মাওবাদী নেতা কিষেনজি নিহত
২৪ নভেম্বর ২০১১পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খন্ড সীমান্তে জামবনির বুড়িশোলের জঙ্গলে মাত্র আধ ঘন্টার গুলির লড়াই৷ শোনা যাচ্ছে, তাতেই ঘায়েল হয়েছেন মাওবাদীদের সর্বোচ্চ নেতা কিষেনজি৷ গত তিন বছরে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের যাবতীয় তৎপরতার ছক কষেছেন যিনি, নিরাপত্তাবাহিনীর নাকের ডগা দিয়ে লাগাতার নাশকতা ঘটিয়ে রাজ্য সরকারকে নাস্তানাবুদ করা হয়েছে যার নির্দেশে, এবং পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে একের পর এক রাজনৈতিক কর্মীকে খুন করাই ছিল যাঁর প্রভাব বিস্তারের চেনা ছক, সেই কিষেনজির এভাবে সংঘর্ষে প্রাণ হারানোর খবরে শোরগোল প্রশাসনিক মহলে৷ তবে নিহত ব্যক্তি আদতেই কিষেনজি কিনা, সে নিয়ে কিছুটা সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে, যতক্ষণ না দেহটি ঠিকঠাক শনাক্ত হচ্ছে৷
মাওবাদীদের বিরুদ্ধে গত তিন দিন ধরেই ব্যাপক অভিযান শুরু করেছিল যৌথ বাহিনী৷ সঙ্গে কোবরা কম্যান্ডোরা৷ কুশবনীর জঙ্গলে গতকাল থেকে শুরু হয়েছিল যৌথ বাহিনীর তল্লাসি অভিযান৷ নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতেই হানা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেসময় তিন মাওবাদী সন্দেহভাজন ছাড়া নেতাদের কাউকে ধরা যায়নি৷ কিন্তু ধৃত তিনজনকে জেরা করে যৌথ বাহিনী নিশ্চিত হয় যে, কিষেনজি এবং মাও নেত্রী ও কিষেনজির সর্বক্ষণের সঙ্গিনী সুচিত্রা মাহাতো কাছাকাছিই কোথাও গা ঢাকা দিয়ে আছেন৷ যে কারণে গত কাল সারা রাত ধরে জঙ্গলে অভিযান চলে৷ এদিন সকালে কিষেনজির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এক ছাত্র ধর্মেন্দ্র মাহাতো-র বাড়ি থেকে পাওয়া যায় কিষেনজির ল্যাপটপের খালি ব্যাগ, সুচিত্রা মাহাতোর লেখা কিছু ব্যক্তিগত চিঠি, সেই সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যের মানচিত্র৷ এর পরই গোটা এলাকা ঘিরে নিয়ে জোরদার হয় অভিযান৷ দুপুর নাগাদ বুড়িশোলের জঙ্গলে কোবরা কম্যান্ডোরা ঢুকতেই গুলি ছুটে আসে৷ পাল্টা জবাব দেয় কম্যান্ডোরা৷ একটা সময় গুলি থেমে যেতেই যৌথ বাহিনী জঙ্গলের ভিতরে গিয়ে দেখেন কিষেনজির মৃতদেহ, পাশে তাঁর একে ফর্টিসেভেন রাইফেল৷
কিষেনজি ছিলেন অন্ধ্রের নকশালপন্থী সংগঠন পিপলস ওয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, এবং মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা৷ মাওবাদীদের সামরিক শাখার দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷ শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খন্ড, এমনকী উত্তর-পূর্ব ভারতের অসম, ত্রিপুরা পর্যন্ত মাওবাদীদের যে তৎপরতা, তার মূল পরিচালক ছিলেন কিষেনজি৷
২০১০ সালের মার্চে লক্ষ্মণপুরের জঙ্গলে পুলিশের সঙ্গে এক সংঘর্ষে কিষেনজির পায়ে গুলি লাগে৷ তখন থেকেই তিনি পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে ঘাঁটি গাড়েন মূলত ওড়িশায় এবং ঝাড়খন্ডে৷ সেখান থেকেই তিনি এ রাজ্যে মাওবাদীদের নিয়ন্ত্রণ করতেন৷ ২০১১ সালের মার্চে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যান এ রাজ্যের মাওবাদী নেতা শশধর মাহাতো৷ তখন থেকেই মাওবাদীদের দাপট ক্রমশ কমতে শুরু করে৷ এর পর তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় এলে জনসমর্থনও হারাতে শুরু করে মাওবাদীরা৷
প্রতিবেদন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক