মণিপুরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন, সহিংসতা চলছে
১৬ জুন ২০২৩মণিপুরের ইম্ফলে প্রায় এক হাজার দুইশ মানুষ গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজকুমার রঞ্জন সিংয়ের বাড়ি আক্রমণ করে। বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রক্ষীরা জানিয়েছেন, চারদিক থেকে পেট্রোল বোমা মারা হয়। বাড়িতে আগুন ধরে যায় এবং কিছুক্ষণের মধ্যে তা পুরোপুরি পুড়ে যায়।
নিরাপত্তারক্ষীদের বক্তব্য, এত বেশিজন বিক্ষোভকারী ছিল যে, তারা পরিস্থিতি সামলাতে পারেননি। কারণ, তারা সংখ্যায় ছিলেন মাত্র কয়েকজন। ফলে উন্মত্ত জনতা মন্ত্রীর বাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যায়। ইম্ফলে এখন কারফিউ চলছে। তার মধ্যেই এত মানুষ জড়ো হয়ে মন্ত্রীর বাড়ি আক্রমণ করে।
রাজকুমার রঞ্জন সিং হলেন পররাষ্ট্র ও শিক্ষার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। যখন এই ঘটনা ঘটে, তখন তিনি মণিপুর থেকে অনেক দূরে কোচিতে সরকারি কাজে ব্যস্ত ছিলেন। রাজকুমার রঞ্জন সিং বলেছেন, ''প্রথমে আমি কলকাতা গিয়েছিলাম একটি বৈঠকে যোগ দিতে। তারপর সেখান থেকে কোচি আসি। তার আগে আমি আবার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে মণিপুর নিয়ে আমার মতামত জানিয়েছি। রাতে খবর পাই, আমার বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। কেন এই কাজ করা হলো, জানি না। আমি তো শান্তি আনতে চেয়েছি।''
রাজকুমার বলেছেন, ''কিছু মানুষ শান্তি চায় না। তারা গোলমাল চায়। কিন্তু আমি শান্তির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব। কারণ, সেটাই একমাত্র সমাধান।''
রাজকুমার রঞ্জন সিং মেইতেই প্রতিনিধি। কিন্তু গত সপ্তাহে বিক্ষুব্ধ মেইতেইরা তার বাড়ি আক্রমণ করেছিল। মণিপুরের হিংসায় মেইতেই গোষ্ঠীর প্রচুর মানুষের মৃত্যুর প্রতিবাদে তারা এই কাজ করেছিল বলে জানিয়েছিল।
মণিপুরে যে সহিংসতা হচ্ছে, তা মূলত মেইতেইদের সঙ্গে কুকি আদিবাসীদের। মণিপুরে মেইতেইরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারা মূলত উপত্যকায় থাকে। নাগা, কুকি-সহ আদিবাসীরা পাহাড়ে থাকে। কিছুদিন আগে আদালত মেইতেইদের তফশিলি উপজাতির মর্যাদা দেয়ার কথা ঘোষণা করে। তারপর থেকেই মণিপুর উত্তাল ও সহিংস।
গত বুধবার থেকে মণিপুর আবার প্রবলভাবে অশান্ত। বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ হচ্ছে। অন্ততপক্ষে নয়জন মারা গেছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন ১০ জন। গাড়ি, বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গাড়িতে আগুন ধরানো হয়েছে। মেইতেই ও কুকি দুই গোষ্ঠীর মানুষের হাতে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র আছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। সেনা নামানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও সহিংসতা কমছে না।
রাজকুমার রঞ্জন সিংয়ের বক্তব্য, শান্তি কমিটি গঠন করে, আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আর যারা শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছেন. তারা সব অস্ত্র জমা দিয়েছেন কি না তা দেখতে হবে। পরিস্থিতির উপর নজরদারিটা খুব জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
কেন্দ্র ও মণিপুর দুই জায়গাতেই বিজেপি সরকার। ফলে সরকারি স্তরে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকার কথা নয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুর সফর করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী নিয়মিত দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সহিংসতা কমছে না। মানুষ অশান্ত। প্রশ্ন উঠেছে, আর কতদিন এরকম অবস্থায় থাকবে মণিপুর?
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এনডিটিভি, নিউজ১৮)