1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভয় পেয়ে কাশ্মীর ছেড়ে পালাচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা

১৯ অক্টোবর ২০২১

কাশ্মীর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। গত দুই সপ্তাহে জঙ্গিরা পাঁচজন পরিযায়ী শ্রমিককে হত্যা করেছে। তারপরই ভয় পেয়ে কাশ্মীর ছাড়ছেন তারা।

https://p.dw.com/p/41qlf
এই সরকরি স্কুলের দুই শিক্ষককেও মেরেছে সন্ত্রাসীরা। ছবি: Dar Yasin/AP Photo/picture alliance

সোমবার শ্রীনগরের প্রধান রেলস্টেশন ছিল ভিড়ে ভিড়াক্কার। উদ্বিগ্ন মুখে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন প্রচুর মানুষ। তারা পরিযায়ী শ্রমিক। বিহার থেকে শ্রীনগরে আসা জিতেন্দ্রও ছিলেন তাদের মধ্যে। হিন্দুস্তান টাইমসকে জিতেন্দ্র জানিয়েছেন, তিনি দ্রুত কাশ্মীর ছাড়তে চান। পুরনো শ্রীনগরে তিনি আইনক্রিম বিক্রি করতেন।  কিন্তু যেভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের কাশ্মীরে মারা হচ্ছে, তারপর তিনি আর সেখানে থাকার সাহস পাচ্ছেন না। আরো ছয়জনের সঙ্গে তিনি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। সবাই চলে এসেছেন স্টেশনে। প্রথমে ট্রেনে বানিহাল যাবেন। তারপর জম্মু হয়ে বিহার ফিরবেন।

শুধু স্টেশন নয়, বাসস্ট্যান্ড, ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের ছবিটাও একই। কাশ্মীর থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের পালানোর ছবি।  জম্মু যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠতে উঠতে বিহারের পশ্চিম চম্পারণের বাসিন্দা সূরয দেও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, ১৩ বছর ধরে তিনি কাশ্মীরে আসছেন। কাশ্মীরের সর্বত্র গিয়েছেন। কাজ করেছেন। কিন্তু কখনো এমন ভয় পাননি, এরকম ভয়ের পরিবেশ দেখেননি। তিনি বলেছেন, ''কাশ্মীরে আসতাম বেশি টাকা রোজগার করার জন্য। কিন্তু প্রাণের থেকে দামি কিছু নেই বলে, ফিরে যাচ্ছি।''

প্রশাসনের হিসাব, প্রতি বছর কাশ্মীরে তিন থেকে চার লাখ পরিযায়ী শ্রমিক আসেন। শীতের শুরুতে তারা ফিরে যান। আবার কিছু দক্ষ শ্রমিক সারা বছরই কাশ্মীরে থেকে যান। বিহারে একজন শ্রমিক দিনে আড়াইশ টাকা পেলে, কাশ্মীরে পান পাঁচশ টাকা। আর দক্ষ শ্রমিকরা পান ছয় থেকে সাতশ টাকা। উত্তর প্রদেশের আরমান আনসারি, মোহাম্মদ কাফিলরা পেশায় রাজমিস্ত্রি। বাড়ির সদস্যরা তাদের বারবার করে ফোন করে ফিরে যেতে বলছেন। তাই তারাও জম্মু চলে গেলেন। এভাবেই ফিরে যাচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা।

তাছাড়া প্রশাসনও কয়েক হাজার শ্রমিককে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে গেছেন। কুলগামে দুই পরিযায়ী শ্রমিককে হত্যা করে জঙ্গিরা। তারপর সোমবার থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার ঢল নেমেছে।

সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে কাশ্মীর পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘‘আমরা কয়েক হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে নিরপদ জায়গায় রেখেছি। তাঁদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থাও করছি।''

জাহির উল ইসলাম কাশ্মীর এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মালদহ থেকে। তিনি রোববার রাতে পুলিশের কাছ থেকে ফোন পান। রাতেই তাকে থানায় চলে আসতে বলা হয়। হিন্দুস্তান টইমসকে জাহির জানিয়েছেন, ''আমরা গান্দেরবালে ২০ জন চারটি ঘরে থাকতাম। পুলিশ আমাদের সব তথ্য আগে নিয়েছে। তারপর কাছে ডিগনিবালে একটি শিবিরে রেখেছে। এখানে পাঁচশর বেশি পরিযায়ী শ্রমিক আছেন।''

ডিডাব্লিউ উর্দুর সাংবাদিক সালাউদ্দিন কাশ্মীর থেকে সবেমাত্র দিল্লি ফিরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ''কোনো সন্দেহ নেই মানুষের মনে ভয় আছে। সেই সঙ্গে আরেকটা প্রশ্নও মানুষের মনে রয়েছে, কাশ্মীরে এত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কিছুটা দূর দূর পরেই নাকা বা চেকিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। তারপরেও কী করে পরিযায়ী শ্রমিকদের, সাধারণ মানুষকে মেরে পালিয়ে যাচ্ছে হত্যাকারীরা? ঘটনার পর কেন অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না?''

অমিত শাহর বৈঠক

দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তার মন্ত্রকের অফিসারদের সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন। শাহ নির্দেশ দিয়েছেন, কঠোর হাতে কাশ্মীর পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। জঙ্গিরা যাতে মানুষকে ভয় পাওয়াতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

পরিকাঠামো বানাবে দুবাই

কাশ্মীরে পরিকাঠামো বানাবে দুবাই। এজন্য ভারত সরকারের সঙ্গে তাদের সমঝোতাপত্র সই হয়েছে। সংবাদসংস্থা রয়টার্স এই খবর দিয়ে বলেছে, দুবাই কত অর্থ বিনিয়োগ করবে তা জানানো হয়নি। তবে কশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর এই প্রথম বিদেশি বিনিয়োগ এলো।

ভারত জানিয়েছে, কাশ্মীরে ইনডাস্ট্রিয়াল পার্ক, মাল্টি পারপাস টাওয়ার, লজিস্টিকস সেন্টার, মেডিক্যাল কলেজ ও সুপার স্পেশালিটি হসপাতাল করবে দুবাই। বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের দাবি, জম্মু ও কাশ্মীর যে উন্নয়নের পথে চলেছে, তা এখন গোটা বিশ্ব স্বীকার করছে। সে জন্যই বিনিয়োগ আসছে।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, রয়টার্স, হিন্দুস্তান টাইমস)