মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে সোচ্চার তারা
অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বিভিন্ন জায়গায় আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ গণপিটুনি, জোরপূর্বক পদত্যাগ করানোসহ নানা ধরনের ঘটনার সাক্ষী হয়েছে দেশ৷ এসব ঘটনা অবিলম্বে বন্ধ করার ওপর জোর দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা৷
আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক ও বুদ্ধিজীবী
এটা খুবই আপত্তিকর, অগ্রহণযোগ্য এবং নিন্দনীয় ঘটনা৷ বিষয়টা উদ্বেগেরও৷ বিভিন্ন জায়গায় গোষ্ঠীগত আক্রমণ হচ্ছে৷ ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে ইভেন্ট খুলে মাজার-মন্দিরে হামলা কিংবা কাউকে পিটিয়ে মারা উদ্বেগের৷ বৈষম্যবিরোধী সমাজ গঠনে ব্যক্তি পরিচয়ের কারণে হামলা হতে পারে না৷
ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, সংগীতশিল্পী
ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ হত্যা ভয়ঙ্কর একটি অপরাধ৷ শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করা, বিচারের নামে প্রহসনমূলক৷ ‘মব জাস্টিস’ আসলে কোনোরকম জাস্টিসই না৷ জাস্টিস আর মব, এই দুইটা কখনো একসঙ্গে যায় না৷ এটা খুবই স্ববিরোধী৷
ব্যারিস্টার সারা হোসেন, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী
৫ আগস্টের পর আমরা দেখছি কোনো কোনো ব্যক্তি অন্যের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছেন৷ অনেক স্কুল-কলেজে কাউকে কাউকে জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে৷ এগুলোকে যে ‘মব জাস্টিস’ বলা হচ্ছে, সেটা ঠিক না৷ কারণ, এগুলো তো কোনো ধরনের জাস্টিস না৷ এটা স্রেফ নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া৷ এটা অবিচার, অন্যায়৷ গত কয়েক সপ্তাহে আমরা এমন কিছু ঘটনা দেখেছি, যেগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত৷
মনোজ প্রামাণিক, অভিনেতা, চলচ্চিত্র শিক্ষক
‘মব জাস্টিস’ অবশ্যই ভালো না৷ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া অপরাধ৷ কোনো বিষয়ে মন্তব্য করা যেতে পারে, সেই বাকস্বাধীনতা আছে৷ কিন্তু কারো বিচার করার অধিকার ব্যক্তির নেই৷ এমনটা হলে বিচারব্যবস্থা থাকারই বা কী দরকার!
ইসরাত জাহান বীথি, মনোবিজ্ঞানী
দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হলো মব জাস্টিস৷ মানে, এতদিন পারিনি আমাকে এক্ষুণিই করতে হবে৷ মানুষ যখন দীর্ঘদিন ধরে হতাশ থাকে, তখন আর স্বাভাবিক জ্ঞান কাজ করে না৷ তখনই এক্ষুণি করে ফেলার বাসনা জাগে৷ মনে হয় এটাই এখন একমাত্র সমাধান৷ এ থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে প্রথমে সমাজের গণমান্যদের নিয়ে একসঙ্গে বসতে হবে৷ সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে৷ ব্যক্তি চিকিৎসার চেয়ে এখানে সামাজিক ট্রিটমেন্ট মুখ্য৷
অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মধ্যে হতাশা ও বিচারহীনতার কারণে এই ‘মব জাস্টিস’ চলছে৷ কিন্তু এখানে আমি দায়িত্বহীনতাও দেখতে পাই৷ এখন যে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে তারাও এই বিষয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না৷ তারা যদি দ্রুত ‘মব জাস্টিসের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ম্যাসাকার হয়ে যাবে৷
ইশরাত হাসান, আইনজীবী
মব যদি কাউকে আক্রমণ করে সেটা বেআইনি৷ সেক্ষেত্রে মব শব্দটির সাথে জাস্টিস শব্দটি বেমানান৷ মব কর্তৃক আইন হাতে তুলে নেয়া কোনোভাবেই আইন সমর্থন করে না৷ যে-কোনো অপরাধের দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করতে হবে৷ প্রকৃত অপরাধীর সাজা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে৷ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে৷ অপরাধ করলে যত বড়ই হোক কেউ পার পাবে না, এই বিষয়টি সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে৷
অধ্যাপক ড. নেহাল করিম, সমাজবিজ্ঞানী
বাংলাদেশে শতকরা ৯৯ ভাগ লোকের সামাজিকীকরণ ঠিকমতো হয়নি৷ ফলে সব পেশাতেই অসামঞ্জস্য আছে, বৈষম্য আছে৷ ছাত্রদের অনেক বেশি ‘প্রশ্রয়’ দেয়া হয়েছে৷ তাদের উপদেষ্টা করা হয়েছে৷ তাদের সহ-উপদেষ্টা করা যেতো৷ এরা দেখেছে তারা বিক্ষোভ করলে আইন বদলায়৷ এটা সমাজের সর্বস্তরে সঞ্চারিত হচ্ছে৷ কাউকে পছন্দ না হলে টেনে নামানো হচ্ছে৷ এদের এখনই থামাতে হবে, নয়তো বর্বরতা আরো বাড়বে৷