ভেনেজুয়েলায় ক্ষমতার লড়াই
২৪ জানুয়ারি ২০১৯প্রথমে উগো চাবেস, তারপর নিকোলাস মাদুরো – দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলায় পরপর শাসন করে গেছেন দুই কট্টর বামপন্থি নেতা৷ চাবেসের মৃত্যুর পর ২০১৩ সাল থেকে সমাজতান্ত্রিক কাঠামোর আওতায় দেশ শাসন করছেন মাদুরো৷ সদ্য সমাপ্ত বিতর্কিত নির্বাচনে জয়লাভ করে ১০ই জানুয়ারি তিনি আবার ক্ষমতায় এসেছেন৷ সেই নির্বাচনে বিরোধীদের কার্যত নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছিল৷ তখন থেকেই প্রতিবাদ, বিক্ষোভ চলে আসছে৷ বুধবারও হাজার হাজার মানুষ রাজধানী কারাকাসে বিক্ষোভ দেখিয়েছে৷ পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষও হয়েছে৷
এবার তরুণ বিরোধী নেতা ও সংসদের স্পিকার হুয়ান গুয়াইদো নিজেকে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করলেন৷ এক জনসভায় তিনি মাদুরোর বিরুদ্ধে ক্ষমতা দখলের অভিযোগ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনেরও ঘোষণা করেন৷ পেট্রোলিয়াম সমৃদ্ধ দেশ হওয়া সত্ত্বেও ভেনেজুয়েলার চরম আর্থিক দুর্দশা ও অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান৷ উল্লেখ্য, ভেনেজুয়েলার সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট পদ খালি হলে ৩০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে৷ সে সময়কালে কংগ্রেস বা সংসদের প্রধান অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করবেন৷
বলা বাহুল্য, মাদুরো এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ৷ প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের বাইরে তাঁর কয়েক হাজার সমর্থকের উদ্দেশ্যে এক ভাষণে তিনি দাবি করেন, বিরোধীরা অ্যামেরিকার মদতে অভ্যুত্থান করার চেষ্টা করছে৷ কিউবা ও মেক্সিকো তাঁর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে৷ মাদুরো অ্যামেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে মার্কিন কূটনীতিকদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশ থেকে বহিষ্কার করার ঘোষণা করেছেন৷ তবে সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মার্কিন কূটনীতিকরা রাজধানী কারাকাস ছাড়েননি৷
এমন অবস্থায় সে দেশ অভূতপূর্ব রাজনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে৷ বিরোধীরা এক সমান্তরাল প্রশাসন গড়ে তোলায় মাদুরোর শাসনযন্ত্রের সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ সুপ্রিম কোর্ট সংসদের সব পদক্ষেপকে বেআইনি ঘোষণা করেছে৷ সামরিক বাহিনী এখনো পর্যন্ত মাদুরোর প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে এসেছে৷ দেশের দক্ষিণে পুয়ের্তো উরদাস শহরে বিক্ষোভকারীরা প্রয়াত নেতা উগো চাবেসের একটি মূর্তি ভেঙে ফেলে৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সমাজতন্ত্রী প্রেসিডেন্ট মাদুরোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের খবর পাওয়া যাচ্ছে৷
গুয়াইদো নিজেকে দেশের শীর্ষ নেতা ঘোষণার পরপরই তাঁর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তিনি ভেনেজুয়েলা থেকে পেট্রোলিয়াম আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞাও চাপাতে পারেন৷ তারপর একে একে ক্যানাডা, দক্ষিণ অ্যামেরিকার অনেক দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও তাঁর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ভেনেজুয়েলার সামরিক বাহিনীর উদ্দেশ্যে মার্কিন নাগরিকসহ সে দেশের সব নাগরিকের কল্যাণের লক্ষ্যে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি আরো বলেন, সে দেশে মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে অ্যামেরিকা যথাযথ পদক্ষেপ নেবে৷
ব্রাসেলসে ইউরোপীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক বলেন, বিরোধী নেতা গুইয়াদোর নেতৃত্বে জাতীয় পরিষদের গণতান্ত্রিক বৈধতা রয়েছে, মাদুরোর ক্ষেত্রে যা বলা চলে না৷ ইইউ সে দেশে মুক্ত ও অবাধ নির্বাচনের ডাক দিয়েছে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)