1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মালয়েশিয়া যেতে মানতে হবে যেসব নিয়ম

২২ ডিসেম্বর ২০২১

বাংলাদেশ থেকে কাজ নিয়ে আবারও মালয়েশিয়া যেতে পারবেন কর্মীরা৷ তিন বছর পর বাংলাদেশিদের জন্য বিভিন্ন খাতে সে সুযোগও তৈরি হয়েছে৷ তবে আগ্রহীদের কিছু নিয়মকানুন মানতে হবে৷

https://p.dw.com/p/44h1K
বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান চুক্তি সই করেন৷ছবি: Ministry of Expatriates' Welfare & Overseas Employment

ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায়, সম্প্রতি কর্মী নেওয়ার বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদের মালয়েশিয়া সফরে সমঝোতা চুক্তি সই হয়৷ আরও কিছু কাজ চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রবাসীকর্মী পাঠানো শুরু হবে বলে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান ইমরান আহমদ৷

কর্মীদের চুক্তি ও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন৷

মালয়েশিয়া কৃষি, শিল্প, সেবা, খনি, নির্মাণ ও গৃহস্থালি সেবাসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশি কর্মী নেবে এবং কর্মী নেওয়ার খরচ বহন করবে নিয়োগকর্তা৷

মালয়েশিয়া সরকার তাদের পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস' পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হওয়ার পর ২০১৬ সালে ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়৷ পাঁচ বছর মেয়াদী এই চুক্তির আওতায় লোক পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয় ১০টি জনশক্তি রপ্তানিকারক এজেন্সিকে৷

কিন্তু প্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগসাজশে একটি চক্র ওই ১০ এজেন্সিকে নিয়ে সিন্ডিকেট করে শ্রমিকদের কাছ থেকে দুই বছরে ২০০ কোটি রিঙ্গিত হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে৷ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশি কর্মীদের আর নতুন করে ভিসা দেয়নি মালয়েশিয়া৷

যেসব  খাতে  এবার কর্মী নিয়োগ

গত ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ থেকে আবার শ্রমিক নেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয় মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভা৷ মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান এক বিবৃতিতে বলেন, রাবার বাগান, কৃষি, শিল্প, সেবা, খনি ও পাথর আহরণ, নির্মাণ ও গৃহস্থালি সেবাসহ বিভিন্ন খাত বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে৷

শুধু রাবার বাগানে বিদেশি কর্মী নিয়োগের আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সব খাত উন্মুক্ত করার প্রস্তাবও সরকার অনুমোদন দিয়েছে বলে তিনি জানান৷এছাড়াও নতুন খাত হিসাবে গৃহকর্মী নিয়োগের পথও খুলে দেওয়া হয়েছে৷

বাংলাদেশ থেকে নিরাপত্তাকর্মীও নিয়োগ দেবে মালয়েশিয়া; এজন্য পুত্রাজায়ায় সোমবারের বৈঠকে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা বিন জয়েনউদ্দিনকে ধন্যবাদ জানান ইমরান৷

মালয়েশিয়ার প্রাইমারি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড কমোডিটিজ মন্ত্রীর বরাতে অক্টোবরে মালয় মেইলের এক খবরে বলা হয়, পাম গাছ রোপণের জন্য অল্প সময়ের মধ্যে ৩২ হাজার বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে৷ এসব নিয়োগের প্রাথমিক উৎস ইন্দোনেশিয়ার পর আসবে অন্যান্য দেশ৷

মালয়েশিয়া মোট কতজন লোক নিয়োগ দেবে- এ প্রশ্নে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা শুনি ৬-৭ লাখ শ্রমিক দরকার আছে ওদের৷ কিন্তু কোন খাতে দরকার সেটা আমরা জানি না৷ ওখান থেকে চাহিদা আসার পর জানতে পারব, দুই, তিন না পাঁচ লাখ পাঠাবো৷”

নিয়োগের  নিয়ম

শ্রমিক পাঠানোর চাহিদা দিয়ে মালয়েশিয়া থেকে এখনও প্রস্তাব আসেনি তবে দুয়েকদিনের মধ্যে প্রস্তাব আসবে বলে আশা করছেন ইমরান আহমদ৷

তিনি বলেন, ‘‘আমরা তিন বছর ওয়েট করেছি, আমরা চাই তিন দিনে হয়ে যাক কিন্তু আমিও জানি তিনদিনে হবে না সুতরাং আরেকটু সময় দেন৷”

সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী চাহিদা পাওয়ার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া এগোবে; নিয়োগকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চাইলে মালয়েশিয়া প্রান্তেও রিক্রুটিং এজেন্সিও নিয়োগ করতে পারবেন৷

বাংলাদেশ থেকে আগ্রহী সব কর্মীকে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ডেটাবেইজে অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হবে৷ মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের টার্গেট হল বিএমইটির ডেটাবেইজের মাধ্যমে আমরা লোক পাঠাবো এই মেকানিজম ওয়ার্কআউট করা হচ্ছে৷”

সরকার দেশের সক্রিয় এজেন্সিগুলোর তালিকা মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবে, সেখান থেকে বাছাই করা এজেন্সিগুলো এই প্রান্তে কর্মী নিয়োগের কাজ দেখভাল করবে৷

কতগুলো এজেন্সির তালিকা মালয়েশিয়ায় পাঠানো হবে সে সম্পর্কে প্রবাসীকল্যাণ সচিব সালেহীন বলেন, ‘‘আমার কাছে যারা বৈধ, তাদের তালিকা পাঠাবো, সেটা যদি ১০ জন হয়, তাহলে ১০ জন পাঠাবো আর যদি ১৯শ হয়, ১৯শ পাঠাব৷ ” 

মালয়েশিয়া  প্রান্তের  সব  খরচ  নিয়োগকর্তার

সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, মালয়েশিয়া প্রান্তের সব খরচ নিয়োগকর্তাকে দিতে হবে, যার মধ্যে আসা-যাওয়ার বিমানভাড়াও রয়েছে৷ সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, মালয়েশিয়ায় রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি নিয়োগ, মালয়েশিয়ায় আনয়ন, আবাসন, কর্মে নিয়োজন এবং কর্মীর নিজ দেশে ফেরত প্রেরণের খরচ বহন করবে৷

মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর বাংলাদেশি কর্মীর ইমিগ্রেশন ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ, ইনস্যুরেন্স সংক্রান্ত খরচ, কোভিড পরীক্ষার খরচ, কোয়ারেন্টিন সংক্রান্ত খরচসহ সব ব্যয় মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা বা কোম্পানি বহন করবে৷

নিয়োগকর্তা কর্মীর মানসম্মত আবাসন, বীমা, চিকিৎসা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করবে৷ প্রত্যেক কর্মীকে মালয়েশিয়ার এমপ্লয়িজ সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতায় কর্মকালীন দুর্ঘটনা বা কাজের কারণে শারীরিক সমস্যা হলে চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ পাবে৷

ফলে বাংলাদেশি কর্মী ফ্রি চিকিৎসা সুবিধা, অস্থায়ী অক্ষমতার সুবিধা, স্থায়ী অক্ষমতার সুবিধা, নিরবচ্ছিন্ন উপস্থিতি ভাতা, ডিপেন্ডেন্ট বেনিফিট, পুনর্বাসন সুবিধাসহ মালয়েশিয়ার আইনানুযায়ী প্রাপ্য সব সুবিধা পাবেন৷

শ্রমিক  যেসব  খরচ  দেবেন

বাংলাদেশ প্রান্তের কয়েকটি খরচ বহন করতে হবে শ্রমিককে; সেসব খরচ যাতে যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে সে বিষয়ে সরকার তৎপর থাকবে আশ্বাস দেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ও সচিব৷

এসব খরচের মধ্যে পাসপোর্টের ফি, দেশীয় এজেন্সির ফি, বিএমইটির ফি, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ফি এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফি রয়েছে৷

এসব খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে কি না- মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় মন্ত্রী ও সচিবকে৷ সচিব সালেহীন বলেন, ‘‘এখানে সরকারের সুস্পষ্ট আইন আছে, আমরা অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করতে পারি৷ নির্দেশনা একটা দিতে পারি৷

‘‘আমরা অবশ্যই সেটা আমাদের নতুন এমওইউ-র আলোকে নির্ধারণ করবো৷ একজন সর্বোচ্চ কত টাকা নিতে পারবেন৷ যেমন- স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একটা প্রতিষ্ঠান কত নিতে পারবে, রিক্রুটিং এজেন্সির চার্জ কত হবে৷” 

বাংলাদেশে এজেন্সির সার্ভিস চার্জ নির্ধারণের বিষয়ে মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, মন্ত্রণালয় সব নির্দেশনা এক জায়গায় যুক্ত করে একটি ‘গাইডলাইন' দেবে৷ সার্ভিস চার্জ দুই বা তিন মাসের বেতনের বেশি হওয়া উচিত না৷ মালয়েশিয়া প্রান্তের খরচ নিয়োগকর্তা দেওয়ার ফলে কর্মীদের খরচ এবার অনেক কমে আসার কথা ৷

দালাল  থেকে  সাবধান'

কর্মী নিয়োগের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালরা কর্মীদের পাসপোর্ট সংগ্রহ এবং বড় অঙ্কের টাকা নেওয়ার বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী কর্মীদের কাউকে সরকারের চূড়ান্ত নির্দেশনার বাইরে না যেতে এবং অতিরিক্ত টাকা জমা না দেওয়ার আহ্বান জানান৷ খুব শীঘ্রই সুস্পষ্ট বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই যে (টাকা) নেওয়া হচ্ছে, সেটা অবৈধ ৷ আমরা খুব কড়া ভাষায় বলবো,  আমি আশা করি, মানুষ এই কথাটা শুনবে৷

সকলের জানার সুবিধার্থে নির্দেশনায় পুরো সিস্টেম সেট করে দেওয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রী ইমরান৷

এ বিষয়ে সচিব বলেন, ‘‘আমরা কর্মী পাঠাবো, আমাদের ডেটাবেইজ থেকে এবং আমাদের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত কর্মী যেন একটি পয়সাও দালালকে না দেন৷ যখন প্রক্রিয়া শুরু হবে সরকারই বলবে৷ আমাদের ডেটাবেজে অন্তর্ভুক্ত না হলে কোনো কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারবে না৷’’ 

এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)  

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য