মধ্যপ্রাচ্য চলচ্চিত্র উত্সব ২০০৮
২৭ অক্টোবর ২০০৮জেইন ফন্ডা, মেলানি গ্রিফিথ, কাথরিন দেনিয়ুভ ও চলচ্চিত্র জগতের আরো অনেক তারকা পদচারণা করে গেলেন লাল গালিচার ওপর দিয়ে৷
আমিরাতের মত একটি ইসলামী দেশে চলচ্চিত্র উত্সব হওয়া রীতিমত বিস্ময়ের ব্যাপার৷ যেখানে আশেপাশের অনেক আরব দেশে একটা সিনেমা হল পর্যন্ত নেই৷ এই প্রশ্ন জাগতে পারে মানুষের মনে৷ কিন্তু আমিরাতের শেখরা এই সংকীর্ণতা থেকে বের হয়ে আসতে চাইছেন এখন৷ চাইছেন বিশ্বের চলচ্চিত্র অঙ্গনের সঙ্গে যোগসূত্র রচনা করতে৷
আরবের বিভিন্ন দেশে রয়েছে চলচ্চিত্র শিল্পের এক দীর্ঘ ইতিহাস৷ চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু থেকেই মিশরে গড়ে উঠেছিল ইউরোপের সমমানের এক চলচ্চিত্র শিল্প৷ ৪০-এর দশকে সিরিয়ার কালো কেশের নীল নয়না চিত্রতারকা আসমাহান সাড়া জাগিয়েছিলেন আরব বিশ্বের চিত্রাঙ্গনে৷ জয় করেছিলেন মানুষের মন৷ তাঁর হাসি কান্না মান অভিমানে দর্শকরাও হতেন আপ্লুত৷ সেই সময় নিজেদের দেশের এই ধরনের ছবিই মাতিয়ে রাখতো আরব বিশ্বের দর্শকদের৷ কিন্তু এক সময় তা ক্ষীয়মাণ হতে থাকে৷ বিশেষ করে হলিউডের চিত্রশিল্প যখন থেকে তার বিশাল চিত্রভান্ডার নিয়ে এগিয়ে যাওয়া শুরু করে৷ এর সঙ্গে পাল্লা দেয়া সম্ভব হয়নি আরবের চলচ্চিত্র জগতের পক্ষে৷
ইদানীং আবার আরবের চলচ্চিত্রাঙ্গনকে চাঙ্গা করার জন্য উত্সাহ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে৷ তবে এবার মিশরে নয়৷ যে দেশটি থেকে এক সময় চলচ্চিত্রের বার্তা বয়ে যেত অন্যান্য আরব দেশে৷ এবারের উদ্যোক্তা উপসাগরীয় দেশগুলি৷ স্থানীয় দর্শকদের কাছে টানতে লক্ষ লক্ষ ইউরো ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে নানা ধরনের টিভি সিরিজ৷ "মরু বালুকায় সংঘাত"-এর মত ছবিগুলি সিনেমার জন্য নির্মিত না হলেও টেলিভিশনের দর্শকদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে৷
উপসাগরীয় আরব দেশগুলিতে সিনেমাহলের জন্য বড় বড় ছায়াছবি এখন পর্যন্ত অবশ্য নির্মিত হয়নি৷ আর এজন্যই এসব দেশে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব হওয়া প্রয়োজন, যা সারা বিশ্বের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে৷ এর ফলে দেশীয় ছায়াছবি নির্মাণের পথও প্রশস্ত হবে৷ এক্ষেত্রে যারা এগিয়ে আসতে চাইছেন তাঁদের আদর্শ কিন্তু হলিউডের বিশাল চলচ্চিত্র জগত নয়৷ ইউরোপের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে কাহিনী চিত্র নির্মাণে আগ্রহী তাঁরা৷ বলেন লেবাননের সিনেমা বিশেষজ্ঞ খালেদ মাশজৌদ৷ তিনি আরো জানালেনঃ আরব অঞ্চলের অনেক চিত্রনির্মাতার ছায়াছবিতে লক্ষ্য করা যায় পাশ্চাত্যের প্রভাব৷ যেমনটি দেখা যায় লেবাননের সফল চিত্রপরিচালিকা নাদিনে লাবাকি নির্মিত ছবিতে৷ তাঁর ছবির কলাকৌশল, সাজসজ্জা ও সংলাপে স্পেনের খ্যাতনামা পরিচালক পেড্রো আলমোদোভার-এর প্রভাব নজর এড়ায় না৷ আরবের অন্যান্য উঠতি শিল্পীদের মধ্যেও রয়েছে এই ধরনের অনুকরণের প্রবণতা৷
মধ্যপ্রাচ্য আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবটি ছিল আরব জগতের জন্য এক বিশাল ব্যাপার৷ আবু ধাবির দামী ঝকঝকে হোটেল এমিরাত প্যালেস-এর বিশাল হল সারা বিশ্বের নামী দামী শিল্পীদের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠেছিল৷ জার্মানির ডোরিস ড্যোয়েরি-র "চেরি ফুল" ছবিটিও এখানে অংশ নেয়৷
এই উত্সবে শ্রেষ্ঠ ছবি হিসাবে পুরস্কার পেয়েছে স্টিভ জ্যাকবস-এর ডিসগ্রেস ছবিটি৷ মিশরের অভিনেত্রী ইলহাম শাহীন এবং ইটালির অভিনেতা লুকা জিংগারেটিকে দেয়া হয়েছে সেরা অভিনেত্রী ও অভিনেতার পুরস্কার৷