ভেনিস আর্কিটেকচার বিয়েনালেতে দ্যুতি ছড়াচ্ছে আফ্রিকা
২৮ জুলাই ২০২৩ছয় মাসের এই আন্তর্জাতিক স্থাপত্য প্রদর্শনী সারা বিশ্বের বিশেষজ্ঞ, শিল্পী, অনুরাগী এবং নির্মাতাদের একটি মিলনমেলা৷
তবে এবার কিছুটা ভিন্নতা ছিল৷ যুক্ত হয়েছেন আরো বেশি স্থপতি৷ আর প্রথমবার বলেই, আফ্রিকাও কেড়ে নিয়েছে দৃষ্টি৷ জলবায়ু সংকটের এই সময়ে নির্মাণশৈলী নিয়ে প্রশ্ন তোলেন লেসলি লোকো৷
প্রদর্শনীকে ভবিষ্যতের গবেষণাগার হিসেবে সাজিয়েছেন তিনি, যেখানে আফ্রিকা রয়েছে প্রধান ভূমিকায়৷
স্থাপত্য প্রদর্শনীর প্রধান লেসলি লোকো বলেন, ‘‘আমার কাছে, আফ্রিকাকে সবসময় ভবিষ্যতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত মনে হয়েছে৷ যেকোনো ক্ষেত্রে, এটিকে টেস্টিং গ্রাউন্ড বলা যেতে পারে৷ আমরা একইসঙ্গে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ এবং প্রাচীনতম মহাদেশ৷ আপনি নিশ্চয়ই জানেন, এই গ্রহের সবাই কোনো একটি সময়ে আফ্রিকা থেকে এসেছিলেন৷ সুতরাং, অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ, যা-ই বলুন না কেন, এর সঙ্গে আমাদের বেশ জটিল সম্পর্ক রয়েছে৷''
প্রদর্শনীতে দেখানো হয়, নিজস্ব উপায়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করছে আফ্রিকা৷ যেমন, জোহানেসবার্গের একটি পাঠাগারের মডেল তৈরি করা হয়েছে পোড়া মাটি (রামড ক্লে) দিয়ে৷
ঘানার রাজধানী আকরার জন্য, আঞ্চলিক উপকরণ দিয়ে বীকনের মতো কাঠামোসহ একটি ক্যাথেড্রাল তৈরি করা হয়েছে৷ তাই প্রদর্শনীটি যেন হয়ে উঠেছে রূপান্তরের আয়োজন৷
লেসলি লোকো বলেন, ‘‘মানুষে মানুষে একত্রিত হওয়ার জন্য প্রদর্শনীটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ এবং আমার মনে হয়েছে দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হয়েছেন সব কিছু দেখে৷ চিন্তার ভিন্নতা, যত্নআত্তি, সৌন্দর্য, আশা, লক্ষ্য—সবকিছু তাদের বিস্মিত করেছেন৷''
ইউরোপে বসবাসরত লেসলির জন্য ভেনিস বিরতিস্থল৷ আর বছরের কিছু অংশ আকরাতেও থাকেন৷ ঘানা এবং লন্ডনের মধ্যে নিয়মিত যাওয়া আসা করেন৷ এই দুই ধরনের সংস্কৃতিই তার কাজ এবং চিন্তাভাবনাকে বেশ ভালোভাবে প্রাভাবিত করে৷ নিজেকে নিয়ে আত্মম্ভরি না থাকলেও, তিনি অনুপ্রেরণার উৎস৷
২০২০ সালে একজন সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আফ্রিকান ফিউচার্স ইনস্টিটিউট গঠনে যুক্ত ছিলেন তিনি৷ এখন প্রতিষ্ঠানটিতে তিনি একজন শিক্ষক এবং গবেষক৷ একজন প্রগতিশীল মানুষ হিসেবে, নিজের জীবনটাকে তিনি উৎসর্গ করেছেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য, বিশেষ করে যারা তার গড়া প্রতিষ্ঠানে শিল্প ও প্রতিভা বিকাশে চর্চা করছেন৷
লেসলি লোকো বলেন, ‘‘যদিও এটির সদর দপ্তর ঘানায়, কিন্তু আমরা চাই এটিকে ছড়িয়ে দিতে, পুরো মহাদেশজুড়ে এই ইনস্টিটিউট থাকবে৷ সমাজের জন্য বাস্তবসম্মত স্থাপত্য শৈলী নির্মাণে আগ্রহী আমি৷ এমন জনবলকে প্রশিক্ষণ দিতে চাই, যারা সমাজ, সংস্কৃতি এবং পরিবেশ সব কিছু নিয়ে সুন্দরভাবে চিন্তা করতে পারেন৷''
তার ইনস্টিটিউটটি আগামীর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করছে, লেসলি লোকোও সেটাই করছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্থাপত্য প্রদর্শনীতে৷
আফ্রিকান দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিহাসকে তুলে ধরা, ভবন তৈরির নতুন পদ্ধতি নিয়ে ভাবনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা স্থপতিদের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব৷ কিন্তু এই প্রদর্শনীকে সাধারণ মানুষ কতোটা গ্রহণ করেছেন?
সাউথ আফ্রিকান আর্কিটেকচারাল শুটিং স্টার সুমাইয়া ভ্যালি বলেন, ‘‘এই প্রদর্শনী অনেকগুলো দশকের কাজকে একত্রিত করে, উৎসবমুখরতার মধ্য দিয়ে আমাদের জানার সুযোগ করে দিচ্ছে, এটা আমার কাছে বিশেষ একটা দিক৷ লেসলি এই কাজটিই করে চলেছেন৷''
স্থপতি ডেভিড অ্যাডজায়ে বলেন, ‘‘তিনি একটি নতুন প্রজন্মকে সমবেত করেছেন, যা আমার জন্যও ছিল অদেখা৷ আমি মনে করি, প্রদর্শনীতে এবারই প্রথম একঝাঁক তারুণ্যকে একসঙ্গে দেখা গেছে৷ এটা বীরত্বের কাজ৷ এবং এটাও একটা কাজ যে বালিতে রেখা টেনে আপনি বলছেন, এখান থেকে আমাদের ভালো কিছু করতে হবে৷''
স্থপতি পরিচয়ে সীমাবদ্ধ নয় লেসলি লোকো, বিশ্বজুড়ে বেস্টসেলিং একজন লেখক হিসেবেও পরিচিত তিনি৷ তার জন্য লেখা এবং নির্মাণ ভিন্ন কোনো সত্তা নয়৷
লেসলি লোকো বলেন, ‘‘আমি যে একজন স্থপতি, এটাই আমাকে লেখক হিসেবে গড়ে তুলেছে৷ এবং প্রদর্শনীর মধ্য দিয়েই দুইটি ভিন্ন জগত একত্রিত হয়েছে৷ ঘানায় বেড়ে উঠেছি আমি৷ আমার কাছে সেই দেশটি ছিল প্রথম জানালা৷ আর গোটা বিশ্বকে আমি চিনেছি বইয়ের মাধ্যমে৷''
আন্দ্রেয়া হ্যুরাক/টিএম