1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নতুন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ?

রাজীব চক্রবর্তী নতুনদিল্লি
২০ জুন ২০১৭

রাষ্ট্রপতি পদে ‌ন্যশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স এর প্রার্থী ঠিক করার পর বিরোধীদের সঙ্গে আর কোনো আলোচনা না করেই তা ঘোষণা দিল বিজেপি৷ হিসেবে বড়সড় কোনো হেরফের না হলে রামনাথ কোবিন্দই হতে চলেছেন ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি৷

https://p.dw.com/p/2f2i0
Indien  - Bihar Minister Nitish Kumar
নীতিশ কুমার ও রামনাথ কোবিন্দছবি: UNI Photo

হ্যাঁ, প্রণব মুখার্জির পর তিনিই হয়ত দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে বসতে চলেছেন৷ 

ভারতের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক গুরুর নামটিই ছিল বহুচর্চিত৷ নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ'রা আচমকা রামনাথ কোবিন্দের নাম চূড়ান্ত করায় সবচেয়ে বেশি ধাক্কা যদি কারও লেগে থাকে, তবে সেটা আদবানি শিবিরের লেগেছে৷ এখন প্রমাণিত যে, মোদী যা চাইবেন, সেটাই বিজেপি‌তে শেষ কথা৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অবশ্য এবারও প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তাঁর চমকের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন৷ তাই বিহারের বর্তমান রাজ্যপাল তথা দলিত নেতা রামনাথ কোবিন্দই ভারতের সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতি৷ তাঁর জন্ম উত্তর প্রদেশের কানপুরে৷ উত্তর প্রদেশ থেকে এর আগে ৯ জন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন৷ এই প্রথম একজন রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন৷

এখনও অবধি অঙ্কের হিসেব অন্তত সেরকমই বলছে৷ তবুও নির্বাচন তো, কাজেই নিশ্চিত হওয়া কঠিন৷ সেজন্যই কি এক ঢিলে অনেকগুলো পাখি মারলেন নরেন্দ্র

মোদী?‌ দলিত নেতার মনোনয়নের বিরুদ্ধে কারও মুখ খোলার সম্ভাবনা নেই৷ তাছাড়া ২০১৯-এর জন্য উত্তর প্রদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ৷

ডাঃ মানস ভুঁইয়া

দলিত কোরি সমাজের প্রতিনিধি কোবিন্দ৷ উত্তর প্রদেশে দলিত সমাজের সংখ্যার বিচারে জাটব ও পাসিদের পরে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এই কোরি সম্প্রদায়৷ সে রাজ্যে উচ্চবর্ণ ও অনগ্রসরেরা সরকারে বা দলে গুরুদায়িত্ব পেয়েছেন৷ এবার রাজ্যের এক দলিত নেতাকে মোদী পাঠাতে চাইছেন রাষ্ট্রপতি ভবনে৷ এখন বিরোধীরা কোনও দলিতকে প্রার্থী না করলে বিরোধী শিবিরের অনেক দলই এনডিএ-র সঙ্গে চলে আসবে

সব জল্পনার বাইরে থাকা কোবিন্দের নাম স্থির করার পরে অবশ্য বিজেপি নেতারা প্রায় সব বিরোধী নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন৷ কিন্তু একতরফা নাম ঘোষণায় ক্ষুব্ধ মমতা ব্যানার্জি, কংগ্রেস, সিপিএমসহ বিরোধীদের অনেকেই৷ এমনকি খুশি নয় বিজেপি‌র অন্দরে আদবানি-‌শিবিরও৷ প্রমাণ হয়ে গেল, আদবানি আর বিজেপির ‘‌পিতামহ'‌ নেই৷ বরং উপদেষ্টামণ্ডলীর একজন সদস্য হয়েই থেকে গেলেন৷

২০১৪ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী যখন সরকার গড়লেন, তারপর থেকেই সব মহলে দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে আদবানির নাম শোনা যাচ্ছিল৷ মুরলী মনোহর যোশির নামও প্রায়ই ভাসত৷ কিন্তু, শেষমেশ তা হলো না৷ হাইপ্রোফাইল নেতাদের পরিবর্তে নাম উঠে এলো লো-প্রোফাইল এক ব্যক্তির৷ বিজেপি‌র একটি সূত্র জানাচ্ছে, রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার প্রবল ইচ্ছে ছিল এই দুই নেতার৷ কিন্তু দিন কয়েক আগেই আদবানি ও যোশিকে নিজেদের সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন মোদী ও শাহ৷ একসময় আদবানি ছিলেন সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী৷ এবার সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতি৷ কোনোবারই শিঁকে ছিঁড়ল না৷ দুই প্রবীণ নেতার মতোই ‘সম্ভাব্য' হয়ে থেকে গেলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও৷ ঘটনাচক্রে, এই তিনজনই ২০১৪'র ভোটের অনেক আগেই মোদীকে দলের মুখ হিসাবে তুলে ধরার সিদ্ধান্তের বিরোধী ছিলেন৷

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারতাঁর রাজ্যের রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে সন্তোষ প্রকাশ করলেও সমর্থনের প্রশ্নে স্পষ্ট ইঙ্গিত না দিয়ে বলেছেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বিরোধীদের বৈঠকে৷

২২ তারিখে ইউপিএ ও সহযোগী দলগুলি প্রার্থী নিয়ে বৈঠকে বসবে৷ ইতিমধ্যে মায়াবতী জানিয়ে দিয়েছেন, দলিত প্রার্থীর প্রতি তাঁদের মনোভাব অবশ্যই সদর্থক, তবে বিরোধীরাও দলিত প্রার্থী দিচ্ছেন কিনা দেখে নিয়ে তাঁরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন৷

আগামী ১৭ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন৷ ২৮ জুনের মধ্যে মনোনয়ন জমা দিতে হবে৷ গণনা ২০ জুলাই৷‌‌‌

‘‘‌বিজেপি একতরফাভাবে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে৷ অন্যান্য বিরোধী দল সংসদীয় গণতন্ত্রের নিয়ম মেনে শাসক দলের কাছে প্রার্থীর নাম জানতে চেয়েছিল৷ সরকার কথা রাখেনি''‌— এমনটাই বলছেন পশ্চিমবঙ্গের বিধায়ক ডা. মানস ভু্ঁইয়া৷ তাঁর মতে, ‘‘‌এমন একজনকে রাষ্ট্রপতি পদে চাওয়া হয়েছিল যিনি হবেন, দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা, ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ভারতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন৷ গতকাল নেদারল্যান্ডস যাওয়ার আগে দুবাইয়ে তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, যা অত্যন্ত সঠিক৷ আমাদের মনে হয়েছে, শাসক দলের সদিচ্ছার অভাব আছে৷ ২২ তারিখ বিরোধীরা বৈঠকে বসছে৷ সেখানে মমতা ব্যানার্জি এবং তাঁর প্রতিনিধি মতামত জানাবেন৷ মনে হচ্ছে, এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা অবশ্যম্ভাবী৷''‌

টানা ১২ বছর রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন রামনাথ কোবিন্দ৷ জন্মেছিলেন উত্তর প্রদেশের কানপুর দেহাতে, ১৯৪৫ সালে৷ বি-কম পাস করে তিনি আইনে স্নাতক হন কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে৷ তৃতীয়বারের চেষ্টায় আইএএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও অ্যালায়েড ক্যাডারে কাজ পাবেন জেনে চাকরি নেন৷ ১৯৭৭ সালে প্রথম যখন কেন্দ্রে অ-কংগ্রেসি সরকার তৈরি হয়, তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন৷ পরে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে কাজ করতেন৷ ১৯৮০ থেকে '১৯৯৩ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের কৌঁসুলি হিসাবে কাজ করেছেন৷

উত্তর প্রদেশে থেকে দু'‌বার রাজ্যসভায় মনোনীত হন (‌১৯৯৪–২০০৬)‌ রামনাথ কোবিন্দ৷‌ তফসিলি জাতি ও উপজাতি কল্যাণ, স্বরাষ্ট্র, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস, সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন, আইন ও ন্যায়বিচারসহ বেশ কয়েকটি সংসদীয় কমিটির সদস্য হয়েছিলেন৷ রাজ্যসভার হাউস কমিটিরও চেয়ারম্যান ছিলেন৷ ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত কোবিন্দ বিজেপি‌র তফসিলি মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন৷ ২০১৫ সালের ৮ আগস্ট তিনি বিহারের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব নেন৷ নিজের গ্রামের বাড়িটি তিনি বারাতঘর (‌যেখানে বিয়ে হয়)‌ হিসেবে দান করে দিয়েছেন৷ প্রচারের আলো থেকে একটু দূরে থাকতে পছন্দ করেন কোবিন্দ৷ বিজেপির কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের মধ্যে তাঁকে ফেলা যায় না৷ বরং তিনি সব সময়েই সক্রিয় সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রশ্নে৷ তাঁকে রাজ্যপাল করায় অসন্তোষ জানিয়েছিলেন নীতিশ কুমার৷ কিন্তু নরম স্বভাবের মানুষটির সঙ্গে পরে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর খুবই ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷

একদিকে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে দলিত নির্যাতনকে ইস্যু করে বিরোধী দলগুলো যেভাবে বিজেপি‌কে চেপে ধরার চেষ্টা করছিল, তাতে কেন্দ্রের শাসক দল হিসেবে অস্বস্তি এড়াতে পারছিল না বিজেপি৷ প্রায় বছর দেড়েক ধরে দলিত ইস্যু প্রধানমন্ত্রীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল৷ বিহারবাসীর কাছে দলিত-‌দরদি বার্তা পৌঁছে দেওয়াও মোদীর অন্যতম লক্ষ্য৷ তাছাড়া, মোদী এমন লোকদেরই বেশি পছন্দ করেন, যাঁরা কম কথা বলেন, বেশি কাজ করেন৷

কোবিন্দকে বেছে নেওয়ার আর একটি কারণ হলো, তিনি স্বয়ংসেবক৷ মৃদুভাষী কোবিন্দ সুশিক্ষিতও বটে৷ কোবিন্দের নামে সংঘও বেজায় খুশি৷ কারণ, কোবিন্দের শিকড় তো সংঘেই৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান