1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিযুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কতটা গণতান্ত্রিক?

২৭ অক্টোবর ২০২৪

পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে ৫ নভেম্বরে ভোট দেবেন অ্যামেরিকানরা৷ আর সেই নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া প্রার্থী কিন্তু বিজয়ী নাও হতে পারেন৷ মার্কিন গণতন্ত্রের আলাদা কিছু দিক রয়েছে, আর সেগুলো নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন৷

https://p.dw.com/p/4mHWT
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের একটি ভোটকেন্দ্র৷
৫ নভেম্বর নিজেদের জন্য পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে ভোট দেবেন অ্যামেরিকানরা৷ছবি: Paul Sancya/AP/picture alliance

দীর্ঘদিন ধরে, নিজেদের গণতন্ত্রকে অনুকরণীয় হিসাবে দেখিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ বিশেষ করে, স্বাধীনতা অর্জনের পরে কিংবা স্বৈরশাসককে সরিয়ে দেয়ার পর গণতন্ত্র পুনর্গঠনে কোনো দেশের জন্য অ্যামেরিকা উদাহরণ হতে পারে৷

জন এফ কেনেডি থেকে বারাক ওবামা পর্যন্ত সব রাজনীতিবিদেরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি প্রদীপ্ত বাতিঘর হিসাবে তুলে ধরেছেন, সবার নজর কেড়েছেন৷ ১৯৬১ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে কেনেডি বলেছিলেন, বিশ্ব এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এর গণতন্ত্রের দিকে তাকিয়ে আছে এবং ‘‘প্রতিটি শাখায়, প্রতিটি স্তরে, জাতীয়, রাজ্য এবং স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের সরকারগুলোকে হতে হবে বাতিঘর বা সিটি আপঅন আ হিল৷''

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি সারা বিশ্বের চোখ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের দিকে৷ সেদিন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের উসকানিতে ডানপন্থি চরমপন্থিরা ইউএস ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালায়৷ ২০২০ সালের নির্বাচনের পরে গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরকে বাধা দেয়াই ছিল তাদের উদ্দেশ্য৷

২০২৩ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় সংবাদ সংস্থা এপির একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ মনে করেন অ্যামেরিকাতে গণতন্ত্র খুব ভালোভাবে চলছে৷

তাহলে, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে দেশটির গণতন্ত্রের অবস্থা কী?

গণতন্ত্রের প্রতি আস্থায় অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে না মার্কিন কংগ্রেস

ম্যাককোর্টনি ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসির ডিরেক্টর এবং পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক মাইকেল বার্কম্যান ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, এটা বলতেই পারি, অ্যামেরিকানদের এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি খুব বেশি আস্থা নেই৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘তারা এমন একটি কংগ্রেসের দিকে তাকিয়ে আছেন, যা মোটেও ঠিক মতো কাজ করছে না এবং তারা এমন কিছু জটিল সমস্যা দেখছেন, যা সরকার আসলেই সমাধান করেনি৷ যেমন: আগ্নেয়াস্ত্রকেন্দ্রিক সহিংসতা ও জলবায়ু পরিবর্তন৷''

নেতা নির্বাচনে নিজেদের অক্ষমতার কারণে, প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান ২০২৩ সালের অক্টোবরে কয়েক সপ্তাহের জন্য কংগ্রেসকে পঙ্গু করে দিয়েছিল৷ কিন্তু এমন বাধা ছাড়াই কংগ্রেসের হাউস বা সিনেট থেকে আইন প্রণয়নের মতো জরুরি বিষয়গুলোও চলছে ধীরগতিতে৷

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের গভর্ন্যান্স স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো ভ্যানেসা উইলিয়ামসন ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘সিংহভাগ জনসমর্থন পেয়েও আইন পাস করা খুব কঠিন, কখনও কখনও অসম্ভব৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘ওয়াশিংটনে কাজের ক্ষেত্রে গুরুতর অবহেলা রয়েছে৷''

সবশেষ নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর দেখেনি যুক্তরাষ্ট্র

কঠোর মেরুকরণ, ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যে এক সাগর দূরত্ব—এর অর্থ হলো, নির্বাচিত সরকারের নেয়া অনেক সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট থাকে গোটা দেশের অর্ধেক৷

২০২০ সালের নির্বাচনের ফল নিয়ে ট্রাম্পের নেতৃত্বে অনেক রিপাবলিকান বেশ অসন্তুষ্ট ছিলেন৷ তারা দাবি করেছেন, নির্বাচনে তাদের উপেক্ষা করার চেষ্টা হয়েছে৷ এমনকি, নির্বাচনটি তাদের কাছ থেকে ‘চুরি' করেছে বলেও দাবি ছিল তাদের৷ ফলে ক্যাপিটল ভবনে আক্রমণ করতেও পিছপা হয়নি তারা৷ শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর গণতন্ত্রণের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমন ঘটনার নজির নেই বললেই চলে৷

বার্কম্যান বলেন, ‘‘আমিও মনে করি, ৬ জানুয়ারি যা ঘটেছিল এবং নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে একটি পক্ষের অস্বীকৃতি গণতন্ত্রের জন্য খুবই ক্ষতিকর৷ কারণ নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয়া গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য অনেক বেশি জরুরি৷''

হ্যারিস ও ট্রাম্প৷
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের লড়াইয়ে কমলা হ্যারিস ও ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে কে হাসবেন বিজয়ীর হাসি?ছবি: Carlos Osorio/Evan Vucci/dpa/picture alliance

ইলেক্টোরাল কলেজ: ভোটে জয়ী হওয়াই মুখ্য নয়

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা কমে গেলেও তা অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়৷ কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশে এমনটা হয়তো কেউই আশা করেন না৷

উইলিয়ামসন বলেন, ‘‘গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ার সাম্প্রতিক উদাহরণগুলো ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে অনেক দীর্ঘস্থায়ী গণতন্ত্রবিরোধী চর্চা রয়েছে৷''

এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিজয়ী হতে সর্বাধিক ভোট পাওয়া যথেষ্ট নয়৷

২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প, কিন্তু তার প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটন তার চেয়ে ২৯ লাখ বেশি ভোট পেয়েছেন৷ এমন পরিস্থিতির মূলে রয়েছে ইলেক্টোরাল কলেজ৷

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ৫০টি রাজ্যের প্রতিটিতে জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেক্টোরাল কলেজ রয়েছে৷ যে প্রার্থী একটি রাজ্যের জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাবেন, তিনি সেই রাজ্যের সব ইলেক্টোরাল কলেজ নিজের পকেটে পুরবেন৷ একটু কঠিন লাগছে? উদাহরণটি দেখে নিন:

সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫৪টি ইলেক্টোরাল কলেজে রয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে প্রার্থী ক্যালিফোর্নিয়ায় বেশি ভোট পাবেন, রাজ্যের সব ইলেক্টোরাল কলেজ তিনিই পাবেন৷ ভারমন্ট বা সাউথ ডাকোটার মতো ছোট রাজ্যে ইলেক্টোরাল কলেজ মাত্র তিনটি করে৷ সেখানেও একই নিয়ম, ভোটে যিনি জিতবেন তিনটি ইলেক্টোরালই তার৷

প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হতে একজন প্রার্থীকে অবশ্যই ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট পেতে হয়৷ ফলে, জনগণের ভোট কেউ বেশি পেলেও, ইলেক্টোরাল ভোটের কারণে কম ভোট পাওয়া প্রার্থী দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন৷

মার্কিন সিনেট—‘ভীষণ অগণতান্ত্রিক একটি প্রতিষ্ঠান'

মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থার আরেকটি দিক হলো, কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ সিনেট নিখুঁত গণতন্ত্রকে প্রতিফলিত করে না৷ একটি রাজ্যের জনসংখ্যা যাই হোক না কেন, প্রতিটি মার্কিন রাজ্যের চেম্বারে দুই জন সিনেটর থাকেন৷

এর মানে হলো, কিছু রাজ্যে একজন সিনেটর কয়েক লাখ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন৷ আবার কোনো ক্ষেত্রে কোটি মানুষের জন্যও সিনেটরের সংখ্যা মাত্র একজন৷ সিনেটে যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন প্রতিটি সিনেটরের ভোটও সমান, যদিও তারা বিভিন্ন সংখ্যার মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন৷

বার্কম্যান সিনেটকে ‘‘একটি ভীষণ অগণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান'' বলে অভিহিত করেছেন৷ উইলিয়ামসন বলেন, সিনেটকে যেভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে, তাতে, ‘‘আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমাদের জনবহুল অঞ্চলগুলোর জনগণের আকাঙ্ক্ষা ঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না৷''

তবুও বাড়ছে অংশগ্রহণ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের জন্য হয়তো মডেল নয়, তবুও অ্যামেরিকানরা এই পদ্ধতিকে ছেড়ে দেননি৷ বরং আরো অনেক মানুষ এই পদ্ধতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন৷

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৫ শতাংশের বেশি৷ এটি শত বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতির রেকর্ড৷

বার্কম্যান বলেন, ‘‘আপনি দেখতেই পাচ্ছেন৷ গত ৮/১০ বছরে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বেড়েছে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি মনে করি এটি গুরুত্বপূর্ণ৷''

ক্লারা ব্লাইকার/টিএম

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান