয়াহিলি শিখে নিয়ে বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে মাসাইরা৷ তবে তাঁদের নিজস্ব অলিম্পিকে অন্য কোনো দেশের আরোপিত খেলা নেই৷ নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোই গুরুত্ব পায় সেখানে৷ তেমনই একটি খেলা মাসাই হাই জাম্প৷ মাসাই যোদ্ধা টিপাপে লেকাতু-কে হাই জাম্প দিতে দেখা যাচ্ছে৷
নারীদের নৃত্য-গীত
মাসাই পুরুষরা খেলার মাধ্যমে অলিম্পিকে অংশ নেন। সেই সময় নারীদের ভূমিকা থাকে ভিন্নরকম৷ অলিম্পিক এলাকায় প্রবেশের পর থেকে তাঁরা নেচে-গেয়ে মাত করে আয়োজনকে৷ সেসময় তাঁরা সম্পূর্ণভাবে তাঁদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত থাকতেই ভালোবাসেন৷
খেলার নাম রুঙ্গু!
মুগুড় বা লাঠি ছুড়ে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকা একটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার খেলার নাম রুঙ্গু৷ এটি মাসাইদের ঐতিহ্যবাহী খেলার একটি, স্থানীয় যোদ্ধাদের দক্ষতা পরীক্ষা করার খেলাও এটি৷
পাঁচ হাজার মিটার দৌড়
আগে মাসাই যুবক যোদ্ধারা দৌড় বলতে বুঝতো ছুটে গিয়ে সিংহ হত্যা করে ফিরে আসা৷ এখন আধুনিক মাসাইরা অভয়ারণ্যের প্রাণী হত্যা বিরোধী৷ তাই এখন দৌড় বলতে শুধুই দৌড়৷ অলিম্পিকের এই দৌড়ে জিততে মাসাইদের ছুটতে হয় ৫ হাজার মিটার পর্যন্ত৷
বর্শা নিক্ষেপ
আপনি মাসাই যোদ্ধা আর বর্শা নিক্ষেপ জানেন না, এটা মেনে নেবেন না মাসাইরা৷ এমনটাই বলছিলেন মাসাই অ্যথলেট টিপাপে লেকাতু৷ তিনি এবার বেশ কয়েকটি ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন৷ হাই জাম্প ও বর্শা নিক্ষেপ তার মধ্যে অন্যতম৷
আর নয় সিংহ হত্যা
মাসাইদের একসময়কার পেশা ও নেশা ছিল সিংহ-হত্যা৷ এর ফলে আফ্রিকান জঙ্গলে থাকা সিংহ হুমকির মুখে পড়ে৷ এখন সিংহ হত্যাকে একেবারেই বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবি করেন কেনিয়ার বিশ্বরেকর্ডধারী দৌঁড়বিদ ডেভিড রুদিসা৷ মাসাই তরুণ তিমামা-ও জানান, এখন সিংহ হত্যা করে উপার্জনের পরিবর্তে আমরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করি৷ এতে জিতে যে অর্থ আয় হয় সেটি দিয়েই প্রয়োজন মেটাই৷
লালে রাঙা ঐতিহ্য
যে-কোনো উৎসবে লাল রঙ দিয়ে সাজা মাসাইদের ঐতিহ্য৷ মাথার চুল, মুখমণ্ডলে লাল রঙ দিয়ে এঁকে নিজেদেরকে সবার থেকে আলাদা করে রাখেন মাসাইরা৷ এই অলিম্পিক আয়োজনেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি৷
অলিম্পিক মানেই নাচ-গান
৮-১০ লাখ অধিবাসীর মাসাইদের সবচেয়ে বড় উৎসবে পরিণত হয়েছে এই অলিম্পিক৷ এখানে বাইরের অতিথিদের প্রবেশাধিকারও রয়েছে৷ অলিম্পিকে মাসাইদের নানা যোদ্ধা গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা প্রবেশ করেন নেচে- গেয়ে৷ অলিম্পিকে যেমন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা পতাকা মিছিল করে সমবেত হয়ে এগিয়ে যায় মাসাইরা, সেখানে নিজস্ব ঐতিহ্যের পোশাক পরে নেচে গেয়ে প্রবেশ করে৷